বৃদ্ধার নাটকীয় হত্যাকান্ডের তদন্তের অবসান, গ্রেফতার মূল অভিযুক্ত
আমার কথা, আসানসোল, ২৯ জুলাই:
মাস দুয়েক আগে এক বৃদ্ধার খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ অভিযুক্তদের মধ্যে একজনকে গ্রেফতার করলো। ঘটনাটি ঘটেছিল আসানসোলের দক্ষিণ থানার অন্তর্গত সূর্যসেন নগরে। ধৃতকে জেরা করে পুলিশ আরো দুজনের নাম পেয়েছে, যদিও তারা এখন পলাতক। সন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশ সুত্রে জানা গিয়েছে, সূর্যসেন নগরের বাসিন্দা আলপনা রায়(৬৯) বাড়িতে একাই থাকতেন। তার একমাত্র ছেলে দিল্লিতে কর্মরত। প্রতিদিন তিনি প্রাত:ভ্রমণে বেরোতেন। ২৩ মে সকালে এক প্রতিবেশি তার বাড়িতে ঢুকে দেখেন ঘরে মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন আলপনাদেবী। তা দেখে পুলিশকে খবর দিলে দক্ষিণ থানার পুলিশ গিয়ে দেখে ঘরে জিনিসপত্র ইতস্তত ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে। মৃতদেহ উদ্ধার ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয় পুলিশ। এরপর ছেলেকে খবর দিলে বৃদ্ধার ছেলে বাডি ফিরে খুনের ঘটনার অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত শুরু করে। কিন্তু ঘটনাস্থল পরীক্ষা করে পুলিশ প্রথমে খুনের উদ্দেশ্য বুঝতে পারছিল না। কিন্তু তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিল। এভাবে প্রায় মাস দুয়েক অতিক্রান্ত হয়ে যায়। এর মধ্যে ওই এলাকার একটি বাড়িতে নৈশপ্রহরীর ব্যবস্থা করে বাড়ির সদস্যরা বাইরে যান। গত শনিবার রাতে ওই ব্যাক্তি যখন বাড়ি পাহারা দিচ্ছিলেন সেই সময় তার উপর আক্রমন চালায় কয়েকজন দুষ্কৃতি। তার মুখ গামছা দিয়ে বাধতে গেলে ওই ব্যাক্তি চিৎকার করে ওঠেন। সেই চিৎকার শুনে পাশের বাড়ির লোকজন টের পেয়ে গেলে অবস্থা বেগতিক বুঝে ওই দুষ্কৃতিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। এদিকে পালানোর সময় দুষ্কৃতিদের মধ্যে একজনের পায়ের চটি আর গামছা ফেলে যায়, আর এখান থেকেই পুলিশের তদন্ত অন্যদিকে মোড় নেয়। দুটি ঘটনার মধ্যে মিল পায় পুলিশ। দুষ্কৃতির ছেড়ে যাওয়া চটি ধরে পুলিশ খোঁজ খবর করতে গিয়ে ওই এলাকারই বাসিন্দা বিশাল বাউড়িকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশী জেরায় বিশাল স্বীকার করে নেয় বৃদ্ধা আলপনাদেবীর বাডিতে তারাই হানা দেয় আর ওই বৃদ্ধাকে সেই খুন করে। খুনের কারন বলতে গিয়ে বিশাল জানায় সুরজ ও জগগু নামে আরো দুজন সাগরেদের সাথে ২২মে দুপুর ১.৩০ নাগাদ ওই বৃদ্ধার বাড়িতে ঢোকে চুরির উদ্দেশ্যে। জিনিসপত্র হাতিয়ে নিয়ে যখন তারা বেরিয়ে যাচ্ছিল সেই সময় বৃদ্ধা সুরজকে চিনে ফেলে। (প্রসঙ্গত: সুরজ পেশায় প্লাম্বার আর ওই বৃদ্ধার বাড়িতে কাজও করেছিল একবার) ফলে চিনে যাওয়ার কারনে প্রমান লোপাট করতে বিশাল রেঞ্জ দিয়ে ওই বৃদ্ধার মাথায় আঘাত করে। তখনই মৃত্যু হয় আলপনাদেবীর। দুমাসের এই নাটকীয় হত্যাকান্ডের প্রায় অবসান করে ফেলে দক্ষিণ থানার পুলিশ।
এদিকে বিশালকে ২৬ জুলাই যখন পুলিশ ওই এলাকা থেকে গ্রেফতার করে তখন থেকেই এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দেয় বাকি দুই অভিযুক্ত সুরজ আর জগগু। তাদের সন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ।