ওরা এলো প্রথমবার দুর্গাপুরে জাতীয় যোগাসনের আসরে
আমার কথা, দুর্গাপুর, ২৭ ডিসেম্বর:
সংবাদদাতা : প্রণয় রায়
ওরা হরিয়ানা থেকে এসেছে। আমি সিধু কানু ইনডোর স্টেডিয়ামে বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিযোগীদের সঙ্গে কথা বলছিলাম ও ছবি তুলছিলাম। হঠাৎ হরিয়ানা থেকে আসা একদল ছেলেমেয়ে ওদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে বলল আঙ্কেল হম লোগোকো আপ ভুল গ্যায়ে? আমি বললাম ভেরি স্যরি।
ও লিখতে ভুলেই গেছি শুরু হল ৪২ তম জাতীয় যোগাসন চাম্পিয়নশীপ ২০২৩- ২৪। ইন্ডিয়ান যোগা ফেডারেশনের ছত্রছায়ায় পশ্চিম বর্ধমান ডিসট্রিক্ট ফিজিক্যাল কালচার অ্যাসোসিয়েশনের এর পরিচালনায় ২৭ থেকে ২৯ ডিসেম্বর,২০২৩ দুর্গাপুরের সিধু কানু ইনডোর স্টেডিয়ামে ৪২ তম জাতীয় যোগা প্রতিযোগিতায় দেশের একুশটি রাজ্য থেকে প্রায় ছয়শো প্রতিযোগী অংশ নিয়েছে। সিধু কানু ইনডোর স্টেডিয়াম থেকে সিটি সেন্টার বাস স্ট্যান্ড ও সেখান থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত এক বিশাল ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অংশ নেয় বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা প্রতিযোগীগণ, দুর্গাপুরের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা সহ বিভিন্ন যোগা ক্লাবের শিক্ষার্থীরা।
ইনডোর স্টেডিয়াম এর ভেতরে অনুষ্ঠান শুরুর আগে বসে বসে আমার চারপাশের অনেকগুলো রাজ্যের প্রতিযোগী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আলাপ করলাম। জিজ্ঞেস করলাম দুর্গাপুর তোমাদের কেমন লাগছে। ওরা বলল দারুণ। আমরা এই প্রথম বাংলায় এলাম। দিল্লী থেকে আসা সতীন্দ্র মালিক বলেন ওনার বয়স ষাট পেরিয়েছে অনেকদিন। উনি দিল্লি দলের একজন প্রতিযোগী। বললেন যোগা করে উনি সুস্থ আছেন। আত্মবিশ্বাসী ষাটোর্ধ এই প্রতিযোগী জানান ওনার বিভাগে জয়ী হবেনই। ওনার পাশেই বসে ছিলেন দিল্লী দলের সুনীতা। উনি বললেন দুর্গাপুর তার খুব ভালো লাগছে। ওরা চাম্পিয়ন হবার জন্যই এসেছেন। মধ্যপ্রদেশের অল্পবয়সী ছেলেরা বলল তারা প্রতিযোগিতায় নামার জন্য মুখিয়ে আছে। পাশেই ছিল হায়দরাবাদের মেয়েরা। ওরা এক সঙ্গে কলকলিয়ে বলল উই ডু ফিল ভেরি এক্সাইটিং। এরপর আরো রাজ্যের প্রতিযোগীদের সঙ্গে আলাপ হল। সবাই মুখিয়ে আছে চাম্পিয়নশীপে বাজি জেতার জন্য। আমি মনে মনে বললাম তোমরা তো সবাই বাজি জিতে বসেই আছো। তোমাদের এত প্রাণোচ্ছ্বল মন, হাসি, প্রতিযোগিতায় নামার নেশা তোমরা সবাই এমনিতেই ফুল মার্কস পেয়ে গেছো।
আমার পাশেই বসে ছিলেন সমাজকর্মী সুদেব রায়। উনি শিশুর মত হাসি হেসে বললেন তোমরা সবাই বিজয়ী হও। শশীকান্ত পান্ডে, কোচ, ঝাড়খন্ড। ওনাকে কোথা থেকে এসেছেন জিগ্যেস করতেই বিনম্রভাবে বললেন আমি ঝাড়খন্ডের কোচ। কিন্তু আমি কিছু বলবো না বলবে ওরা বলে ডাকলেন ঝাড়খন্ডের পুরো টিম কে। হাসি মুখের ছেলেমেয়েগুলোকে কিছু বলতে বলতেই ওরা সমস্বরে বললো জিতেগা জিতেগা। ঝাড়খন্ড জিতেগা। স্টেডিয়ামে ঢুকছিল ত্রিপুরার প্রতিযোগীরা। আলাপ হল সুস্মিতা দেবনাথ, অর্পিতা দেবদের সঙ্গে। ওদের বললাম ত্রিপুরার তো যোগা, জিমনাস্টিক ইত্যাদি খেলায় ভারত জোড়া নাম। তোমরা তোমাদের ঝুলিতে বাজি জেতার কি মন্ত্র নিয়ে এসেছো? ওরা বললো বলবো কেন। বুঝলাম প্রতিযোগিতার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই এর তাস ওদের আস্তিনে লুকিয়ে রেখেছে। আমি বললাম তোমরা বিজয়ী হও।
৪২ তম জাতীয় যোগা চাম্পিয়নশীপ এর সূচনা হল
জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়িয়ে। এরপর স্টেডিয়ামের ভেতরে প্রথমে সমবেত সূর্য নমস্কার আসন পরিবেশনা ছিল মনোমুগ্ধকর।
আমাদের অবাক করে দিল দিল্লীর ভরত নাট্যম শিল্পী ও যোগা প্রতিযোগী স্বস্তিকা জয়সয়াল এর অসাধারণ ভরত নাট্যম নৃত্য। অসাধারণ নৃত্যশৈলীতে তিনি নিজেকে তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পান্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।
তিনি বলেন দুর্গাপুরের মতো ছোট শহর এত বিশাল মাপের ন্যাশনাল মিটের আয়োজন করে সবার কাছে প্রমান করেছে দুর্গাপুরও পারে এত বড় মিটের আয়োজন করতে।
মিট ডাইরেক্টর সীমা দত্ত চ্যাটার্জি বলেন সবার মিলিত প্রয়াসে আজ এই চাম্পিয়নশীপ আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় যোগাসন প্রতিযোগিতা। সাব জুনিয়র বয়েজ অ্যান্ড গার্লস গ্রুপের প্রতিযোগিতা ছিল প্রথম দিনের শেষ অনুষ্ঠান। ব্রীজভূষণ পুরেহিত অল ইন্ডিয়া যোগা ফেডারেশন এর সভাপতি ব্রীজভূষণ পুরোহিত বলেন রবীন্দ্রনাথ, স্বামী বিবেকানন্দের পদধূলিতে ধন্য বাংলায় আয়েজিত ন্যাশনাল যোগা চাম্পিয়নশীপ এ তিনি আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এ ডি ডি এ র ভাইস চেয়ারম্যান কবি দত্ত।
উদ্বেধনী অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় সাব জুনিয়র বয়েজ ও গার্লস গ্রুপের যোগাসন প্রতিযেগিতা।