সমাজের কল্যানে দুর্ঘটনায় মৃত রাজমিস্ত্রি স্বামীর অঙ্গদানের অঙ্গীকার স্ত্রীর
আমার কথা, পূর্ব বর্ধমান(বুদবুদ), ১৮ জুলাইঃ
পরিবারের মুখে অন্ন জোগাতে গত কয়েকমাস আগে রাজ মিস্ত্রির কাজে যোগ দিতে কোলকাতায় পাড়ি দিয়েছিলো বছর ৩৬-এর সুফল বাউরি।
পরিবারের একমাত্র রোজগেড়ে সুফলের রোজগার করা টাকায় চলতো তার সংসার। বুদবুদের চাকতেঁতুল গ্রাম পঞ্চায়েতের নবগ্রামে তার পরিবারে রয়েছে মা, স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তান।
সব কিছু ঠিক ঠাকই চলছিলো।হটাৎ গত ৭তারিখে ঘটে দুর্ঘটনা। কোলকাতায় বাড়ি নির্মাণের কাজ করার সময় হঠাৎই উপর থেকে নিচে পড়ে যায় সুফল।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয় কোলকাতার এস.এস.কে.এম হাসপাতালে। সেখানে গত ৭তারিখ থেকে ভর্তি থাকার পর শুক্রবার মৃত্যু হয় সুফলের।
সুফলের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা পরিবারে। স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে সুফলের স্ত্রী কাকলি বাউরি কান্নায় ভেঙে পড়লেও তিনি স্থির করেন তার স্বামীর অঙ্গ দান করবেন সমাজের কল্যাণের জন্য। সেই মতোই পরিবারের সকলকে বিষয়টি জানান।
সুফলের মা ও তার প্রতিবেশীরা প্রথমে মেনে না নিলেও কাকলি দেবীর কথায় তারা বিষয়টি বুঝতে পেরে সকলেই রাজি হন। কারণ সুফল বাউরি যে সমাজ এবং যে পরিবার থেকে উঠে আসে সেখানে অঙ্গ দানের বিষয়ে তেমন কারো আগ্রহ নেই।তাই সবাইকে বিষয়টি বোঝাতে কিছুটা হলেও বেগ পেতে হয় সুফলের স্ত্রী কে ।
সকলের মত নিয়েই শুক্রবার কোলকাতায় চোখ,কিডনি,ও ত্বক দান করার পর শনিবার বুদবুদের রণডিহায় সুফলের শেষ কৃত্য সম্পন্ন হয়।
সুফলের অঙ্গ দানের খবর টিভির পর্দায় দেখে গর্বিত সুফলের গ্রামের মানুষ। একই সাথে গর্ব বোধ করছেন তার পরিবার। তবে দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন সুফলের স্ত্রী কাকলি বাউরি। তিনি জানিয়েছেন তার স্বামীর রোজগারেই এতদিন সংসার চলতো।তবে আগামী দিনে কি ভাবে তার সংসার চলবে তা তার জানা নেই।
তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন যাতে তার কিছু একটা ব্যবস্থা হয়। যাতে তিনি কিছু কাজ করে সেই রোজগাড়ে তার দুই কন্যা সন্তানকে মানুষ করতে পারে।
সুফলের খবর টিভিতে দেখে মৃত সুফলের পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন কোলকাতার এক সমাজ সেবী তন্ময় দত্ত। রবিবার কোলকাতা থেকে সুফলের বাড়িতে পৌঁছে তার বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে যান।
তন্ময় বাবু বলেন আজকের দিনে সুফলের পরিবার সমস্ত শিক্ষিত সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে শিক্ষিত সমাজকে বার্তা দিয়েছেন।
কারণ সুফল যে প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে এবং যে পরিবার থেকে উঠে এসে সমাজের উপকারের জন্য একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে সেই সিদ্ধান্ত শহরের শিক্ষিত সমাজের মানুষদের দশবার ভাবতে হয়।
শিক্ষিত সমাজের কাছে সুফল একজন উদাহরণ।
অপরদিকে, চাক তেতুল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অশোক ভট্টাচার্য জানান দলের পক্ষ থেকে সুফলের পরিবারের পাশে তাঁরা দাঁড়াবেন। যতটা সম্ভব সাহায্য তাঁরা করবেন বলেও আশ্বাস দেন।