হেলমেট পরা আগন্তুক কি সিমরনের পরিচিত ছিল? বিয়ে নিয়ে টানাপোড়েনেই কি খুন?
আমার কথা, কাঁকসা, ১১ নভেম্বর:
পানাগড় রেলপাড় সারদা পল্লীতে ধনঞ্জয় বিশ্বকর্মার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় তিনটি মৃতদেহ। তিন জনকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক ধারণা পুলিশের। হেলমেট পরা আগন্তুক আর বাড়ি পোষ্য সারমেয়ের আচরণে রহস্য রয়েছে বলে ধারণা তদন্তকারীদের।
শুক্রবার পানাগড়ে রেলপাড় সারদা পল্লী এলাকার বাসিন্দা ধনঞ্জয় বিশ্বকর্মার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় তার ছোট মেয়ে সিমরন বিশ্বকর্মা (২৩) শাশুড়ি সীতা দেবী (৭০ ) ও সোনু বিশ্বকর্মার (২১) এর মৃতদেহ। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে ছ’দিন আগে ধনঞ্জয় ও তার স্ত্রী প্রতিমা তাদের বড় মেয়ে নিকিতার বাড়ি আসাম যান। সেই সময়ই ঝাড়খন্ড থেকে সারদা পল্লীতে এসেছিলেন ধনঞ্জয় বাবুর শাশুড়ি সীতা দেবী ও শ্যালক সোনু, ছোট মেয়ে সিমরন বাড়িতেই ছিলেন। ধনঞ্জয় বাবুর বাড়ির পাশেই রয়েছে তার ভাই রাজা বিশ্বকর্মার বাড়িও। রাজার স্ত্রী রিংকু বিশ্বকর্মা জানান ঘটনার দিন সকাল ন’টা নাগাদ হেলমেট পড়া এক ব্যক্তি ধনঞ্জয়ের বাড়িতে আসে। সিমরন এসে আঙ্গুল ধরে ওই আগন্তুককে ঘরের ভেতর নিয়ে যায়৷ ঘন্টা দুয়েক পর ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় তিনজনের দেহ। তিনজনকেই শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান। তিনজনের দেহেই আঘাতের কোন চিহ্ন নেই বলে জানায় পুলিশ।
এদিকে গতকাল রাতে রেলপাড়ের সিনেমাহল এলাকার বাসিন্দা আমন তিওয়ারি নামে এক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই আসাম থেকে নিজের বাড়ি ফিরেছেন সিমরনের মা। তিনি জানান, সিমরন বিবাহিতা, তবে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছে। আমনের সাথে সিমরনের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। সিমরনদের বাড়িতে আমনের যাতায়াত ছিল। সিমরনের কাকিমার বয়ান অনুযায়ী যদি ওই হেলমেট পরা ছেলেটিকে সিমরন আঙ্গুল ধরে ঘরের ভেতর নিয়ে যায় তাহলে সেটি আমন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তিনি আরো জানান, আমন সিমরনকে বিয়ে করতে চেয়েছিল, তবে সিমরনের আপত্তি ছিল আমনক বিয়ে করায়। শুধু তাই নয়, মাঝে মাঝেই নানা বিষয়ে আমন ও সিমরনের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হতো। তাহলে কি এই বিয়েতে অমতের কারনেই খুন হতে হল সিমরনকে? সাথে অবশ্য সিমরনের দিদিমা ও মামার খুনের পেছনে কারন নিয়েও তৈরী হয়েছে ধোঁয়াশা।
এদিকে একসাথে তিনজনের রহস্যজনক ভাবে খুনের ঘটনায় প্রতিবেশীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য ও কৌতুহল। তিনজন কেন খুন হল, কে করল খুন ! খুনের কারণই বা কি? তা নিয়ে ঘনীভূত হচ্ছে অনেক প্রশ্ন। হেলমেট পড়া অজ্ঞাত আগন্তুক আর ধনঞ্জয় বাবুর বাড়ির সারমেয় (বিদেশি কুকুর) “বঙ্কু”র আচরণও রয়েছে রহস্য। প্রতিবেশীরা জানান বাড়ির আশপাশে অপরিচিত কাউকে দেখলেই বঙ্কু চিৎকার করত। ঘটনার দিন হেলমেট পড়া আগন্তুককে দেখে বঙ্কু চিৎকার করেনি। তবে কি ওই আগন্তুক বাড়ির পরিচিত কেউ! সেই কারণেই কি বঙ্কু চিৎকার করেনি, বঙ্কু-র স্বভাববিরুদ্ধ আচরণ ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদেরও। কাঁকসা থানার পুলিশ জানায় তদন্ত শুরু হয়েছে। ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে নমুনা। শনিবার তদন্তকারীরা ফের ধনঞ্জয় বাবুর বাড়িতে আসেন। বাড়ির পাশে ঝোপের মধ্যে দুটি হাত গ্লাভস পড়ে থাকতে দেখতে পায় এলাকার বাসিন্দারা। তারা পুলিশকে জানালে সেগুলি পুলিশ সংগ্রহ করে বলে সূত্রের খবর। ওই গ্লাভস জোড়া কি তাহলে খুনের সময় ব্যবহার করেছিল খুনী নাকি পুরোটাই কাকতালীয় তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। গতকালের ঘটনা সম্পর্কে পাড়া প্রতিবেশীদের জিজ্ঞেস করেন তারা। তদন্তে সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানায় পুলিশ ।