চোরাবালিতে তলিয়ে যাচ্ছে প্রশাসনের মুখ
আমার কথা, বিশেষ প্রতিবেদন, ২৩ নভেম্বর:
চোরাবালিতে তলিয়ে গেছে প্রশাসনিক আশ্বাস। পশ্চিম বর্ধমান জেলার পাণ্ডবেশ্বর, কাঁকসা,জামুড়িয়া,বারাবনি ও অন্ডাল ব্লকের বিভিন্ন এলাকা জুড়ে চলছে অবৈধ বালি পাচারের রমরমা কারবার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবৈধ বালি পাচার রোধে বারবার জেলার প্রশাসনিক শীর্ষ কর্তাদের কঠোর হাতে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সর্ষের মধ্যেই যদি ঢুকে থাকে ভূত, তাহলে সে ভূতকে তাড়ায় কোন ওঝা ? পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরের পঞ্চ পাণ্ডব মন্দির লাগোয়া অজয় নদ ও কাঁকসা ব্লকের বনকাটি পঞ্চায়েত এলাকা ফের বেআইনী বালি পাচারের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই বেআইনী কারবারের পুরোটাই এলাকার কয়েকজন তৃণমূল নেতার অঙ্গুলি হেলনে চলছে।
বনকাটি পঞ্চায়েতের অধীন কোটালপুকুর সংলগ্ন অজয় নদ থেকে অবৈধভাবে বালি তুলে তা ট্রাক্টরে করে পাচার হয়ে যাচ্ছে জঙ্গলের পথ ধরে।প্রতিদিন এইভাবে শত শত ওভারলোডেড ট্রাক্টরভর্তি বালি পাচার হয়ে যাচ্ছে প্রকাশ্যে, দিনের আলোয়। বালি পাচার রোধে রাস্তায় লাগানো হাইটবার গুলিকেও
সুনিপুন ভাবে চুরি করে কাঁকসার দেউল পার্ক এলাকা দিয়ে অবাধে চলাচল করছে বালিভার্তি ট্রাক্টর গুলি। কে বা কারা এই বেআইনী অপারেশন চালাচ্ছে, সে
ব্যাপারে অবশ্য কেওই মুখ খুলতে চাননি। এই বালি পাচারের জন্য এলাকারই বেশ কয়েকজন যুবককে সামান্য টাকার বিনিময়ে কাজ করানো হয়। তারাই ট্রাক্টরে বালি ভর্তি করে বিভিন্ন স্পটে পৌঁছে দিচ্ছে। বালি তস্করির মূল স্টিয়ারিং কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির হাতে থাকলেও তারা কখনোই প্রকাশ্যে আসেন না। এমনকি ট্রাক্টর চালকেরাও শত পীড়াপীড়িতেও মূল বালি কারবারিদের নাম প্রকাশ্যে আনতে চাননা। এদিকে জঙ্গলের পথে সারাদিন ধরে ওভার লোডেড ট্রাক্টরগুলি যাতায়াত করতে থাকায় রাস্তাগুলিও চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে চলেছে। একই সঙ্গে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নদী থেকে ক্রমাগত বালি তুলতে থাকায় নদীর স্বাভাবিক গতিপথ পাল্টে যাবার সম্ভাবনাও দেখা দিচ্ছে অজয় ও দামোদর নদে।স্থানীয়দের দাবি কাঁকসার এক স্বঘোষিত তৃণমূল নেতা কাঁকসার সিলামপুর ঘাট থেকে প্রতি রাতে দুই ডাম্পার করে বালি পাচার করে চলেছেন দীর্ঘদিন ধরেই।গোপালপুর এলাকার ওই স্বঘোষিত নেতা পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সেটিং করে এবং যথাযোগ্য স্থানে প্রয়োজন অনুযায়ী পুজো দিয়ে এই কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন বলে গোপালপুর এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায়। ২০২১ সালে কাঁকসার দেওল পার্কের সংরক্ষিত রিজার্ভকে সুরক্ষিত রাখতে একটি ওয়াচ টাওয়ার ও একটি রিসর্ট গড়ে তোলা হয়। সেই নির্মাণ কাজের জন্য সেসময় বিপুল পরিমাণ বালির প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। কিন্তু সেই
নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাবার পরও বেআইনী বালি পাচারের গতিরোধ করা যায়নি। এ ব্যাপারে দুর্গাপুর বনবিভাগের রেঞ্জার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, হাইটবার গুলি কারা চুরি করল এবং কারা এই বালি পাচারের সঙ্গে যুক্ত তা খতিয়ে দেখতে তিনি বিষয়টি ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের আধিকারিকদের গোচরে আনবেন, যাতে খুব শীঘ্রই বন্ধ করে ফেলা যায় বেআইনী বালির কারবার। অন্যদিকে কাঁকসা ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক
রাজীব গোস্বামী বলেন, বেআইনী বালি কারবার বন্ধে ধারাবাহিকভাবেই অভিযান চালানো হচ্ছে, যারা ধরা পড়ছে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। এবারও এই বালি পাচার রোধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। যদিও প্রশাসনিক এই আশ্বাসের উপর ভরসা রাখতে পারছেন না কোন মহলই। কারণ শাসকদলের কেষ্টবিষ্টুরাই যেখানে সরাসরি জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আদৌ কোন পদক্ষেপ প্রশাসন নিতে পারবে কি ? প্রশ্নটা থেকেই যায়। দলের সর্বস্তরের নেতা মন্ত্রীদের প্রতি অন্ধ বিশ্বাসের চরম মূল্য বারেবারেই দিতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অবৈধ বালির কারবারে অবিলম্বে রাশ টানতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে আরো অনেক মূল্যই হয়তো চোকাতে হবে তাঁকে।