পরকীয়া ধরে ফেলায় খুন হতে হল সিমরনকে! গ্রেফতার কাকিমা
আমার কথা, কাঁকসা, ৩ জানুয়ারী:
পানাগড়ের রেল পাড়ের বাসিন্দা ধনঞ্জয় বিশ্বকর্মার মেয়ে সিমরন সহ তিনজনের খুনের ঘটনার যবনিকা পতন হল মঙ্গলবার। সিমরনেরই কাকিমা রিঙ্কি বিশ্বকর্মাকে এই খুনের ঘটনার সাথে যুক্ত থাকার সন্দেহে মঙ্গলবার গ্রেফতার করে কাঁকসা থানার পুলিশ। পুলিশী জেরায় খুনের বিষয়টি স্বীকার না করলেও তদন্তে খুনের সাথে যুক্ত থাকার নানা তথ্য পুলিশের হাতে এসেছে, যার ভিত্তিতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
প্রসঙ্গত: গত নভেম্বর মাসের ১০ তারিখে পানাগড়ের রেলপাড়ে রাজা বিশ্বকর্মা নামের এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে তিনজনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। মৃতরা হলেন সিমরন বিশ্বকর্মা (২৩), সীতা দেবী (৭০), ও সনু বিশ্বকর্মা (২১)। সীতাদেবী ও সোনুর বাড়ি ঝাড়খণ্ডে।
জানা গিয়েছে, রেলপাড়ের বাসিন্দা ধনঞ্জয় বিশ্বকর্মা তার স্ত্রীকে নিয়ে আসামে বড় মেয়ের কাছে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ছোট মেয়ে সিমরন বাড়িতেই ছিলেন। সিমরনের দিদিমা সীতাদেবী ও মামা সোনু তাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন।
সিমরনের কাকিমা রিঙ্কি বিশ্বকর্মা জানিয়েছিলেন ওই দিন তিনি বাড়িতে কাজ করছিলেন। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ মাথায় হেলমেট পরে বাইকে করে এক ব্যাক্তি তাদের বাড়িতে আসে। কিছুক্ষণ পর আবার বেরিয়ে চলে যায়। এদিন দুপুর বারোটা নাগাদ প্রতিবেশীরা সোনুকে বাড়ির উঠোনে বাকিদের ঘরের ভেতরে তাও আলাদা আলাদা ঘরে খাটের উপর মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। অথচ বাড়িতে দুটি সারমেয় থাকা সত্বেও তারা কেন কোনো চিৎকার করলো না? এলাকাবাসীরাও মোটরসাইকেলে করে হেলমেট পড়ে আসা এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেছিলেন। তিন জনকে কে এবং কিভাবে খুন করে তা নিয়ে ধন্ধে পরে যায় পুলিশ। এরপর ফরেন্সসিক দল এসে সিমরনের বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। শুরু হয় খুনের তদন্ত।
পুলিশ সুত্রে জানা গিয়েছে, সিমরনের কাকিমা রিঙ্কির এক পুরুষের সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে যা সিমরন জানতে পেরে যায়। সে কাকিমার গতিবিধির ওপর নজরদারি শুরু করে। পাশাপাশি একাধিক পুরুষের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় তোলা ছবি, ভিডিও সিমরনের হাতে আসে যা খুনের ছয় মাস আগে সে বাড়ির সকলকে দেখিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, রিঙ্কির ঘরে একাধিক পুরুষের যাতায়াত ছিল যা নিয়েও সে আপত্তি করতো। এইসব ঘটনার পর থেকেই সিমরনের ওপর ক্ষোভ বাড়তে শুরু করে রিঙ্কির। আর সেই ক্ষোভ প্রশমিত করতেই রিঙ্কি সিমরনকে খুনের পরিকল্পনা করে। ১০ নভেম্বর ফাঁকা সেই পরিকল্পনার বাস্তব রূপ দেওয়া হয়। সিমরনকে খুনের বিষয়ে সাক্ষী ল্পাট করতে সাবিত্রীদেবি ও সোনুকেও খুন করতে ছাড়ে না খুনিরা। খুনের পর ঘর থেকে সিমরনের দুতি মোবাইল ফোনও উধাও হয়ে যায়। সেই ফোন দুতির টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে পুলিশ। জেরা করা হয় একাধিক ব্যাক্তিকে। জেরা করা হতে থাকে সিমরনের কাকিমাকেও, যেহেতু ঘটনার সময় একমাত্র রিঙ্কিই ছিল একমাত্র ব্যাক্তি যে বাড়িতে উপস্থিত ছিল। পুলিশ জানিয়েছে তাঁকে একাধিকবার জেরা করার সময় কথায় প্রচুর অসঙ্গতি মেলে। এরপরেই পুলিশ নিশ্চিত হয় খুনের সাথে রিঙ্কির যোগ রয়েছে, আর তারপরেই রিঙ্কিকে গতকাল পুলিশ গ্রেফতার করে।
রিঙ্কিকে বুধবার দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাঁকে দশদিনের পুলিশী হেফাজতের নির্দেশ দেন। তবে সিমরন সহ তিনজনকে খুনের ঘটনায় রিঙ্কিকে আর কে কে সাহায্য করেছে, বা ওই হেলমেট পরিহিত বাইক আরোহী কে ছিল তার হদিশ পেতে জেরা চালয়ে যাচ্ছে কাঁকসা থানার পুলিশ।