#শর্তাবলী প্রযোজ্য#
আমার কথা, দুর্গাপুর, ২ এপ্রিল:
সংঘমিত্রা দাশগুপ্ত
ঝুঁকি নেওয়া আমি খুব একটা পছন্দকরি না- আমি কেন, সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের বেশিরভাগই ঝুঁকি নিতে খুব একটা পছন্দ করেন বলে মনে হয় না। ঝুঁকি- মানে যাকে ইংরেজিতে বলে “রিস্ক”; হ্যাঁ, ওই রিস্ক নিতে আমি একদম ভালোবাসি না। সকালে ঘুম থেকে উঠবো, চা খাবো, পেপার পড়বো, বাজারে যাবো, তারপর কোনরকমে ব্রাঞ্চ সেরে অফিস ছুটবো, অফিসের সব ঝক্কি সামলে সন্ধ্যেবেলায় বাড়ি ফিরে টেলিভিশনের সামনে বসে ভীষণ কিছু সিরিয়াল অথবা ভীষণ কিছু ঝগড়া দেখে ডিনার করে ঘুমাতে যাবো – এই এত নিশ্চিত একটা জীবনের মাঝখানে রিস্ক? কভি নেহি । ভেবে দেখুন, এখনো পর্যন্ত বিয়ের পাত্র হিসেবে সরকারি চাকরি করা পাত্র মেয়ের মা-বাবার কাছে বেসরকারী চাকরি করা পাত্রের থেকে বেশি নম্বর পেয়ে যায় – কারণ কি ? ওই যে সরকারি চাকরি মানে নিশ্চিত ভবিষ্যত আর বেসরকারি চাকরিতে “রিস্ক” তো কিছু থেকেই যায়, তাই মাইনে একটু ঊনিশ বিশ হলেও সরকারি পাত্রই জয়ী হয়। মেডিক্লেম, জীবনবিমা এই সব করে আমরা সব রিস্ককে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে একটা নিশ্চিত ভবিষ্যতের প্ল্যানিং করে নিজেরাও নিশ্চিন্ত হয়ে এক একটা দিন সেই একই রুটিন ধরে পার করছি।তবে হ্যাঁ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভীষণ মাপজোপ করে একটু আধটু রিস্ক অনেকেই নিয়ে থাকেন- ওই যে মিউচ্যুয়াল ফান্ড, শেয়ার মার্কেট- এই সব আর কি ; তাও এইটুকু রিস্ক ও নেওয়া ভবিষ্যতে নিশ্চিন্তে থাকার জন্য – না হলে এই এতো নিশ্চিত জীবনে সুখে থাকতে ভূতে কিলোনোর মতো শুধু শুধু ” আ বৈল মুঝে মার” বলে রিস্ক নেওয়া লোকজন এই পৃথিবীতে খুব কমই আছে। শতাংশের হিসাব করলে আমি নিশ্চিত যে তাদের সংখ্যা টেনেটুনে দুই অঙ্ক ছোঁবে। যাকগে, সে যে বা যারা রিস্ক নিচ্ছেন নিন, সেটা সম্পূর্ণ তাঁদের ব্যাপার, আমার খ্যাঁদা নাক সেখানে গলানোর প্রশ্নই ওঠে না।
কিন্ত, সে প্রশ্ন না উঠলেও, একটা প্রশ্ন কিন্ত আমার আছে, আর সেইজন্যই এই এতোক্ষণ গৌরচন্দ্রিকা করলাম ; আর একটু গৌরচন্দ্রিকা করে আমার প্রশ্নে আসছি।
কার্ড গেম জানেন তো ? তাস খেলেননি এরকম খুব কম লোকই পাওয়া যাবে। এখন আবার টেলিভিশনে এই কার্ড গেমের বিজ্ঞাপন দেখা যায় – বিজ্ঞাপন শেষের আগে একদম ঝড়ের গতিতে বলে দেওয়া হয় যে এই গেম ঝুঁকিপূর্ণ, যে যার নিজের রিস্ক বুঝে খেলবেন- সতর্কতা বাণী- #Play #at #your #own #risk#
একে কিন্ত জুয়া ভাববেন না, কারণ আইন অনুযায়ী, Skill (দক্ষতা) ও Strategy ( কৌশল) দিয়ে যে খেলা হয়, তাকে জুয়া বলা যাবে না।আমরা যারা রিস্ক নিতে ভালোবাসি না ,তারা এইসব গেমও খেলি না, কারণ আমাদের একটা মনোবৃত্তি কাজ করে – #Play #Safe
কিন্ত সত্যিই কি তাই?ভেবে বলুন তো ? রোজ কি আমরাও একটা খেলা খেলছি না ? আসলে আমরাও খেলছি, রোজ খেলছি – ভয়ঙ্কর রিস্কি একটা খেলা। এই খেলার শুরু-শেষ কোনটাই আমাদের ইচ্ছেতে হয় না। এই খেলার কোন বয়স নেই- এখানে সবাই শুরু থেকেই প্রাপ্তবয়স্ক।একবার খেলা শুরু হয়ে গেলে ওয়ান ওয়ে ট্রাফিক- কোন এক্সিট নেই; খেলবো না বললে হবে না, খেলতে হবেই। দক্ষতা, কৌশল এই সব যা কিছুই আমরা ব্যবহার করি না কেন, কখন যে কে আমায় ‘মাত’ দিয়ে বেরিয়ে যাবে, প্রব্যাবলিটির হাজারটা অঙ্ক কষলেও তার পূর্বাভাস পাওয়া যাবে না। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে যে এই খেলার নিয়ম কানুন খেলতে খেলতে শিখতে হয় – আবার সবার জন্য যে সব সময় নিয়ম একই হবে, তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। আর প্রতিপক্ষ কে ? সেটা নিয়েও confusion – প্রতিপক্ষ কি সময়, নাকি অন্যরা, অথবা আমি নিজেই? কি অসম্ভব অনিশ্চিত ব্যাপার বলুন তো ? কিন্ত সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার এই মোস্ট আনপ্রেডিক্টেবল অনিশ্চিত একটা খেলা আমরা সবাই জেনে, না জেনে, বুঝে, না বুঝে খেলে যাচ্ছি – আর তাও খুব নিশ্চিন্ত ভাবে। প্রতিপক্ষ কখন আমার সামনে কি চাল দেবে তার বিন্দুমাত্র ধারণা আমাদের কারোরই নেই- কারণ আমি নিজেই জানি না যে আমি এর আগে কি চাল দিয়েছি বা এরপর কি চাল দেবো। এই খেলায় হার-জিতের সংজ্ঞাও যে ঠিক কি, আমরা সত্যিই বুঝে উঠতে পারিনা – কেউ জিতেও বিজিত আর কেউ হেরেও জয়ী…….অনিশ্চিত, অনিশ্চিত, পুরোটাই অনিশ্চিত……….
আমরা জানি যে এই খেলায় শর্তাবলী প্রযোজ্য – তবুও না খেলে উপায় নেই, আমরা রোজ খেলছি- শর্তাবলী প্রযোজ্যর সতর্কতাকে অগ্রাহ্য করে আমরা রোজ খুব নিশ্চিন্তে এই অনিশ্চিত খেলাটা খেলে যাচ্ছি……আউট না হওয়া পর্যন্ত এই ভয়ংকর রিস্কি খেলাটা আমাদের সবাইকে খেলে যেতেই হবে, তাই না ? ডার্টি পিকচার মুভির সেই Dialogue টা মনে আছে – “Entertainment, Entertainment, Entertainment” – আমরাও যে খেলাটা খেলছি, সেখানেও শুধু “Risk, Risk, Risk”……ও, হ্যাঁ, খেলাটার নাম কি বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়ই।