কীর্তির গুগলিতে বোল্ড আউট দিলীপ, দুর্গাপুর তৃণমূলের দখলে
আমার কথা, দুর্গাপুর, ৪ জুনঃ
বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে ঘাস ফুল ফোটালেন তৃণমুল প্রার্থী কীর্তি আজাদ। ১,৩৭,৯৮১ ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির প্রার্থী দিলীপ ঘোষকে পরাজিত করে এই আসনটি পুনরুদ্ধার করলেন তিনি। ১০ মার্চ কলকাতার ব্রিগেডের তৃণমূলের জনগর্জণ সভা থেকে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে বাংলার ৪২টি আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেছিল দল। তার মধ্যে বর্ধমান দুর্গাপুর আসনটির জন্য প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা হয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন সদস্য তথা প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ কীর্তি আজাদের। তারপর থেকেই দুর্গাপুরকে নিজের ঘর বানিয়ে ফেলেছিলেন এই হিন্দিভাষী প্রার্থী। দিন রাত এক করে নিজের কেন্দ্রের কোনা কোনা ঘুরে বেরিয়েছেন তিনি। করেছেন জন-সংযোগ। বিরোধীরা বলেছিলেন বাংলায় বহিরাগতকে মেনে নেবে না মানুষ। হিন্দিভাষা জনসংযোগের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু আত্মবিশ্বাসী কীর্তি বলেছিলেন আমাকে সময় দিন, আমি বাংলা শিখে নেবো।
এরপর বিজেপির প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করা হল, বিজেপির পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ দিলীপ ঘোষের। মেদিনীপুর থেকে সোজা তুলে এনে তাঁকে নামানো হল শিল্পশহর ও কৃষিবলয়ের মাটিতে। দিনের শুরু থেকে চিরাচরিত স্বভাব নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করে এই কেন্দ্রের ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা একদিকে যেমন করতে শুরু করেছিলেন তেমনি প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে প্রতিদ্বন্দ্বী কীর্তি আজাদকে কথার আক্রমণে বিদ্ধ করতে লাগলেন। কিন্তু তাতে কি টলাতে পেরেছিলেন কীর্তি কিংবা এই কেন্দ্রের ভোটারদের। বোধহয় না। নিন্দুকদের অনেকেই বলেছিলেন দিলীপ ঘোষের এই অকথা-কুকথাই কিন্তু তাঁর পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে। আর হলো তাই। একটা নয় দুটো নয় ১,৩৭,৯৮১ ভোটে তৃণমূলের কীর্তি আজাদের কাছে পরাজিত হলেন কখন না হারা(খড়গপুর বিধানসভা ও মেদিনীপুর লোকসভা) বিজেপির ডাকাবুকো নেতা দিলীপ।
গণনার শুরু থেকেই এদিন এগিয়ে ছিলেন কীর্তি আজাদ। প্রতিটা রাউন্ডের শেষে লাফিয়ে লাফিয়ে দিলীপের সাথে কীর্তির ভোটের ব্যবধান বেড়েছে। দশ রাউন্ডের শেষে এক লক্ষ ভোটের ব্যবধান তৈরী করে ফেলেন কীর্তি। এরপর যত রাউন্ড পেরিয়েছে ততই ব্যবধান বাড়িয়ে গেছেন কীর্তি। অথচ এই কেন্দ্রটি নিয়েই সব থেকে উৎকন্ঠায় ছিল তৃণমুল। বিশেষ করে দুর্গাপুর পুর্ব ও পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্র দুটি নিয়ে। কারন ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে চারটিতে ঘাস ফুল ফুটলেও গলসি ও দুর্গাপুরের এই দুটি বিধানসভা কেন্দ্র হাত ছাড়া হয়েছিল শাসকদলের। যার মূল কারন হয়েছিল তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এবারের নির্বাচনে এই দুটি কেন্দ্রকে পাখির চোখ করে মাটি কামড়ে পড়েছিল দল আর সেনাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।তার সাথে শিখ ভোট, মহিলা ভোট ও মুসলিম ভোট কীর্তি আজাদের জয়ের পথকে সুগম করে।
জয়ের পর কীর্তি আজাদ বলেন, “দিদি জানেন কাকে কি দায়িত্ব দিতে হবে। তাঁরা দিদিকে আশীর্বাদ করেছেন, দলকে আশীর্বাদ করেছেন।”