ঈদে ফেরা হল না বাড়ি, বিউটির প্রাণ কেড়ে নিলো কাঞ্চনজঙ্ঘা দুর্ঘটনা
আমার কথা, গুসকরা, ১৮ জুন:
বছর জুন মাসের করমণ্ডল এক্সপ্রেসের স্মৃতি ফিরলো সোমবার সকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনায়। এদিন সকাল পৌনে ৯টা নাগাদ নিউ জলপাইগুড়ি ছাড়ার পর রাঙাপানি স্টেশনের কাছে শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে পিছন থেকে ধাক্কা মারে একটি মালগাড়ি।
দুমড়ে মুছড়ে যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পেছনের দিকে থাকা দুটি সাধারণ শ্রেণির কামরা সহ আরও বেশ কিছু কামরা।
কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন পূর্ব বর্ধমানের গুসকরা শহরের বাসিন্দা এক গৃহবধূ। তাঁর স্বামী শিলিগুড়িতে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। একমাস সেখানেই ছিলেন গুসকরা শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইটাচাঁদা এলাকার বিউটি বেগম শেখ (৪৩) নামে ওই বধূ। সোমবার সকালে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে ট্রেন ধরে গুসকরায় ফিরছিলেন। কিন্তু অভিশপ্ত দুর্ঘটনা কাড়ল তাঁর প্রাণ। দুর্ঘটনার পর জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে স্ত্রীর মৃতদেহ শনাক্ত করেছেন স্বামী হাসমত শেখ। ময়নাতদন্তের পর দেহটি গুসকরায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, গুসকরা শহরের ইটাচাঁদার বাসিন্দা হাসমত শেখের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে বিশাল শেখ কেরলে কাজ করেন। মেয়ে সুইটি খাতুনের একমাস আগে বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বীরভূম জেলায় মেয়ের শ্বশুরবাড়ি। মেয়ের বিয়ের পর বিউটি খাতুন শেখ তাঁর স্বামীর কাছে গিয়েছিলেন। হাসমত শিলিগুড়িতে ঘরভাড়া করে থাকেন। কয়েকদিন সেখানেই ছিলেন তাঁর স্ত্রী।
হাসমত শেখ বলেন, “আমার স্ত্রীকে সকালে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে ছেড়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলাম। ওর হলদিবাড়ি এক্সপ্রেস ট্রেন ধরার কথা ছিল। কিন্তু পরে জানতে পারি ওই ট্রেনটি ছিল না। তাই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে চেপেছিলেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে স্ত্রীর মোবাইলে ফোন করছিলাম। কিন্তু বারবার সুইচ অফ বলছিল। এরপর দুপুর নাগাদ জলপাইগুড়ি হাসপাতালে আসি। স্ত্রীর ছবি দেখাই। তারপর শোয়ানো দেহগুলোর কাছে গিয়ে আমার স্ত্রীর দেহটি দেখতে পাই।”
হাসমত শেখ জানিয়েছেন, এদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে তার জন্য রান্না করে দিয়েছিলেন বিউটি খাতুন। কিন্তু নিজে খাননি। সকালে স্টেশনে এসে স্ত্রীর জন্য ফল ও বিস্কুট কিনে হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন হাসমত। তারপর কাজে চলে যান। হাসমতের আফশোস,” হলদিবাড়ি এক্সপ্রেস ট্রেনটা থাকলে আমার স্ত্রীকে হারাতে হত না।”
সোমবার দুপুর নাগাদ গুসকরার ইটে চাঁদার বাড়িতে মৃত্যু সংবাদ এসে পৌঁছায়।মৃতার মেয়ে সুনয়নী খাতুন বলেন, ” মায়ের সঙ্গে শেষ বার কথা হয়েছিল ফোনে, মা ফোনে বলেছিল শেষের দিকের কামরায় উঠেছে, তারপর আর যোগাযোগ করতে পারিনি। ” পরে খবর পেলাম ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে মায়ের।
এদিন মৃত্যু সংবাদ পৌঁছাতেই গুসকরার বাড়িতে পাড়া-প্রতিবেশীরা ভিড় জমান। সোমবার ইদুজ্জোহা আনন্দের পরিবেশ ওই পরিবারে বিষাদে পরিণত হয়। গুসকরা পৌরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জি বলেন, ‘আমরা খবর পওয়ার পর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। মৃতদেহ সৎকারের সব রকম ব্যবস্থা করা হবে। আমরা পরিবারের পাশে আছি।’