তৃণমূলের ব্ল্যাকমেইলের জেরে দুর্গাপুরে গৃহবধূর আত্নহত্যার চেষ্টা
আমার কথা, আসানসোল, ২১ জুন:
পাড়ার উন্নয়ণ চেয়ে দুর্গাপুরের ২৩ নং ওয়ার্ডের নবীনপল্লীর ৪০ জন মেয়ে বউ মিলে তৈরী করেছে একটি সংগঠন। এই সংগঠনের কাজ হল পাড়ায় কারোর বিপদে আপদে পাশে দাঁড়ানো, পাড়ায় কোনো অনৈতিক কাজ হলে রুখে দাঁড়ানো। সেই মতো লোকসভা নির্বাচনের আগে এলাকার ৩৩টি মদের দোকান প্রশাসনের সাহায্যে ভেঙ্গে দিয়েছিলেন ওই ৪০ জন মহিলা মিলে। আর এটাই কাল হল ওই সংগঠনের মূল কান্ডারী রেখার(পরিবর্তিত নাম)। ওই পাড়ার বাসিন্দা, বিল্লি, সুকুমার, বাদল, ভীষ্ম যারা এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত, তাদের কোপে পড়লেন তিনি। কারন ওই তৃণমূল কর্মীরা এলাকার মদের ব্যবসার সাথে যুক্ত বলে অভিযোগ। স্বভাবতই রেখাদের এই পদক্ষেপ যেন সাপের লেজে পা দেওয়ার মতো হয়ে দাঁড়ালো। কিভাবে রেখাকে জব্দ করা যায় তার ফন্দি আঁটলেন ওই কর্মীরা। লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরেই রেখাকে নানাভাবে উত্যক্ত করা শুরু করলেন। রেখার স্বামী মুচিপাড়ার কাছে একটি বেসরকারী কারখানায় ঠিকাদারের কাজ করেন। রেখার অভিযোগ, প্রথমেই তাঁর স্বামীর কাজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এবার সেই কাজ ফিরে পাওয়ার শর্ত হিসেবে তারা রেখাকে ক্ষমা চাইতে বলে সাথে কুপ্রস্তাব দিতে শুরু করে বলে অভিযোগ৷ কিন্তু এতে দমবার পাত্রী নন রেখা। তিনি এই বিষয়ে ওয়ার্ডের প্রাক্তন পুরপিতা দেবব্রত সাঁইয়ের দ্বারস্থ হন। তিনি বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিলেও কোনো কাজ তো হয়নি বরং উলটে অভিযুক্তরা ক্রমাগত রেখার উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। অভিযুক্তদের কুপ্রস্তাবের কাছে বশ্যতা স্বীকার না করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন রিঙ্কু। শুক্রবার নিজের ঘরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে৷ এলাকাবাসীরা তাকে উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে।
এলাকার বাসিন্দা তথা রেখার বান্ধবী অপর্ণা বাউড়ি বলেন, “ভোটের সময় আমরা তৃণমূলের হয়ে অনেক কাজ করেছি, অনেক খেটেছি। কিন্তু ওরা বলছে ওরা এলাকায় মদের কারবার করবে আর তাতে বাধা না দিয়ে ওদের সাথেই মদের কারবার চালাতে হবে। রেখা, আমরা এতে রাজি হইনি। তাই ওরা রেখাকে কুপ্রস্তাব দেয়।”
রিঙ্কুর মামা, বিজু দত্তের অভিযোগ “আমার ভাগ্নীকে ওই তৃণমূল কর্মীরা কুপ্রস্তাব দেয়। আমার ভাগ্নী পাড়ার উন্নতির জন্য অনেক কাজ করতো। সেটা এরা ভাল মতো নিতে পারছিল না। আমার ভাগ্নী এ বিষয়ে প্রাক্তন পুরপিতার দ্বারস্থ হলে তিনি, বলেন সামনেই পুরসভার ভোট রয়েছে। এ বিষয়ে আমি এখন ওদের ঘাঁটাতে পারবো না”। বিজুবাবুর আরো অভিযোগ, অভিযুক্ত ওই তৃণমূল কর্মীরা দেবব্রত সাঁইকে দিয়ে রেখাকে বার বার ক্ষমা চাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে দেবব্রত সাঁই বলেন, “আমি শুনেছিলাম একটা ঝামেলা হয়েছে। আমি সেটা মীমাংসা করার জন্য দুপক্ষকেই ডেকে ছিলাম। কিন্তু এক পক্ষ এলেও অপর পক্ষ আসেনি। কিন্তু বিষয়টা এতটা বাড়াবাড়ির জায়গায় চলে যাবে আমি বুঝিনি সেটা।
এই ঘটনার নিন্দা করে দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, ” এটা এখন বাংলার সংস্কৃতি হয়ে দাঁঁড়িয়েছে। খুন, ধর্ষণ এসবই হচ্ছে তৃণমূলের কাজ। ওই এলাকায় তৃণমূল নেতা সুকুমার মদের কারবার করে যার প্রতিবাদ করেছিল ওই মহিলা। তাকে উলটে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে মহিলা মৃত্যুর পথ বেছে নেন। দুর্গাপুরও এখন সন্দেশখালী হয়ে যাচ্ছে। ওনার যদি কিছু হয়ে যায় তার দায় তৃণমূলকে নিতে হবে আর বিজেপি ছেড়ে কথা বলবে না।