জঙ্গি সংগঠন “শাহদত”এর হয়ে কিভাবে কাজ করতো হাবীবুল্লা
আমার কথা, কাঁকসা, ২৩ জুনঃ
বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন “আনসার-আল-ইসলাম” এর সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে ধৃত কাঁকসার মীরে পাড়ার বাসিন্দা মহম্মদ হাবীবুল্লাকে রবিবার দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে পেশ করে কাঁকসা থানার পুলিশ।ওই যুবককে শনিবার রাজ্য পুলিশের এস টি এফ এর একটি দল গ্রেফতার করে কাঁকসা থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ধৃতকে রবিবার মহকুমা আদালতে পেশ করে পুলিশ। বিচারক হাবীবুল্লাকে ১৪ দিনের পুলিশী হেফাজতের নির্দেশ দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ধৃত মহম্মদ হাবীবুল্লা বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘শাহদত’ এর সদস্য। এই সংগঠন বাংলাদেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশেও বেশ কিছুদিন ধরে সক্রিয়। এসটিএফ সূত্রে খবর, সম্প্রতি ‘শাহদত’ নামে এক নতুন জঙ্গি গোষ্ঠী গজিয়ে উঠেছে। বাংলাদেশেও এই জঙ্গি গোষ্ঠী বেশ সক্রিয়। সেই গোষ্ঠীর সঙ্গেই মহম্মদ হাবীবুল্লাহর যোগ রয়েছে বলে খবর।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ জঙ্গি সংগঠনের প্রাক্তন শীর্ষ নেতাই এই ‘শাহাদাত’-এর প্রতিষ্ঠাতা। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর জেএমবির রাজ্যের নেটওয়ার্ক প্রকাশ্যে আসার পরেই আদর্শগত কারণে ভাঙন ধরে জেএমবি সংগঠনে। এক অংশ আইসিস মতাদর্শে এগোতে চায়। অন্য অংশ জেএমবির সংগঠনের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে যেভাবে আলকায়দা মতাদর্শে অনুপ্রাণিত ছিল বলে খবর। দ্বিতীয় গোষ্ঠীর শীর্ষ সংগঠক সালাউদ্দিন ওরফে বড় ভাই। সালাউদ্দিন বাংলাদেশে না ফিরে ভারতেই ঘাঁটি করে। সালাউদ্দিন, আলকায়দা পন্থীদের নিয়ে ‘জামাতুল মুজাহিদীন হিন্দ’ নামে সংগঠন তৈরি করে। এই রাজ্য এবং দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সংগঠন বিস্তর লাভ করে। জেএমবির অন্তর্দ্বন্দ্বর জেরে বাংলাদেশে আইসিস এবং আল কায়েদাপন্থী দু’দলের অনেক সদস্য ধরা পড়ে। এরপরেই, বাংলাদেশের আনসার আল ইসলামের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে এগোনো শুরু সালাউদ্দিনের। বাংলাদেশে পর আনসারের কর্মী ধরপাকড়ের পর নতুন সংগঠন ‘শাহদত’ তৈরি হয়।
একটি অ্যাপ এর মাধ্যমে শাহদত সংগঠনটি চালানো হত। সেই অ্যাপ এর মাধ্যমে হাবীবুল্লা তথ্য আদান প্রদান করত। হাবীবুল্লার ল্যাপটপ ও মোবাইল ঘেঁটে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। বেশ কিছুদিন ধরে এই জঙ্গি সংগঠন ভারতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারপর থেকেই এন আই এ ও রাজ্য পুলিশের এস টি এফ নজরে রাখে তাদের গতিবিধির উপর। সেই সূত্র ধরেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে এই ঘটনায় আরও কেউ যুক্ত আছে কিনা তার তদন্ত শুরু করেছে এস টি এফ। শনিবার হাবীবুল্লার বাবা মহম্মদ ইসমাইলকেও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে ভোর রাতে তার বাবাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
জানা গেছে মানকর কলেজের কম্পিউটার সায়েন্স এর ছাত্র বছর কুড়ির হাবীবুল্লা পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের ল্যাপটপ নিয়েই সময় কাটাতো। কিভাবে সে জঙ্গি সংগঠনের সাথে যুক্ত হলো তা নিয়ে হতবাক এলাকার মানুষ। এলাকায় আতঙ্ক থাকায় সকাল থেকেই গোটা এলাকা থমথমে রয়েছে। জানা গেছে বেশ কিছু টেলিগ্রাম গ্রুপের অ্যাডমিন ছিলো সে। সেখানেই বিভিন্ন ছবি ভিডিও সে পোস্ট করতো।তার পাশাপাশি অ্যাপ এর মাধ্যমে সংগঠনের সে কাজ করতো।কারা তার গ্রুপে যুক্ত ছিলো তাদের সন্ধানে নেমেছে এস টি এফ। এলাকা সূত্রে জানা গেছে বাড়ির বাইরে সে সচরাচর বের না হলেও বাড়ির বাইরে বেরোলে সে বন্ধুদের পিছনে মোটা টাকা খরচ করতো। হয়ত বন্ধুদের তার উচ্চমানের জীবনযাপন দেখিয়ে সংগঠন বাড়ানোর কৌশল ছিলো তার। কোথা থেকে সে টাকা পেতো কিভাবে তার কাছে টাকা আসতো তার উৎস খুঁজছে এস টি এফ।
গোয়েন্দা সূত্রে আরও খবর, এরপরেই সালাউদ্দিন ভারত থেকে অডিও বার্তা দেন দলের কর্মীদের। নির্দেশ দেন অবিলম্বে বাকি সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ হওয়ার। তারপরেও দু দিন আগে চট্টগ্রাম থেকে দু জন গ্রেফতার হয়। সেই সূত্র ধরে গ্রেফতার হয়েছে মহম্মদ হাবিবুল্লাহ। আপাতত তাকেই জেরা করে হাবিবুল্লাহকে জেরা করে বড় ভাইয়ের হদিশ করছেন গোয়েন্দারা।