মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ, দখলদার উচ্ছেদে আরো সক্রিয় হতে চলেছে দুর্গাপুর প্রশাসন
আমার কথা, দুর্গাপুর, ২৬ জুনঃ
পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে গত সোমবার নবান্নে পুরসভার প্রধান, মন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট আমলাদের নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সেখানে সমালোচনার মুখে পড়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুটি পুরসভাই। আসানসোলের পাশাপাশি দুর্গাপুর নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। শহরের বিভিন্ন পরিষেবার পাশাপাশি জবরদখল নিয়ে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ নেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই নির্দেশের পরেই সেই রাত থেকেই দুর্গাপুরে দখলদার উচ্ছেদে তৎপরতা শুরু হয়েছে। একদিকে এবিএল মোড় সংলগ্ন জাতীয় সড়কের ধারে যে সমস্ত বেআইনি হোটেলগুলি রমরমিয়ে ব্যবসা ফেঁদে বসে আছে সেই সমস্ত হোটেলগুলিতে পুলিশকে সাথে নিয়ে অভিযান চালানো হয় আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ণ পর্ষদের পক্ষ থেকে। উদ্ধার হয় বিদেশি মদ, গ্রেফতার করা হয় তিনজনকে। এরপর মঙ্গলবার সকালে ডিপিএল টাউনশিপের যে সব কোয়ার্টার্সে বেআইনিভাবে বসবাস করছেন লোকজন, সেই সব কোয়ার্টার্সের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এইদিন দুপুরে আবার এডিডিএ এর পক্ষ থেকে নোটিশ দিয়ে সাথে মাইকিং করে দখলদারদের জায়গা ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ণ পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পরেই শহরকে দখলদার মুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজে নামেন কবি দত্ত। এরপরেই সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পরেই কবি দত্ত বলেন “আমার পক্ষে কাজ করতে সুবিধা হল”। সেই মতো বুধবার দুর্গাপুর নগর নিগমে একটি সাংবাদিক বৈঠক করা হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন দুর্গাপুর পুরসভার কর্তা ব্যাক্তিরা, এডিডিএ এর কর্তারা। সেই বৈঠক থেকে এডিডিএ এর চেয়ারম্যান কবি দত্ত বলেন, “দুর্গাপুরে দিন দিন বেআইনিভাবে দখলদারী বাড়ছে।বেকারত্ব আছে, বেকারত্ব থাকবেও। কিন্তু তাঁর মানে এই নয় যে যেখানে পারছে সেখানে একটা দোকান দিয়ে বসে যাবে। রাস্তাঘাটে চলাফেরা থেকে শুরু করে গাড়ি চালানো সবেতেই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। জনসংখ্যা খুব বেশি বেড়েছে ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শহরের পরিকাঠামো। শহরের পরিবেশ, স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নোংরা হচ্ছে শহর। ফলে সাধারন নাগরিকদের বসবাসের ক্ষেত্রে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। তাই এভাবে জবরদখল মেনে নেওয়া হবে না। তবে সবটাই মানবিকতার সাথে দেখা হবে। আমরা দখলদারদের নোটিশ দেবো, সময় দেবো জায়গা ছেড়ে দেওয়ার।” নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরে গেলে ভালো নাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান কবি দত্ত।
দুর্গাপুর পুরসভার প্রশাসকমন্ডলীর চেয়ারপার্সন অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় জানান, ” শহরকে দখলমুক্ত করতে সাথে শহরের সৌন্দর্যায়ন বাড়াতে দুর্গাপুর নগর নিগম, এডিডিএ, দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কর্তৃপক্ষ, পুলিশ প্রশাসন সকলে মিলে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।”
লোকসভা ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর দেখা গিয়েছে রাজ্যের ১২৬টি পুরসভা ও পুরনগমের মধ্যে বেশির ভাগেই পিছিয়ে রয়েছে তৃণমুল। এর মধ্যে দুর্গাপুর পুরসভার ৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৩টিই হাত ছাড়া হয়েছে শাসকদলের। শহরের এই প্রত্যাখান নিয়ে ভোটের আগে থেকেই আশঙ্কায় ছিলেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই হারের কারন নিয়েই সোমবার নবান্নের সভাঘরে বৈঠকে পুরপ্রধান, আমলাদের, দলের জনপ্রতিনিধিদের তুলোধনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। অসন্তোষ প্রকাশ করেন। শিলিগুড়ি, দুর্গাপুর, হাওড়া, বিধাননগরের মতো বড় পুরনিগমগুলির নামও করেন।
এদিকে দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, “এই দখলদারদের বসিয়েছে কারা? টাকার বিনিময়ে এদের বসিয়েছে তৃণমূল নেতারা। এদের থেকে ভোট কিনেছে। আর যেই ভোট পেরিয়ে গেল অমনি হাত উলটে দিলো এরা। শহর জুড়ে বেআইনি দখলদারদের রমরমা। কত উচ্ছেদ করবে? যদি এই জবরদখল অভিযান চালাতে যায় তাহলে তা বুমেরাং হয়ে যাবে।”