প্রিয় দৃষ্টিহীন শিক্ষক মরণাপন্ন, ব্যায়বহুল চিকিৎসার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় আকুতি পড়ুয়াদের
আমার কথা, কাঁকসা, ১০ জুলাইঃ
ছোট থেকে নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তির উপর ভর করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর জীবনের শেষ লগ্নে বেঁচে থাকার জন্য আজও একাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন পানাগড় রেলওয়ে কলোনি হাই স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক সঞ্জয় কুমার গোস্বামী।
সঞ্জয় কুমার গোস্বামীর শিক্ষক হয়ে ওঠার পিছনে রয়েছে বহু বছরের লড়াই। তাঁর সেই লড়াইয়ের কথা শুনলে আজও সকলে অবাক হয়ে ওঠেন। ৪৫ বছর বয়সী সঞ্জয় কুমার গোস্বামী গত প্রায় ১৯বছর আগে কাঁকসার পানাগড় রেলওয়ে কলোনি হাই স্কুলে ইংরাজির শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। সবাই যেমন সাধারণ ভাবে ছাত্র ছাত্রীদের পড়াতে পারেন, সঞ্জয় বাবু কিন্তু তা পারতেন না।কারণ জন্ম থেকে তিনি চোখে দেখতে পান না। সঞ্জয়বাবু জানান,তার বাবা কর্মসূত্রে কুলটিতে থাকতেন। তাঁর জন্মের পর বাবার সহকর্মীরা সঞ্জয়বাবুর কথা জানতে পেরে তাঁর বাবাকে বলেছিলেন এই ছেলের বেঁচে থেকে কি লাভ। কারোর কথা শোনেন নি সঞ্জয়বাবুর বাবা। তিনি ছেলেকে কলকাতার ব্লাইন্ড স্কুলে ভর্তি করেন। সেখান থেকে মাধ্যমিক পাস করে চলে আসেন আসানসোলে। সেখানে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন ভালোভাবেই। এরপর বি এড করে শিক্ষকতার লক্ষ্য নিয়ে ২০০৫ সালে এস এস সি পাশ করেন তিনি। এর পরেই ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে পানাগড় রেলওয়ে কলোনি হাই স্কুলে তার যোগদান। ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত হতে দেখে গর্বে বুক ভরেছিলো তার বাবার। সেদিন সহকর্মীদের জানিয়েছিলেন তার ছেলে ফেলনা নয়।
ওই দিন থেকে এক ভাবে শিক্ষকতা করছেন পানাগড় রেলওয়ে কলোনি হাই স্কুলে। শুধু ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশোনা সেখানোতেই থেমে থাকেননি তিনি। ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে রীতিমত বিদ্যালয়ে একটা সাংস্কৃতিক পরিবেশ গড়ে তুলেছেন, যার কারণে বিদ্যালয়ের যে কোনো অনুষ্ঠানে নাচ গানের অনুষ্ঠান পরিচালনা করার গুরু দায়িত্ব পড়তো তারই উপর। লেখাপড়া শেখানোর পাশাপাশি প্রতিবন্ধী শিল্পী হিসেবে দুরদর্শনেও নানান সময় গানের অনুষ্ঠান করেন সঞ্জয়বাবু। এখানেই শেষ নয়। চোখে দেখতে না পেলেও বিশেষ সফটওয়্যারের সাহায্যে কম্পিউটারে টাইপ করে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য ইংরেজিতে নোট তৈরি করে ঘরেই তার প্রিন্ট আউট বের করে পরের দিন ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যেও বিলি করেন তিনি।
বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা জানিয়েছে, সঞ্জয় মাস্টার মশাই যেহেতু চোখে দেখতে পান না তাই বিদ্যালয়ের পাশেই বাড়ি হওয়ার জন্য তাকে কোনো না কোনো ছাত্র বা ছাত্রী বাড়ি থেকে নিয়ে আসে আবার দিয়েও আসে। কিংবা তার দিদি এই কাজ টি বেশিরভাগ দিন করেন। তিনি যখন ক্লাসে পড়ান তখন সকল ছাত্র ছাত্রীরা ক্লাসে বাধ্য ছেলে মেয়েদের মত মন দিয়ে পড়াশোনা করে। বোর্ডে লেখার কাজটা কোনো এক পড়ুয়া করে। বাকি সকলের নাম ধরে এক এক করে পড়া ধরেন তিনি।
এ তো গেলো তার জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা। এতদিন তিনি নিজের অদম্য ইচ্ছা শক্তির উপর ভর করে লড়াই চালিয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমানে ওনার লিভার পুরোপুরিভাবে বিকল হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যে তার জমানো ১৪লক্ষ টাকা চিকিৎসা করতে গিয়ে ব্যয় হয়ে গিয়েছে। বাবা নেই, ঘরে মা ও এক দিদি। বাড়িতে রোজগার করার মত একমাত্র ছেলে সঞ্জয়বাবু। চিকিৎসকদের পরামর্শে লিভার প্রতিস্থাপন করতে আনুমানিক ৪০ লক্ষ টাকা খরচ হবে।এই খরচ তিনি জোগাড় করবেন কি ভাবে সেই নিয়েই চিন্তায় পড়েছেন। অন্যদিকে অসুস্থ অবস্থাতেও ছাত্র ছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে তাকে বিদ্যালয়ে ক্লাস করাতে যেতে হয়।এতদিন অন্যের সাহাস্য ছাড়াই বেঁচে থাকার লড়াইয়ে চালিয়েছেন। জীবনের শেষ লগ্নে দাঁড়িয়ে সঞ্জয় বাবু হার মেনে নিলেও তাকে হারতে দিতে চান না তারই বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা ও পড়ুয়ারা। এদিকে সঞ্জয় বাবু কাউকে কিছু বলতে চান না। অন্যদিকে
সঞ্জয়বাবুর কথা জানতে পেরে তাকে সুস্থ করতে ও তার চিকিৎসার খরচ জোগাতে তার বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার শুরু করে দিয়েছেন সকলে। সেখানে তার ঠিকানা ও তার একাউন্ট নম্বর দিয়ে অর্থ সাহায্যে উঠে পড়ে লেগেছে সকলে। সকলের কথা একটাই একজন প্রতিভাবান শিক্ষক কে কোনোমতেই তারা হারাতে চান না।