করোনার আতঙ্কের মাঝেও দুর্গাপুরে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে মনুষ্যত্বের নজীরবিহীন দৃষ্টান্ত
আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান, ১৫এপ্রিলঃ
লকডাউনের মাঝেই দোকানের দেওয়াল কেটে ভেতরে ঢুকে স্বর্বস্ব চুরি করে নিয়ে“সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই” আবারও একবার প্রমান হল দুর্গাপুরের একটি নজিরবিহীন ঘটনায়। করোনার আতংক যখন সারা বিশ্বে থাবা বসিয়েছে আর যার ফলে ইদানিং দাহকার্যেও মিলছে না শ্মশানযাত্রী, সেখানে সব কিছুর উর্ধে উঠে ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে একজন হিন্দু ব্যাক্তির মরদেহ দাহ করতে এগিয়ে এলেন এক মুসলিম যুবক।
দুর্গাপুরের রবীন্দ্রপল্লীর এ ব্লকের বাসিন্দা হিমাদ্রি দাস রক্তে শর্করার(ডায়াবিটিস) সমস্যাজনিত রোগে ভুগছিলেন। সোমবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। হিমাদ্রিবাবুর পরিবার রয়েছেন তাঁর স্ত্রী ও এক ছেলে। একেই রাতের বেলা তাঁর উপর করোনার আতঙ্ক। স্বভাবতই হিমাদ্রিবাবুর মরদেহ সৎকারের জন্য কেউই এগিয়ে এলেন না। না পাড়া প্রতিবেশী না আত্মীয় স্বজন। এহেন অবস্থায় খবর পাওয়া মাত্রই জাতি, ধর্ম কিংবা করোনা আতঙ্ক সব কিছুর উর্ধে উঠে রায়ডাঙ্গার বাসিন্দা গুড্ডু খান নামে এক মুসলিম যুবক যার সাথে হিমাদ্রিবাবুর দূর দুরান্তে কোনো সম্পর্ক ছিল না, শুধুমাত্র মনুষ্যত্বের তাগিদে তিনি ছুটে গেলেন হিমাদ্রিবাবুর বাড়িতে। গুড্ডুর এহেন পদক্ষেপে তখন এলাকার কিছু মানুষ চক্ষুলজ্জার খাতিরে এগিয়ে এলেন হিমাদ্রিবাবুর শ্মশানযাত্রায় সাহায্য করতে।
যতদিন যাচ্ছে মানুষের মধ্যে করোনার আতঙ্ক বসছে জাঁকিয়ে। যার ফলে কারুর মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটলেও সেই ব্যাক্তির প্রতিবেশী কিংবা আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে অনেকেই সেই মানুষটির সৎকারের ব্যাপারে পিছিয়ে যাচ্ছেন কিংবা অনীহা দেখাচ্ছেন। প্রশাসনিক স্তরে নানা ভাবে সাধারন মানুষকে বোঝানোও হচ্ছে যে যথাযথ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিলে করোনার সংক্রমন থেকে বাঁচা সম্ভব কিন্তু তারপরেও মানুষের এহেন বিপদে পাশে দাঁড়ানো লোকের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। এমতবস্থায় গুড্ডু খান সেই সমস্ত ভীত মানুষদের কাছে একটি প্রকৃত মনুষ্যত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।