মেয়ের অকাল মৃত্যুর শোক ভুলতে জমিদার বাড়িতে শুরু হয় দুর্গাপুজো
আমার কথা, অন্ডাল, ৯ অক্টোবর:
বহু যুগ আগে বিলুপ্ত হয়েছে জমিদারি প্রথা। কিন্তু আজও পুরনো ঐতিহ্য ও পরম্পরা মেনে আয়োজন হয় উখড়া গ্রামের জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো। একমাত্র কন্যার অকাল মৃত্যু শোক ভুলতে এই পুজোর সূচনা করেন তৎকালীন জমিদার শম্ভুলাল সিংহ হান্ডা।
খনি অঞ্চলের প্রাচীন গ্রামগুলির মধ্যে অন্যতম হলো অন্ডাল ব্লকের উখরা গ্রাম। এই গ্রামে অন্যান্য বনেদি পরিবার গুলির মত বসবাস করে লাল সিং হাণ্ডে পরিবার। যাদের হাতে এক সময় ছিল উখরা সহ বিভিন্ন এলাকার জমিদারির স্বত্ব। গোপীনাথ জীউ মন্দির সহ একাধিক প্রাচীন স্থাপত্য নির্মিত হয়েছিল এই বংশের বিভিন্ন জমিদারের শাসনকালে। সেইসব প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন অনেক গুলি এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে। বাংলা ১২৪৮ বঙ্গাব্দে উখড়া গ্রামে জমিদার পরিবারের দুর্গা পুজোর সূচনা হয়। সূচনা করেন তৎকালীন জমিদার শম্ভুলাল সিংহ হান্ডে। তিনি ছিলেন ধর্মপ্রাণ মানুষ। জমিদারি শাসনের পাশাপাশি তার ধর্মচর্চার বহু কথা এখনো লোকমুখে শোনা যায়। শম্ভুনাথ বাবুর একমাত্র কন্যা ঘসুরানীর অকাল মৃত্যু হয়। কন্যার অকাল মৃত্যুতে শোক গ্রাস করে তাকে। শোক মুক্ত হতে সে সময় তিনি দীর্ঘ তীর্থযাত্রা করেন। শেষে পারিবারিক কুলগুরুদেব পরামর্শ দেন কন্যা রূপে দেবী দুর্গার পূজোর আয়োজন করার জন্য। গুরুদেবের পরামর্শে বাংলা ১২৪৮ বঙ্গাব্দে দুর্গাপুজোর সূচনা করেন শম্ভু লাল সিংহ হন্ডে। সূচনাকাল থেকে পুজোটি হয় উখরা রথতলা সংলগ্ন চান্দনী বাড়ি নাট মন্দিরে। পুজো হয় সম্পূর্ণ বৈষ্ণব মতে । পশু বা ছাগ বলি এখানে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। মহা অষ্টমীর সন্ধিক্ষণে জমিদার বাড়ির তোপ ধোনির শব্দ শুনে গ্রামের অন্যান্য পুজো মন্ডপে অষ্টমীর সন্ধিপুজোর বলিদান হয়। জমিদার পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি এই পুজোতে শামিল হয় গ্রামের সমস্ত মানুষজন।
জমিদার বাড়ির বর্তমান প্রজন্মের সদস্য অনুরণলাল সিংহ হান্ডে জানান বর্তমানে পরিবারের সদস্যরা কর্মসূত্রে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন জায়গাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তবে পারিবারিক পুজোতে সবাই ফিরে আসে উখড়া গ্রামে। ফলে এই পুজো জমিদার বাড়ির সদস্যদের মিলনমেলার রূপ নেই। বছরভর পুজোর এই চার দিনের অপেক্ষায় থাকে পরিবারের সদস্যরা। অতীতে মন্দিরের নাট শালাতে পুজো চারদিন বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক ও ধার্মিক অনুষ্ঠান এর আয়োজন হতো। এখন সেসব হয় না ঠিকই কিন্তু ঐতিহ্য ও পরম্পরা মেনে আজও জমিদার বাড়ির পুজোর আয়োজন হয়।