বকেয়া ফি’ দিতে পারছেন না টোটোচালক বাবা, তাই পাশ করলেও ছেলের মার্কসিট আটকে রাখার অভিযোগ প্রণবানন্দ স্কুলের বিরুদ্ধে
আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান(দুর্গাপুর), ৩০জুলাইঃ
এক অমানবিকতার সাক্ষী হয়ে রইল শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরের অভিভাবকগন। শিক্ষা ব্যবস্থায় এক নজীরবিহীন পরিস্থিতির শিকার হয়ে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে দাঁরিয়ে রয়েছে দুর্গাপুরের বি জোনের বাসিন্দা এক টোটো চালকের ছেলে ওমনাথ নাগ। বাবার আর্থিক অসহায়তার মাসুল গুনতে হচ্ছে এ বছরের আইসিএসসি বোর্ডের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ওমকারকে। স্কুলের ফি’ দিতে না পারায় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও মার্কশিট না মেলায় ভর্তি হতে পারছে না পরবর্তী ক্লাসে। অপরাধ ওমনাথের বাবা স্কুলের ফি’ জমা দিতে পারেননি বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁর মার্কশিট আটকে রেখে দিয়েছে বলে অভিযোগ।
বি জোনের শোভাপুরের বাসিন্দা বুলু নাগ পেশায় একজন টোটোচালক। তাঁর নিজস্ব কোনো টোটো না থাকায় ভাড়ায় তিনি টোটো চালিয়ে সংসার টানছেন। ভারত সেবাশ্রম সংঘ দ্বারা পরিচালিত প্রণবানন্দ বিদ্যামন্দিরে বুলুবাবুর ছেলে ওমনাথ একদম ছোট থেকে পড়াশুনা করছে। এ বছর সে আইসিএসসি বোর্ডের পরীক্ষায় ৫০০ এর মধ্যে ৪৩২ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। অনেক স্বপ্ন চোখে নিয়ে দিনরাত এক করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করে ছেলে ওমনাথকে বুলুবাবু পড়াচ্ছেন যাতে ছেলে মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাবার এই আর্থিক অনটনের কিছুটাও যদি লাঘব করতে পারে। কিন্তু করোনার গ্রাসে মারাত্মক রকমের আর্থিক অনটনের মধ্যে পড়ে যান বুলুবাবু। লকডাউনের কারনে দীর্ঘদিন টোটো পরিষেবা বন্ধ থাকায় বেশ কয়েক মাসের স্কুল ফি’ তিনি দিতে পারেননি। আর সেই কারনে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও বকেয়া ফি’র কারনে স্কুল কর্তৃপক্ষ ওমনাথের মার্কসিট আটকে রেখে দিয়েছে বলে অভিযোগ বুলুবাবুর। ফলে মার্কসিট না মেলায় পরবর্তী ধাপে অন্য স্কুলে ভর্তিও হতে পারছে না ওমনাথ। অভিযোগ স্কুলের তরফে বলা হয়েছে বকেয়া সাত হাজার দু’শ আশি টাকা না মিটিয়ে দিলে ওমনাথের মার্কশিট দেওয়া যাবে না। স্কুলের তরফে এও বলা হয়েছে যেভাবেই হোক টাকা জোগাড় করে আনা হোক না হলে মার্কশিট দেওয়া হবে না বলে অভিযোগ। ফলে এক অনিশ্চিয়তার মধ্যে প্রতিটা মুহূর্ত কাটছে ওমনাথ আর তাঁর পরিবারের।
ওই স্কুলেরই অপর এক অভিভাবক হীরক দাসগুপ্ত বলেন যে, ভারত সেবাশ্রম সংঘের সম্বন্ধে আমরা সব সময় ভাল কথাই শুনে আসি। তাঁরা সব সময় দুঃস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়ান, তাদের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু আজ তাঁরা যে বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করছেন সেক্ষেত্রে তাদের এহেন ব্যবহারে সেই প্রতিষ্ঠান বদনাম হয়ে যাচ্ছে।