দুর্গাপুরে এবার অভিভাবকদের হাত শক্ত করল রাজনৈতিক দলগুলি, রং ভুলে মৌণ মিছিলে পা মেলালেন দুই বিধয়াক সহ ডান বাম নেতারা
আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান(দুর্গাপুর), ১৪আগস্টঃ
স্কুলের বাড়তি ফি নিয়ে প্রতিবাদে এবার দুর্গাপুরে অভিভাবকদের পাশে এসে দাঁড়ালেন শিল্পাঞ্চলের সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি। বরং বলা ভাল স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের এই লাগাতার আন্দোলন শিল্পাঞ্চলের সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাদের এক ছত্রছায়ায় এনে দাঁড় করালো যা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে বলেই মনে করছেন শিল্পাঞ্চলবাসী।
দুর্গাপুরের বেসরকারী ইংরেজী মাধ্যম স্কুলগুলি পড়ুয়াদের জন্য টিউশন ফি ছাড়াও আনুষঙ্গিক অন্যান্য ফি যেমন কম্পিউটার, ল্যাবরটরি সহ বেশ কিছু বিষয়েও ফি ধার্য করেছে। কিন্তু অভিভাবকদের বক্তব্য যে ল্কদাউনের কারনে স্কুল বন্ধ। পড়াশুনা হচ্ছে অনলাইনে। সেই হিসেব মতো টিউশন ছাড়া অন্যান্য কোনো পরিষেবা এই মুহূর্তে পড়ুয়াদের দিতে হচ্ছে না। শুধু তাই নয় লকডাউনের কারনে অভিভাবকদের অনেকে কাজ হারিয়েছেন আবার অনেকে আর্থিক দুরবস্থায় মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। অথচ এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ওভিভাবকদের সেই সমস্ত বন্ধ পরিষেবার জন্যও ফি জমা দিতে বলা হচ্ছে স্কুলের তরফে। এই নিয়ে কর্তৃপক্ষকে বলা হলে কর্তৃপক্ষ তাদের জায়গায় অনড়।
ইতিমধ্যেই বাড়তি ফি না দেওয়ার জন্য গার্জেন ফোরাম তৈরী করে অভিভাবকরা নানাভাবে আন্দোলন করে চলেছেন। কখনও স্কুলের সামনে বিক্ষোভ, তো কখনও অবস্থান বিক্ষোভ আবার কখনও সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পথেও হেঁটেছেন তাঁরা। অভিভাবকদের অভিযোগ এই বিষয়ে প্রশাসনের তরফে মিলেছে শুধুই মৌখিক আশ্বাস, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আজ তাই অভিভাবকরা ফের নামলেন পথে। তবে আজ তাঁরা অনেকটাই গান্ধী নীতিতে প্রতিবাদ জানালেন। এদিন অভিভাবকরা গান্ধী মোড়ে সার্কাস ময়দান থেকে একটি মৌণ মিছিল করেন যাতে অভিভাবকদের সাথে একই সারিতে হাঁটতে দেখা যায় ডান বাম সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাদের।
এদিনের মিছিলে সামিল হতে দেখা যায় দুর্গাপুর পূর্ব ও পশ্চিম বিধানসভার দুই বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়াল ও সন্তোষ দেবরায়, জাতীয় কংগ্রেসের প্রাক্তন জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী, বিজেপি নেতা লক্ষণ ঘোড়ুই, তৃনমূলের কয়েকজন পুরপিতা ও মেয়র পারিষদদের।
বাম বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় বলেন, “কোভিড ১৯ এর এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে অভিভাবকরা আজ পথে। তাই এখানে কোনো বিশেষ রাজনীতিক দলের ব্যাপার নয় সমস্ত রাজনীতির উর্ধে উঠে, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে আমরা আজ অভিভাবকদের পাশে দাঁড়িয়েছি।”
কংগ্রেস বিধায়ক বিস্বনাথ পাড়িয়াল বলেন, “পেন্ডামিক পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের অনেকেই কাজ হারিয়েছেন। এদিকে স্কুল কর্তৃপক্ষ এই পরিস্থিতিতে ফি বাড়াচ্ছে আর অভিভাবকদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে তা একদমই সমর্থ যোগ্য নয়। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে অভিভাবকদের এই আন্দোলনকে আমরা নৈতিকভাবে সমস্ররথন করছি।”
কংগ্রেসের জেলার প্রাক্তন সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী বলেন, “রাজ্য সরকারের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারী যে নির্দেশ দিয়েছেন সেই নির্দেশ স্থানীয় প্রশাসন মানছে না। তাই আজ আমরা অভিভাবকদের সমস্যার বিষয়টিকে সমর্থন করে এই মিছিলে পা মিলিয়েছি। আমরা যেমন চাইনা কোনো টিচার তাদের বেতন থেকে বঞ্চিত হোক তেমনই স্কুল যে পরিষেবাগুলি দেয়নি তাঁর জন্য অভিভাবকদের থেকে তাঁরা সেই পরিষেবার জন্য ফি চাইতে পারেন না। বিজেপি তৃনমূল আমার রাজনৈতিক শত্রু। কিন্তু অভিভাবকদের এই ফোরাম একটি অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। সমস্ত রাজনৈতিক দল তাদের রং ভুলে এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন তার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
এদিকে বিজেপ নেতা লক্ষণ ঘোড়ুই বলেন, “পাঁচ মাস ধরে লকডাউনের কারনে কত অভিভাবকরা কাজ হারিয়েছেন। তার মধ্যেও অভিভাবকরা তিউশন ফি দিতে রাজি। কিন্তু স্কুল কর্ত্রিপক্ষ তা মানতে নারাজ, তাঁরা আনুষঙ্গিক ফি দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারী নির্দেশ দিলেও তা মানা হচ্ছে না। তাই তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএম সব ভুলে একসাথে আমরা আজ অভিভাবকদের পাশে দাঁড়িয়েছি।”
এদিনের এই মৌণ মিছিল গিয়ে শেষ হয় দুর্গাপুর মহকুমা শাসকের দপ্তরে। সেখানে মহকুমা শাসকের হাতে অভিভাবকরা একটি স্মারকলিপি তুলে দেন।