কয়লার ডিও র বরাতের দখলকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে চলল গুলি, নিহত ১ আহত ২, উত্তেজনা অন্ডালে
আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান(অন্ডাল), ১২নভেম্বরঃ
কয়লার ডিওর বরাতের দখলকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে মৃত্যু হল একজনের, আহত দুজন। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটে অন্ডালের খাস কাজোরা নুনিয়াপাড়া এলাকায় ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাত এগারোটা নাগাদ খাসকাজোরার নুনিয়াপাড়ায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে কয়লার ডিওর বরাতের দখলকে কেন্দ্র করে বচসা বাধে, বচসা হাতাহাতিতে গড়ায়, আচমকাই গোলাগুলি শুরু হয় বলে অভিযোগ। গুলি লেগে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ধরম নুনিয়া (৪২) নামে একজনের। আহত হন পারনা নুনিয়া ,মহেশরাম নামে দুজন। আহতরা বর্তমানে দুর্গাপুরে একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঘটনায় গুলি চালানোর অভিযোগ উঠে বিদ্যুৎ নুনিয়া ও তার গোষ্ঠীর লোক জনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তরা সকলেই পলাতক বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে মৃত ধরম নুনিয়া ও আহতরা সকলেই এলাকার তৃণমূল নেতা তথা পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের সদস্য বিষ্ণুদেব নুনিয়ার ঘনিষ্ঠ। অভিযুক্ত বিদ্যুৎ নুনিয়া অপর গোষ্ঠীর লোক বলে পরিচিত। বছর চারেক আগে অবৈধ ইটভাটার দখলকে কেন্দ্র করে এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বেধে ছিল। ব্যাপক বোমাবাজিতে উত্তপ্ত হয়েছিল গোটা এলাকা। পরবর্তীকালে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সমঝোতাও হয়েছিল বলে স্থানীয়দের দাবি। কিন্তু ইসিএলের কয়লার ডিওর বরাতের দখল কার হাতে থাকবে সেই নিয়ে সম্প্রতি দুই গোষ্ঠীর মধ্যে আবার বিরোধ বাধে, যা চরম আকার নেয় গতকাল রাতে। স্থানীয় নুনিয়াপাড়ায় দুই গোষ্ঠীর লোকেরা জড়ো হয়। প্রথমে বচসা তারপর হাতাহাতি বেধে যায় দুই গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে। আচমকাই বন্দুক বের করে গুলি চালাতে শুরু করে বিদ্যুৎ নুনিয়া। গুলি লেগে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ধরম নুনিয়ার। আহত হন পারনা নুনিয়া ও মহেশরাম। গুলির আওয়াজ শুনে স্থানীয়রা বেরিয়ে এলে বাইকে চড়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় বিদ্যুৎ ও তার সাগরেদ রা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ মৃত ধরম নুনিয়ার মৃতদেহ তুলে নিয়ে যায়। আহতদের ভর্তি করা হয় দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে বেশ কয়েকটি গুলির খোল।
রাতের ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা বিষ্ণুদেব নুনিয়া জানান অভিযুক্ত বিদ্যুৎ নুনিয়া এলাকায় দুষ্কৃতি হিসাবে পরিচিত। তার গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি। অন্যদিকে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের জেলা সভাপতি রুপেশ যাদব বলেন, এই ঘটনায় রাজনীতি বা দলের কোনো সম্পর্ক নেই। যা হয়েছে তা দু’দল দুষ্কৃতীর মধ্যে। এলাকায় কোনরকম অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না বলেও জানান তিনি। তবে এই ঘটনায় শাসকদলের যোগ নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। সিপিএম নেতা তুফান মন্ডল বলেন নিহত আহত এবং অভিযুক্ত সকলেই তৃণমূলের লোক। কয়লার ডিও র বরাত কোন নেতা, কোন গোষ্ঠীর দখলে থাকবে তা নিয়ে এটা তৃণমূল নেতাদের লড়াইয়ের ফল। দুষ্কৃতীদের মদতে এলাকায় তৃণমূল অশান্তি ছড়াচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। যদিও ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। এটা দু দল দুষ্কৃতীর লড়াই , এর সঙ্গে তৃণমূলের কোন যোগ নেই বলে দাবি তাদের। স্থানীয়দের দাবি এটাই প্রথম নয় এর আগেও কয়লার ডিওর বরাতকে কেন্দ্র করে নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের। বেশ কয়েক বছর আগে শংকরপুর খোলামুখ খনির কয়লার ডিওর বরাতের দখলকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বোমাবাজি সংঘর্ষ হয়েছিল। সেই ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল অন্ডাল ও পাণ্ডবেশ্বর তৃণমূলের দুই নেতার। সাম্প্রতিককালে পাণ্ডবেশ্বরের মহাল এলাকায় ডিওর দখলকে ধীরে বেঁধেছিল অশান্তি। মারধোর দলীয় কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ উঠেছিল বিধায়ক ঘনিষ্ঠ এক নেতার বিরুদ্ধে। যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে শাসক দলের পক্ষে।