ধর্ষণের অভিযোগকে আড়াল করছে পুলিশ, প্রতিবাদে দুর্গাপুরে থানা ঘেরাও বিজেপি ও মৃতার পরিবারের
আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান(দুর্গাপুর), ১০জানুয়ারীঃ
দুর্গাপুরে তরুনীর মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে দিনভর রইল উত্তেজনা। ঘটনায় লেগেছে রাজনৈতিক রঙ। সারাদিনে দফায় দফায় থানা ঘেরাও, বিক্ষোভ নিয়ে সরগরম থাকল শহর দুর্গাপুর।
দুর্গাপুরের নিউটাউনশিপ থানার অন্তর্গত কলাবাগান বস্তি এলাকার তরুণীর মৃত্যু অস্বাভাবিক। তাঁকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে তরুণীর পরিবারের তরফে আর অভিযুক্তের বাবা একজন তৃণমূল কর্মী বলে পুলিশ বিষয়টিকে হালকাভাবে নিচ্ছে বলে অভিযোগ তোলা হচ্ছে মৃতার পরিবারের তরফে। অভিযুক্ত যুবক রাকেশ বাউড়ির বিরুদ্ধে পুলিশ শুধুমাত্র খুনের মামলা রুজু করেছে, কিন্তু তাতে কেন ধর্ষণের অভিযোগ নেই এই প্রশ্ন তুলে আজ রবিবার বেলা সাড়ে এগারোটা থেকে নিউটাউনশিপ থানা ঘেরাও করা হয় বিজেপি মহিলা মোর্চার পক্ষ থেকে। থানার সামনে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাদের অভিযোগ অভিযুক্ত রাকেশের বাবা একজন তৃণমূল কর্মী বলেই পুলিশের পক্ষ থেকে ধর্ষণের বিষয়টি চেপে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। অবিলম্বে অভিযুক্তকে কড়া শাস্তি দিতে হবে বলে দাবি করা হয় বিজেপির পক্ষ থেকে। ঘণ্টা খানেক চলে এই বিক্ষোভ প্রদর্শণ।
এরপরে ফের বেলা তিনটে নাগাদ মৃতার পরিবার সহ মৃতার এলাকার একাংশের তরফে ফের থানা ঘেরাও করা হয়। থানা চত্বর বেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিক্ষুব্ধদের সাথে পুলিশের বচসা বাধে বলেও অভিযোগ। বিক্ষুব্ধরা দাবি জানাতে থাকে শুধু খুন নয় সাথে ধর্ষণের অভিযোগও যেন পুলিশ দায়ের করে নেয়। ঘটনায় উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নামানো হয় কমব্যাট ফোর্সও। এরপর পুলিশের তরফে অভিযুক্তের উপযুক্ত শাস্তির আশ্বাস দিলে ঘেরাও তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা। তবে তাঁরা এও হুঁশিয়ারী দিয়ে রাখেন যে পুলিশ যদি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে হালকা মামলা করে তাহলে তাঁরা বিষয়টি ছেড়ে দেবেন না।
স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, কলাবাগান বস্তি এলাকার ওই তরুনী শুক্রবার রাতে পূর্ব পরিচিত রাকেশ বাউড়ির সাথে বাইকে চেপে গ্যামলের মেলায় যায়। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন ওই তরুণী। সেদিনই রাতে এমএএমসি হাসপাতাল সংলগ্ন মাঠ থেকে তরুণীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান ওই তরুণীকে। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে তরুণীর দেহ ময়নাতদন্তও করা হয়। এরপরেই মৃতার পরিবারের তরফে পুলিশের কাছে খুনের লিখিত অভিযোগ জানানো হলেও মৌখিক অভিযোগ জানানো হয় যে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে খুন করেছে রাকেশ। এলাকাবাসীদের একাংশের দাবি তরুণীর পোশাকও অবিন্যস্ত ছিল।
আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি(পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা জানান, “শনিবার সকালেই রাকেশকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে অনুমান করা হচ্ছে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে ওই তরুণীর। কোনো ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির প্রমান মেলেনি। তবে চূড়ান্ত রিপোর্ট পেলেই মৃত্যুর আসল কারন জানা যাবে। আপাতত খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিষয়টির সত্যতা সামনে আনা যায় সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে।” তবে অভিযুক্তের বাবা তৃনণমূল কর্মী বলে পুলিশ ধর্ষণের বিষয়টিকে এড়িয়ে যাচ্ছে এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ দাবি করা হচ্ছে পুলিশের তরফে।
অভিযুক্ত রাকেশ বাউরিকে আজ দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে সাতদিনের পুলিশী হেফাজতের নির্দেশ দেন।