মা বাবাকে সুখী করতে গিয়ে তাদেরই হারিয়ে ফেললেন অদ্বৈত, সাথে খোয়ালেন কষ্টার্জিত স্বর্বস্ব
আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান(বুদবুদ), ২০ফেব্রুয়ারীঃ
২৫ বছর পর নিজের বাড়ি ফিরলেন বছর বিয়াল্লিশের অদ্বৈত বাউরী। বুদবুদের কোটা গ্রামের বাসিন্দা অদ্বৈত বাউরী ২৫ বছর আগে এলাকারই এক মহিলার সাথে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজে কলকাতার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন। কয়েক মাস সেখানে কাজ করার পর পরিবারের সদস্যরা খবর পান অদ্বৈত বাউরী কাজের জায়গা থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছেন। বছরের পর বছর পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় তাঁর খোঁজ চালিয়েছিলেন। কিন্তু পরে পরিবারের সদস্যদের মনে হয়েছে যে অদ্বৈত আর বেঁচে নেই। তাকে মৃত বলেই মনে করত পরিবারের সদস্যরা ও অদ্বৈতের মা-বাবা।
এরপর কেটে যায় ২৫ টা বছর। শুক্রবার হঠাৎই অদ্বৈতকে পানাগড়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। এলাকার কয়েকজন তাকে দেখে চিনতে পারে। আদৌ ওই ব্যক্তি অদ্বৈত কিনা তা নিশ্চিত করতে মোবাইলে ছবি তুলে অদ্বৈতের পরিবারের সদস্যদের পাঠানো হলে, পরিবারের সদস্যরা চিনতে পেরে তাঁকে বাড়ি নিয়ে আসে। বাড়ি ফিরে তাঁর দাদাকে অদ্বৈত জানায় তাকে পাড়ার এক মহিলা রাজমিস্ত্রি জোগাড়ের কাজের জন্য কলকাতায় নিয়ে গেছিল। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তাকে কিছুদিন কোলকাতায় কাজ করানোর পর তাকে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যে তাকে কাজের জন্য নিয়ে যাওয়া হতো। দিনের শেষে পরিশ্রমের পর যে টাকাটি পারিশ্রমিক পেতেন, সেই টাকা তুলে দিতেন এলাকার ওই মহিলার হাতে। তাকে বলা হত মাসের শেষে তাঁর বাবা-মার কাছে তাঁর পরিশ্রমের টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই ভেবেই নিশ্চিন্তে কাজ করতেন অদ্বৈত। কোনভাবেও তাকে বাড়ি আসতেও দেওয়া হতো না।
অবশেষে বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে করতে কয়েকজন রাজমিস্ত্রির সহযোগিতায় ২৫ বছর পর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় অদ্বৈত। নিজের বাড়ি ছেড়ে যাওয়া বছর সতেরোর যুবক বর্তমানে বিয়াল্লিশ বছরের একজন ব্যক্তি। এই পঁচিশ বছরে বদলে গিয়েছে সমস্ত কিছু। ২৫ বছর পর কয়েক হাজার টাকা নিয়ে যখন সে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় রাস্তায় সেই টাকা নানান অছিলায় লুট করে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছে অদ্বৈত। এমনকি পানাগড় স্টেশনে নামার পর নিজের বাড়ির রাস্তা চিনতে না পেরে পানাগড় বাজারের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে থাকে সে। ২৫ বছর পর নিজের ভাইকে পেয়ে খুশি তার দাদা সহ গ্রামের মানুষ। গ্রামের মানুষ আর অদ্বৈত কে চোখের আড়াল করছেন না। সব সময় তাকে নজরে রাখছেন সকলেই। ২৫ বছর পরিশ্রম করিয়ে ভাইয়ের পরিশ্রমের টাকা যে মহিলা লুট করেছেন এবং পরিবারকে মিথ্যা কথা বলে তাকে বাড়ি আসতে দেয়নি। সেই মহিলার উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়ে একজোট হয়েছেন গ্রামের মানুষ।
তবে ২৫ বছর ধরে যে বাবা-মার জন্য পরিশ্রম করে বাবা-মার সুখের জন্য পরিশ্রমের টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করতো অদ্বৈত, বাড়ি ফিরে জানতে পারে ছেলের অপেক্ষা করতে করতে অসুস্থ হয়ে বছর ছয়েক আগেই মারা গিয়েছেন তার বাবা-মা।