ব্যবসায়ীর নাম করে বেনাচিতিতে ব্যাংক ম্যানেজারকে বোকা বানিয়ে লক্ষাধিক টাকার প্রতারনা
আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান(দুর্গাপুর), ১৮মেঃ
একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা ম্যানেজারকে বোকা বানিয়ে এক ব্যবসায়ীর প্রায় এক লক্ষ সত্তর হাজার টাকা হাতিয়ে নিল প্রতারকরা। দুর্গাপুরের এই ঘটনায় ঐ ব্যবসায়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেন।
ঘটনার সূত্রপাত গত ৪ঠা মে, ফোনে দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজারের এক ব্যবসায়ীর পরিচয় দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ব ঐ ব্যাঙ্কের বেনাচিতি শাখার ম্যানেজারকে এইদিন বিকেল চারটে নাগাদ ফোন করে এক ব্যাক্তি বলেন, অসুস্থতাজনিত কারণে টাকা দরকার। একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে ঐ ব্যাক্তি ব্যাঙ্কের শাখা ম্যানেজারকে অতি সত্তর প্রায় বারো লক্ষ টাকার ও কিছু অঙ্কের টাকা ট্রান্সফার করার জন্য বলেন। কিন্তু ব্যাঙ্ক ম্যানেজার তখন বলেন, এত টাকা অ্যাকাউন্টে নেই। ফোনের ওপার থেকে তখন প্রশ্ন আসে কত আছে? উত্তরে শাখা ম্যানেজার খোঁজ খবর নিয়ে বলেন দুই লক্ষের মতো। সাথে সাথে ফোনের ওপার থেকে উত্তর আসে তাড়াতাড়ি এক লক্ষ সত্তর হাজার টাকা পাঠিয়ে দিন। এরপরই সব ঘটনার যবনিকা পড়ে। এবার বেনাচিতি বাজারের ঐ অটো মোবাইল ব্যবসায়ীর অফিসের অ্যকাউন্ট সেকশন হিসেব মেলাতে গিয়ে দেখেন ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা উধাও। সাথে সাথে ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করেন ঐ ব্যাবসায়ী। ততক্ষনে সবটাই শেষ। বুঝতে দেরী হয়নি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে বোকা বানিয়ে এই লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক দল। দুর্গাপুর থানা ও সাইবার থানায় দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজারে ঐ অটো মোবাইল ব্যবসায়ী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ঐ অটো মোবাইল ব্যাবসায়ীর শোরুম ম্যানেজার অনুপ রঞ্জন সরকারের মঙ্গলবার অভিযোগ করেন এই মর্মে যে কোনোরকম কনফার্মেশন না নিয়ে কিভাবে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ স্রেফ ফোনের কথাতে বিশ্বাস করে এতগুলো টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দিল?
এদিকে ওই একই দিনে বেনাচিতি শাখার আরো একটি ব্যাঙ্কে ফাঁদ পেতেছিল ঐ প্রতারক দল, কিন্তু সেই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার সরাসরি ঐ অটো মোবাইল ব্যাবসায়ীকে ফোন করে কনফার্মেশন নেন। এরপর ব্যাপারটি ফেক জানা মাত্রই থানায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
কিন্তু এই ক্ষেত্রে বেনাচিতি বাজারের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ঐ শাখার কর্তৃপক্ষ কিভাবে স্রেফ ফোনে কথোপকথের ওপর ভরসা করে এতগুলো টাকা ট্রান্সফার করে দিল অন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তা নিয়ে উঠেছে বিস্তর প্রশ্ন।
ইতিমধ্যে দুর্গাপুর থানা ও আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের সাইবার থানা অভিযোগ পাওয়ার পর এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তথ্য বলছে শুধু আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের দুর্গাপুর সাইবার শাখায় গত তিন মাসে প্রায় আড়াইশো থেকে তিনশোটির মতো মামলা হয়েছে, আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শহরকেন্দ্রিক এলাকাগুলি থেকে এই প্রতারণার ঘটনার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। দুর্গাপুর সাইবার ক্রাইম শাখা প্রায় বারো লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে, এখন আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের পদস্থ আধিকারিকরা বলছেন,মানুষ যদি একটু সচেতন না হয় তাহলে বারবার মানুষ এই প্রতারকদের ফাঁদে পড়বেন,আর্থিকভাবে সর্বশান্ত হবেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের দুর্গাপুরের বেনাচিতি শাখার তরফে চিফ ম্যানেজার কুলাভি ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে অস্বীকার করেন,ফোনে জানান তদন্ত শুরু হয়েছে পুরো ঘটনার। সূত্রমাফিক জানা যাচ্ছে দিল্লীর কোনো একটি ব্যাঙ্কের শাখায় এই টাকা ট্রান্সফার হয়েছে।