সম্প্রীতির অন্যন্য নজীর, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হিন্দু বালককে সারাজীবন রক্ত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মুসলিম যুবকের
আমার কথা, পূর্ব বর্ধমান(বুদবুদ), ২জুনঃ
সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে বুদবুদের থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হিন্দু পরিবারের কিশোরের পাশে দাঁড়িয়ে রক্তদানের অঙ্গীকার হলেন মুসলিম যুবক।
১০বছর বয়সী পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র অলোক মাঝি(রাজা) থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত।অলোকের পিতা বুদবুদের কৃষ্ণরাম পুরের বাসিন্দা সঞ্জয় মাঝি পেশায় দিন মজুর। কোনো মতে দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার তাদের।
অলোককে বাঁচিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন নিয়মিত রক্ত।বাবা দিনমজুর সঞ্জয় মাজি । পেটের টানে বাইরে বাইরে কাজ করতে বেরোন সকাল হলেই। বেশ কিছুদিন ধরেই সঞ্জয় আর তার স্ত্রী চেষ্টা করছিলেন কিভাবে রক্ত পাওয়া যায়। কারন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত অলোককে এবার রক্ত দেওয়ার সময় হয়ে এসেছে । ঠিক সময়ে রক্ত না পেলে অলোক অসুস্থ হয়ে পড়বে এমনকি মারাও যেতে পারে। চিন্তায় ঘুম উড়ে গিয়েছিল দম্পতির। বাড়ছিল মানসিক যন্ত্রণা। ছেলের মুখের দিকে তাকাতে কষ্ট হচ্ছিল মায়ের। গ্রামের তৃণমূল নেতা তথা পুর্ব বর্ধমান জেলার সহ সভাপতি জাকির হোসেনকে ছেলের অসুস্থতার কথা বলেন সঞ্জয় মাঝি।
রক্তের প্রয়োজনের কথা শুনে তৃণমূল নেতা জাকির হোসেন আশ্বাস দেন দ্রুত ব্যবস্থা করবেন তিনি।
জাকির হোসেন গলসি ২নং ব্লকের বাসিন্দা পারভেজ আহমেদকে রক্তদান করার জন্য আবেদন করেন।থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হিন্দুর ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন মুসলিম ওই যুবক। পারভেজ আহমেদ বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে অলোক কে রক্ত দেন। পারভেজ আহমেদ শেখ গলসির বাসিন্দা। পাশাপাশি তিনিও একজন সক্রিয় তৃণমূল কর্মী।
একজন অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে যেমন খুশি পারভেজ আহমেদ শেখ, তেমনই খুশি অলোক মাঝি ও তার মা বাবা।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই খুশি কত দিন আর থাকবে।আবারও রক্তের দরকার পড়বে। আবারও ছুটতে হবে রক্তের প্রয়োজনে অলোকের বাবা মা কে। তবে অলোকের বাবা মার চিন্তার অবসান ঘটিয়ে পারভেজ আহমেদ শেখ তাদের আশ্বাস দেন যতদিন অলোকের রক্তের প্রয়োজন হবে ততদিন তিনি তাকে নিজের রক্ত দেবেন।
পারভেজ আহমেদের কাছে আশ্বাস পাওয়ার পরই হাসি ফোটে অলোকের ও তার বাবা মায়ের মুখে। পারভেজের পাশে দাঁরিয়ে মাক্সের আড়ালে হাসি দেখা না গেলেও চোখের আনন্দ দেখে বোঝা গেছে তারা কতটা খুশি।
এবার থেকে অলোকের জন্য রক্তের খোঁজে আর হন্যে হয়ে ঘুরতে হবে না তার মা বাবাকে। পারভেজ আহমেদ অলোককে ধারবাহিকভাবে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন । অলোকের মায়ের কথায় “ খুশি আমি। রক্ত খুঁজতে খুব সমস্যা হতো। কিন্তু এবার থেকে পারভেজ দাদা সব দায়িত্ব নিয়েছেন তার ছেলেকে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার”।
পারভেজ আহমেদ বলেন “ আমি রক্তদান করি কারন রক্তই জীবন বাঁচাতে পারে। জাকির হোসেন দা যখন বলেন আমি রক্ত দিয়েছি এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছি অলোককে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আজ থেকে আমার। দেখুন আমি হিন্দু মসুলিম এভাবে দেখি না , একজন বালকের রক্ত চাই তাই ছুটে এসে রক্ত দিয়েছি”।
পুর্ব বর্ধমানের জেলা সহ সভাপতি জাকির হোসেন বলেন “ আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের একটাই শিক্ষা দিয়েছেন পরের জন্য বাঁচো , অপরের মুখে হাসি ফোটাও”।