ক্ষ্যাপাদুর্গার পুজোতে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণে আজও বুক চিরে রক্ত দেন পরিবারের পুরুষেরা
আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান(অন্ডাল), ২৪ সেপ্টেম্বরঃ
খনি অঞ্চলের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক পুজো গুলির মধ্যে অন্যতম হলো উখড়া গ্রামের অস্তল পাড়ার ভট্টাচার্য্য পরিবারের দুর্গাপুজো। এখানে দেবী দুর্গা “ক্ষ্যাপা দুর্গা”- নামে পরিচিত। পুজোটির সাথে জড়িয়ে আছে অলৌকিক শক্তির নানান লোককথা
জানা গিয়েছে, কয়েক দশক আগে তখন বাংলায় রাজার শাসন ছিল। তৎকালীন বর্ধমানের রাজার প্রধান পুরোহিত ছিলেন ভট্টাচার্য পরিবারের অষ্টম প্রজন্ম গঙ্গা নারায়ণ ভট্টাচার্য। কথিত আছে সেই সময় রাজার সাথে কোনো কারণে মনোমালিন্য হওয়ায় গঙ্গা নারায়ণ ভট্টাচার্য এই উখরা গ্রামে চলে আসেন। এখানে শুরু করেন স্থায়ীভাবে বসবাস। ভট্টাচার্য পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম শর্মিষ্ঠা ভট্টাচার্য জানান, তাদের পূর্বপুরুষ গঙ্গানারায়ণ ভট্টাচার্য এখানে আসার পর তিনি মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ পান। স্বপ্নাদেশে একটি গাছের নিচে দুর্গার বিরাজ থাকার কথা গঙ্গারাম জানতে পারেন। আদেশ মতো গঙ্গারাম বাবু সেই গাছতলায় গিয়ে মায়ের দর্শন পান। মা দর্শন দিয়ে গঙ্গারাম বাবুকে বলেন তিনি ক্ষ্যাপা মা রূপে ভট্টাচার্য পরিবারে পূজিত হতে চান। তারপর থেকেই শুরু হয় ক্ষ্যাপা মায়ের পুজো। এই ক্ষ্যাপা মা সম্পর্কে অনেক অলৌকিক কাহিনিও শোনা যায়। কথিত আছে হঠাৎ একদিন এক শাঁখারী ভট্টাচার্য বাবুকে এসে বলেন তার মেয়ে শাঁখা পরেছে, শাঁখার দাম দিতে হবে। অবাক হয়ে ভট্টাচার্য বাবু শাঁখারিকে বলেন তিনি বিয়েই করেননি তার মেয়ে এল কোথা থেকে। তাহলে কে শাখা পরলো? শাঁখারী ভট্টাচার্য মহাশয়কে একটা পুকুরের কাছে নিয়ে গিয়ে দেখান এখানেই তাঁর মেয়ে শাঁখা পরেছে। পণ্ডিত ভট্টাচার্য মহাশয় বুঝতে পারেন এটা নিশ্চয়ই মা দুর্গার ছলনা। তিনি কাতর কণ্ঠে মাকে ডাকতে শুরু করেন। হঠাৎ সেই মুহূর্তে জল থেকে ছোট্ট ছোট্ট দুটো শাঁখা পরা হাত উপরে উঠে আসে। মা প্রমাণ দেন তিনি কন্যা রূপে শাঁখারীর থেকে শাঁখা পরেছেন আর তারপর থেকেই ক্ষ্যাপা মা দুর্গার মাটির প্রতিমায় থাকে দশ’ টি হাতের মধ্যে দুটি হাত বড় , বাকি আটটি হাত ছোট ছোট। এ ছাড়াও আরও এক অলৌকিক কাহিনির কথা এই ভট্টাচার্য পরিবারের পুজোর সাথে জড়িয়ে আছে। কথিত আছে কোনো একসময় ডাকাত দল মায়ের অলংকার চুরি করার উদ্দেশ্যে মন্দিরে আসে। আশ্চর্যের বিষয় ডাকাত দলের প্রত্যেকে অন্ধ অবস্থায় সকালে মন্দির থেকে উদ্ধার হয় । সকলের ধারণা মা দুর্গা ডাকাত দলের লোকেদের শাস্তি দিয়েছে। ডাকাতরা মায়ের কোনো অলংকার নিয়ে যেতে পারেনি। সূচনা কাল থেকে এখনও ভট্টাচার্য্য পরিবারের দুর্গাপুজো জাঁকজমকের সঙ্গে পূজিত হয়। বোধনের দিন থেকেই মায়ের পুজো শুরু হয়ে যায়। সূচনাকালে এখানে নরবলি দেওয়া হতো বলে কথিত আছে। বর্তমানে ছাগ বলি দেওয়া হয়। অষ্টমীর দিন পরিবারের পুরুষরা বুক চিরে রক্ত দেন। এই প্রথা চালু আছে ভট্টাচার্য্য পরিবারের পুজোতে। পরিবারের কনিষ্ঠ প্রজন্ম আর্যবি ভট্টাচার্য জানান ,বাড়ির পুজো ক’ দিন তারা বাড়ি থেকে বেরোতেই চান না। কেননা বাড়ির সকলে এক সাথে যে আনন্দ হয় সেটা বাইরে হবার নয়। কখনও বা বন্ধুদের সাথে একবার বাইরে বেরোলেই মন খারাপ হয় এই বুঝি বাড়িতে কোনো আনন্দ সে মিস করল। তাই ঘরের পুজোয় ঘরেই থাকার যে আনন্দ সেটাতেই তারা খুশি। পুজোর ক’দিন পারিবারিক আনন্দ মেলা’র রূপ নেয় বলে জানান পরিবারের গৃহবধূ শর্মিষ্ঠা ভট্টাচার্য।