অপেক্ষা আর দিন কয়েকের, আসানসোল ও বর্ধমান-দুর্গাপুর আসন দুটি এবার কার দখলে
আমার কথা, রাজীব দত্ত, ৩০ মেঃ
নির্বাচন হয়ে গেছে ১৩ মে, এবার অপেক্ষা ৪ঠা জুনের, যেদিন সারা দেশের সাথে সাথে আসানসোল ও বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্র দুটির প্রার্থীদেরও ভাগ্য নির্ধারিত হবে। প্রশ্ন আসানসোলে এবার কে জিতবে? এই আসনে লড়াইটি ছিল মূলত ত্রিমুখী। বিজেপির সুরেন্দ্র সিং আলুওয়ালিয়া, সিপিআইএম ও কংগ্রেসের জোট প্রার্থী জাহানারা খান এবং তৃণমূলের বিদায়ী সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এই বারের লোকসভার লড়াই। প্রসঙ্গত আসানসোল লোকসভার মধ্যে রয়েছে ৭টি বিধানসভা। যার সব কটিতেই ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে এগিয়ে ছিলেন তখনকার বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়। তিনি তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেনকে ১লাখ ৯৭হাজার ৬৩৭ভোটে পরাজিত করেন। এরপর বাবুল সুপ্রিয় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করায় আসানসোল আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।এবার পরিস্থিতি হয়ে যায় সম্পুর্ন উল্টো। ২০২২ সালের ওই উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালকে ৩ লাখ ৭ হাজার ৭৩ ভোটে পরাজিত করেন। ৭টির মধ্যে ৬টি বিধানসভাতেই এগিয়ে ছিল তৃণমূল। বিজেপি শুধু লিড পায় কুলটি বিধানসভাটিতে ৭৯৩ ভোটে, বাকি ৬টিতেই তারা ছিল পিছিয়ে। এদিকে এইবারের ভোটে জোট প্রার্থী জাহানারা খানকে নিয়ে অনেকেই স্বপ্ন দেখছেন,যে তিনি হয়তো অঘটন ঘটাতে পারেন। কিন্তু এই প্রার্থী লড়াকু ও স্থানীয় হলেও তৃণমূলে চলে যাওয়া বামেদের মুসলিম ভোট আর বিজেপিতে চলে যাওয়া সিপিএমের পুরোনো ভোট এবার কতটা ফিরে আসবে তা নিয়ে ঘোরতর সন্দেহ আছে। রয়েছে বিজেপি প্রার্থী আলুওয়ালিয়ার নিরুদ্দেশ ইতিহাসও। এর আগে দার্জিলিং ও বর্ধমান -দুর্গাপুরের তিনি সাংসদ হয়েছিলেন কিন্তু সাংসদ হওয়ার পর দুই জায়গাতেই মানুষ তাঁকে কাছে পায়নি বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, যা এই কেন্দ্রেও আলুওয়ালিয়া বিরোধী প্রচারে হাতিয়ার করা হয়েছিল। আবার আছে ‘জিতেন্দ্র’ অঙ্ক, যা বিজেপির পক্ষে যাবে না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র তথা পাণ্ডবেশ্বরের প্রাক্তন বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি বিজেপির প্রার্থী ঘোষণার আগে থাকতেই আসানসোল সংলগ্ন বিভিন্ন মন্দিরে পুজো দিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, যা সাধারণত বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা নিজেদের নাম ঘোষণার পর এলাকায় জনসংযোগ বাড়ানোর জন্য করে থাকেন। কিন্তু বিজেপি এরপর প্রার্থী হিসেবে সুরেন্দ্র সিং আলুওয়ালিয়ার নাম ঘোষণা করে। যার ফলে ক্ষুব্ধ জিতেন্দ্র তিওয়ারি ও তাঁর অনুগামীরা কতটা আলুওয়ালিকে ভোটে সাথ দেবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। এছাড়া আমাদের সুত্র মারফত জানা গিয়েছে যে এই মুহূর্তে আসানসোল দক্ষিণ আর কুলটি বিধানসভা বাদ দিয়ে বাকি ৫টি বিধানসভার সবকটিতেই তৃণমূল অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে পাণ্ডবেশ্বরে, যেখানে বিজেপির ফল একসময় যথেষ্ট ভালো ছিল সেখানেও তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে। একই কথা প্রযোজ্য জামুড়িয়া, রানীগঞ্জ নিয়ে। আসানসোল উত্তর ও বারাবণিতেও তৃণমূল এগিয়ে থাকবে বলে জানা গিয়েছে। ফলে এই লোকসভাটি তৃণমূলের পক্ষে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এবার আসা যাক বর্দ্ধমান- দুর্গাপুর আসনটিতে। এই আসনেও লড়াই বিজেপি, তৃণমূল ও জোট প্রার্থীদের মধ্যে। ২০১৯ সালে এই আসনে বিজেপি প্রার্থী এস এস আলুওয়ালিয়া তৃণমূল প্রার্থী মমতাজ সঙ্ঘমিতাকে ২ হাজার ৪৩৯ ভোটে পরাজিত করেছিলেন। এবার বিজেপির হেবিওয়েট প্রার্থী দিলীপ ঘোষ, তৃণমুলের প্রার্থী প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ আর সিপিএম প্রার্থী সুকৃতি ঘোষালের মধ্যে হয়েছে ত্রিমুখী লড়াই। প্রথম থেকেই এই লড়াইএ ফেবারিট ছিলেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ধীরে ধীরে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিতে থাকে তৃণমূল। গত লোকসভা নির্বাচনে এই আসনে বিজেপির জেতার পেছনে যে দুটি কারণ প্রধান ছিল বলে মনে করা হচ্ছে তা হল ‘মোদি’ ফাক্টর আর তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব। এবার শাসক দলের জেলা সভাপতি দলনেত্রীর পরামর্শ কাজে লাগিয়ে এই জায়গা মেরামতিতেই নজর দেন সবার আগে, যাতে দলের সব বিরুদ্ধ গোষ্ঠী এক ছাতার তলায় কাজ করে সেটাই ছিল প্রাথমিক লক্ষ্য। আর সুত্রের খবর অনুযায়ী এই কাজে জেলা সভাপতি পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী অনেকটাই সফল। এছাড়া আরেকটি ব্যাপার এই কেন্দ্রের ক্ষেত্রে ঘটেছে তা হলো বাম প্রার্থী সুকৃতি ঘোষালের পরিচ্ছন্ন এবং শিক্ষিত ভাবমূর্তি। যা বিভিন্ন দলে চলে যাওয়া বাম ভোট কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর বাম ভোট বাড়া মানে ‘রাম’ ভোট কমা। আর রাম ভোট কমা মানেই অ্যাডভান্টেজ তৃণমূল। এছাড়া রয়েছে মহিলা ভোট যার বেশির ভাগটাই ঘাস ফুলে যেতে পারে। কারণ দুটি, লক্ষীর ভাণ্ডার আর দিলীপ বাবুর মুখ্যমন্ত্রীকে করা কটুক্তি, যা মহিলারা ভালো ভাবে নেননি। এছাড়া আছে এই অঞ্চলের শিখ ভোট, যা বিজেপির বিরুদ্ধে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, কারণ বিজেপি নেতৃত্বের ‘খালিস্তানি’ উক্তি আর তাতে কোনোরকম দু:খ প্রকাশ না করা। উপরন্তু শিখ সভাপতিকে তেজেন্দর সিংকেও দেখা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর জনসভায়, যা কিন্তু যথেষ্ট ঈঙ্গিতপূর্ণ। আছে বড় সংখ্যার মুসলিম ভোট, যা খুব সম্ভবতঃ যাবে ঘাসফুলের পক্ষেই। আর এই লড়াইয়ের ক্লাইম্যাক্স দেখা গেল ভোটের দিন অর্থাৎ ১৩ই মে। প্রসঙ্গত এই লোকসভার অর্ন্তগত যে ৭টি বিধানসভা আছে তার মধ্যে মন্তেশ্বরে তৃণমূল যথেষ্ট শক্তিশালী এবং বিজেপির থেকে এগিয়ে আছে অনেকটাই। ভোটের দিন দিলীপ ঘোষ মন্তেশ্বরে যান,আর তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখান শুরু করেন, ধাক্কাধাক্কি, ঝামেলা শুরু হয়ে যায়। আসেপাশের এলাকার সমস্ত মিডিয়ার লোকজন , নিরাপত্তা কর্মীরা ছুটে আসেন সেখানে। আবার একই রকম ঘটনা ঘটে বর্ধমান শহরের আরও কয়েকটি বুথেও। সেখানেও দিলীপ ঘোষ গেলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। অসমর্থিত সূত্রের খবর এটি পূর্ব পরিকল্পিত একটি ঘটনা। তৃণমূলের শক্তিশালী জায়গাগুলিতে দিলীপ বাবুর বুথ পরিক্রমা করাকে কাজে লাগিয়ে নিরাপত্তা শিথিল হওয়া বাকি জায়গাগুলিতে ভোট কারচুপি করা হতে পারে শাসক দলের পক্ষে। যদিও এই খবরের সত্যতা ‘আমার কথা’ যাচাই করে নি। তাই সব দিক বিচার করলে এই আসনটিও যেতে চলেছে ঘাসফুল শিবিরেই বলে অনুমান করছেন রাজনৈতিক মহল।