ব্ল্যাকমেইলের হাত থেকে বাঁচাতে খুনে সাহায্য বোনকে, দুর্গাপুরে যুবক খুনে ধৃত সহযোগী
আমার কথা, দুর্গাপুর, ২৫ নভেম্বরঃ
বিহারের যুবক ছোটনের খুনে যে মহিলার যোগ মিলেছে সেই মহিলাকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে ওই মহিলাকে খুনে সাহায্য করেছিল তারই দাদা। এবার সেই দাদাকে মালদা থেকে আটক করে নিয়ে এলো দুর্গাপুর থানার পুলিশ। গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার রাতে মিত্তিন পান্ডেকে আটক করে পুলিশ। তাঁকে আজ দুর্গাপুরে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁকে জেরা করছে পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের ফরিদপুরে গৌতম সাহার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় তার বাড়ির ভাড়াটিয়া বিহারের বাসিন্দা ছোটন দুবে(২৫) নামে এক যুবকের পচাগলা রক্তাক্ত মৃতদেহ। পুলিশ এসে ঘরের তালা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে মৃতদেহ উদ্ধার করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে ফরেনসিক টিম। তাঁরা ওই ঘর থেকে মহিলাদের কানের একটি দুল উদ্ধার পায়। পুলিশের তখন সন্দেহ হয় এই খুনের ঘটনার সাথে কোনো মহিলার যোগ রয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
পুলিশ সুত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ির মালিক গৌতম সাহার থেকে ছোটনের আধার কার্ডের জেরক্স থেকে তার বাড়ির ঠিকানা নিয়ে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে। ছোটনের পরিবারের থেকে তার ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে পুলিশ। ফোনের কল লিস্ট পরীক্ষা করে পুলিশ ধান্ডাবাগের বাগানপাড়ার বাসিন্দা পুজা পান্ডে নামে এক মহিলার সন্ধান পায়, যার সাথে শেষ কথা হয়েছিল ছোটোনের। সেই সুত্র ধরে পুলিশ পুজার খোঁজ শুরু করে। গতকাল বিকেলে পুজাকে আটক করে পুলিশ। পুলিশ জেরা শুরু করে পুজাকে। জেরার মুখে ভেঙ্গে পড়ে পুজা। ছোটনকে খুনের বিষয়টি স্বীকার করে নেয়। এরপর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
জানা গিয়েছে, পুজা ছোটোনের সম্পর্কে বৌদি হয়। তার সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল ছোটনের বেশ কয়ক বছর ধরে। এই সম্পর্ক চলাকালীন ছোটোন তাদের ঘনিষ্ট মুহূর্তের কিছু ছবি ক্যামেরা বন্দি করে রাখে। এদিকে পুজার আর ছোটোনের এই সম্পর্কের বিষয়টি তার স্বামী কিশোর পান্ডে জেনে যাওয়ার পর থেকেই দুজনের মধ্যে অশান্তি লেগে থাকতো। তারপরেই এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছিল পুজা। কিন্তু ছোটোন সেই ছবি দেখিয়ে পুজাকে ব্ল্যাকমেইল করছিল বলে অভিযোগ। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি ভাইরাল করে দেওয়ারও ভয়ও দেখাচ্ছিল ছোটোন। বিষয়টি এরপর পুজা তার দাদা মিত্তিন পান্ডেকে জানায়। রাজস্থানের একটি হোটেলে কর্মরত মিত্তিন পান্ডে দুর্গাপুরে আসে। ২১ তারিখ রাতে মিত্তিনকে গান্ধীমোড়ে একটি দেখা গিয়েছিল যার ছবি সেখানকার সিসিটিভি ক্যামেরাতে ধরা পড়ে।
জানা গিয়েছে ছোটোনের হাত থেকে মুক্তি পেতে দাদা মিত্তিনের সাথে তাঁকে খুন করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ছোটোনকে বিহার থেকে ডেকে পাঠায় পুজা। সে প্রথমে ১৫ দিন পুজার বাড়িতেই থাকে। এরপর ফরিদপুরে গৌতম সাহার বাড়িতে ভাড়া নিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করে ছোটোন। পুলিশ অনুমান মঙ্গলবার রাতে দাদাকে সাথে নিয়ে ছোটোনের বাড়িতে যায় পুজা। সম্ভবতঃ সাথে পুজার আট বছরের মেয়েও ছিল। সেখানে ছোটোনকে প্রচুর পরিমানে মদ খাওয়ানো হয়। তারপর তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। কিন্তু রাতে বাড়ির মূল গেটে বাড়িওয়ালা তালা দিয়ে দেওয়াতে সেখান থেকে বেরোতে পারে না পুজা ও মিত্তিন। ছোটোনের মৃতদেহ আগলে বসে থাকে তাঁরা। পরেরদিন ভোড়ে গেটের তালা খুলে দেওয়ার পরেই নিজের মেয়ে ও দাদার সাথে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় পুজা। যাওয়ার সময় সাথে ছোটোনের মোবাইল ফোনটি ও আধার কার্ড সাথে করে নিয়ে যায়। তারপর দুর্গাপুর থেকে পালিয়ে যায় মিত্তিন। কিন্তু ধরা পড়ে যায় পুজা। পুলিশী জেরায় পুজা জানায় ছোটোনের মোবাইলে থাকা তার কিছু নগ্ন ছবি দেখিয়ে এই সম্পর্কে থাকার জন্য ব্ল্যাকমেইল করছিল ছোটোন। তারই জন্য এই খুন। পুজার মুখ থেকেই তাঁরা দাদা মিত্তিনের কথা পুলিশ জানতে পারে। এরপর মালদা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে দুর্গাপুরে নিয়ে আসা হয়।