অপুদা- বিশুদা, দুর্গাপুর তৃণমূলে নয়া সমীকরণ
আমার কথা, দুর্গাপুর, ২৬ মার্চ:
দোলপূর্ণিমা উপলক্ষে রবিবার আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে দেখা গেলো একটি বিরল দৃশ্য। দুর্গাপুর পৌরসভার প্রাক্তন মেয়র অপূর্ব মুখার্জি ও দুর্গাপুর- পশ্চিমের প্রাক্তন বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়ালকে একই অনুষ্ঠানে পরস্পরের মধ্যে সৌজন্যে বিনিময় করতে দেখা গেলো। কিন্তু কদিন আগেও এই ছবি অকল্পনীয় ছিল এতটাই রেশারেশি ছিল এই দুই তৃণমূল নেতার মধ্যে। ঘটনার সুত্রপাত সম্ভবত ২০১২ সালে পৌরসভা নির্বাচনের সময় থেকে। সেই বছর তৃণমূলের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় বিশ্বনাথ বাবুর নাম ছিল না, যা নিয়ে প্রচণ্ড হৈচৈ হয় দলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে। কারণ তার আগের দুবছরের টানা বিজয়ী পৌরপিতা তথা বিরোধী দলনেতা ছিলেন বিশ্বনাথ বাবু। তাই তাঁর নাম বাদ যাওয়াতে কর্মী সমর্থকরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে, এবং এর পিছনে অপূর্ব বাবুর হাত আছে বলে রাজনৈতিক মহলের চর্চিত হয়। যদিও পরিস্থিতির চাপে শেষ পর্যন্ত বিশ্বনাথ বাবুর নাম প্রার্থী পদে যুক্ত করা হয়। এরপর আবার আগুনে ঘৃতাহুতি হয় যখন ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দুর্গাপুর -পশ্চিম থেকে অপূর্ব বাবুর নাম দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়। সেই সময় বিশ্বনাথ বাবু ক্ষোভে দল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেন এবং কংগ্রেস-বাম জোটের প্রার্থী হিসেবে অপুর্ব বাবুর বিরুদ্ধে প্রার্থী হন। নির্বাচনে অপূর্ব বাবুকে হারিয়ে জয়ী হন বিশ্বনাথ বাবু। যদিও পরে তিনি ততকালীন আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারির হাত ধরে আবার তৃণমূলে ফিরে আসেন। কিন্তু ফিরে এলেও বিশ্বনাথ বাবু ও অপূর্ব বাবুর দুই গোষ্ঠীর লড়াই দলের মধ্যে চলতেই থাকে। একদিকে এই গোষ্ঠী দন্ব অপরদিকে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত দুইয়ে মিলে ২০২১ এর বিধান সভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বনাথ বাবু পরাজিত হন বিজেপির লক্ষণ ঘোড়ুই এর কাছে। দলে ক্রমশ কোণঠাসা হতে থাকেন বিশ্বনাথ বাবু। অন্যদিকে অপূর্ব বাবু ২০১৬ নির্বাচনে হারার পর থেকেই ধীরে ধীরে নিজেকে সরিয়ে নিতে থাকেন সক্রিয় রাজনীতি থেকে। আবার দুর্গাপুরে এই দুই হেবিওয়েট নেতার অনুপস্থিতিতে দুর্গাপুর নেতৃত্বের রাশ চলে যায় আসানসোল লবির হাতে। পরিস্থিতির মোড় ঘুরতে থাকে যখন দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী কিছুদিন আগে দুর্গাপুরে থাকাকালীন দলের সবাইকে একসাথে কাজ করতে বলেন এবং বিশ্বনাথ বাবুকে দুর্গাপুর – পশ্চিমের দায়িত্ব দেন লোকসভা ভোটএর জন্য। দলের সুপ্রিমো বলে গেলেন কিন্তু দুর্গাপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থামার নয়। দুর্গাপুরে আসানসোল লবির দুই নেতা প্রাক্তন পৌরপিতা দেবব্রত সাঁই ও দীপঙ্কর লাহা ভরা সভায় নাম না করে বিশু বাবুর নামে বিষেদগার করেন। এরপরে এই ‘ অপুদা – বিশুদা মিলন উৎসব ‘। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এর পিছনে আছে অনেক অংক। যদি এই দুই নেতার মিলিত শক্তি যদি তৃণমূলকে জেতাতে পারে তাহলে একদিকে অপুর্ব বাবু ও বিশ্বনাথ বাবু দুজনেরই রাজনৈতিক কেরিয়ার নতুন ভাবে অক্সিজেন পাবে। হয়তো একজনের আগামী দিনে আবার বিধায়ক ও আবার মেয়র হবার পথ সুগম হবে। পাশাপাশি আসানসোল লবির হাত থেকে আবার দুর্গাপুরে দলের কর্তৃত্ব নিজেদের হাতে নেওয়া যাবে। বাকিটা সময় বলবে।