লোকসভা ভোটে আসানসোল আসনটি তৃণমূলকে উপহার বিজেপির?
আমার কথা, আসানসোল, ২ মার্চঃ
২০১৪ সাল থেকে পর পর দু’দফায় আসানসোল লোকসভা আসনটি জিতেছিলেন বিজেপি-র হয়ে তৎকালীন সময়ে দাঁড়ানো বাবুল সুপ্রিয়ো। তবে উপনির্বাচনে আসনটি বিজেপি ধরে রাখতে পারেনি। বিজেপির অগ্নিমিত্রা পালকে শত্রুঘ্ন সিনহা প্রায় ৩ লক্ষ ভোটে পরাজিত করেন। আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে বেশ কিছুদিন আগেই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। বিদায়ী সাংসদ বিহারীবাবুকেই প্রার্থী হিসেবে আবারও রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। আসানসোলে পঞ্চাশ শতাংশ হিন্দিভাষী ভোট টানতে বছর দুয়েক আগে উপনির্বাচনে ‘বিহারীবাবু’-র যে ফর্মূলাকে কাজে লাগিয়েছিল ঘাস-ফুল শিবির, সেই ফর্মূলাই বহাল রইল এবারের প্রার্থী নির্বাচন। আর শাসকদলের দেখানো সেই পথেই হাঁটলো বিজেপিও। এক হিন্দিভাষী প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপর এক হিন্দিভাষীকে প্রার্থী করলো গেরুয়া শিবির। এদিকে এই রাজ্য-রাজনীতিতে প্রথম পদার্পণ ভোজপুরী অভিনেতা পবনের। আসানসোল তথা এই রাজ্যে পবনের অনুগামী বলতে সেভাবে কেউ নেই। তাই পুরোটাই তাঁকে নির্ভর করতে হবে আসানসোল তথা রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের উপর। আর এখানেই “কবি কেঁদেছেন”।
ভোটের হাওয়া যখন থেকে রাজ্যে বইতে শুরু করে তখন থেকেই আসানসোলে রাজনৈতিক মহলে প্রার্থী হিসেবে চর্চায় ছিল দুটি নাম। অগ্নিমিত্রা নাকি জিতেন্দ্র? রাজনৈতিক মহলের একাংশের অগ্নিমিত্রার সপক্ষে যুক্তি যে, বিধায়িক হয়ে আসানসোলে তিনি বেশ সক্রিয়। আবার আরেক পক্ষের জিতেন্দ্রকে নিয়ে যুক্তি, সেই হিন্দিভাষী ফর্মূলা। সাথে একজন দাপুটে নেতা হিসেবে আসানসোলে জিতেন্দ্রও অনুগামীর সংখ্যাও কম নয়। কিছুদিন আগে অগ্নিমিত্রা পাল বেশ জোরের সাথে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন যে, বিজেপি আসনসোল লোকসভা আসনে ৩ লক্ষ ভোটে জিতবে। যদিও তার আগেই তৃণমূল থেকে একই দাবি করা হয়েছিল। এদিকে আবার কিছু মহল থেকে সম্ভাব্য বিজেপি প্রার্থী হিসেবে জিতেন্দ্র তিওয়ারীর নামও দাবি করা হচ্ছিল। আবার পাশপাশি অগ্নিমিত্রা আর জিতেন্দ্রের বিরোধের কথা আসানসোলে কান পাতলেই শোনা যায়। দুটি গোষ্ঠী আলাদাভাবে বিভক্ত। এসবের মাঝে সব জল্পনায় জল ঢেলে দিয়ে প্রার্থী হিসেবে বহিরাগত পবন সিংয়ের নাম ঘোষণা অনেককেই অবাক করে দিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়েছে যে, বিজেপি হঠাৎ এরকম সিদ্ধান্ত কেন নিলো? তাহলে কি বিজেপির অন্দরে যে ভয়টা ছিল যে, অগ্নিমিত্রা বা জিতেন্দ্রর মধ্যে কেউ একজন যদি প্রার্থী হয় তাহলে অপর পক্ষ সাবোতোজ করবে নির্বাচনে দলের ভরাডুবি করে ছেড়ে দিতে পারে? আর তাই এই দুজনের কাউকেই নয়, একেবারে বহিরাগতকে এনে অগ্নিমিত্রা আর জিতেন্দ্রর বিরোধ মেটাতে চাইলো পদ্মশিবির? কিন্তু পাশাপাশি এই মুহূর্তে আসানসোল শিল্পাঞ্চলে কান পাতলে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে যে শত্রুঘ্ন সিনহার তুলনায় পবন সিং যে অনেকটাই দুর্বল প্রার্থী তা বোঝার জন্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক হবার মনে হয় দরকার নেই। দেখতে গেলে পবন সিংকে প্রার্থী করে পরোক্ষে শাসক দলকে সাথে আসনটি অঘোষিত উপহার দিয়ে দিলো কি বিজেপি? এদিকে মজার বিষয় হলো শত্রুঘ্ন সিনহা আবার পবন সিংকে প্রার্থী পদের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে নিজের জয়লাভ নিয়ে সুনিশ্চিত আশা প্রকাশ করেছেন। এরপর এই ভোট রঙ্গে জনগণ কি রায় দেয় তারই শুধু অপেক্ষা।