ডাকাত দলের পান্ডা, অপহরণকারী, নাকি অন্য কিছু ? ধৃত সাগরকে নিয়ে বাড়ছে ধন্দ্ব
আমার কথা, অন্ডাল, ৩ জানুয়ারীঃ
কুড়ি লক্ষ টাকা সহ অন্ডাল থানার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া নলহাটির বাসিন্দা সাগর যাদব ডাকাত দলের পান্ডা, অপহরণকারী? নাকি এর নেপথ্যে রয়েছে অন্য কিছু গল্প তা নিয়ে বাড়ছে ধন্দ্ব। তদন্তের সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে দাবি পুলিশের।
২৯ শে ডিসেম্বর রবিবার অন্ডাল বিমানবন্দর সংলগ্ন ওল্ড এরোড্রাম এলাকা থেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন বীরভূমের নলহাটির বাসিন্দা সাগর যাদব ও তার তিন সঙ্গী। তাদের বিলাসবহুল চার চাকার গাড়ির ভেতরে থাকা ব্যাগ থেকে উদ্ধার হয় নগদ কুড়ি লক্ষ টাকা সহ কয়েকটি দামি মোবাইল ও একটি লোহার রড। ডাকাতির উদ্দেশ্যে জড়ো হওয়ার অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করে তাদের। বর্তমানে সাগর সহ তার সঙ্গীরা রয়েছে পুলিশ হেফাজতে। ডাকাতির উদ্দেশ্যেই কি সাগররা জড়ো হয়েছিল? তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। কারণ ধৃতদের কাছ থেকে কোন আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়নি। একটি লোহার রড কি যথেষ্ট ডাকাতির জন্য? ডাকাতির আগেই এত বিপুল পরিমাণ টাকা কোথা থেকে এলো তাদের কাছে? দ্বিতীয়তঃ সাগর হচ্ছে একজন সম্পন্ন ব্যবসায়ীর ছেলে। সে নিজে বিলাসবহুল জীবনযাপন করে বলে খবর। তাহলে তার ডাকাতির কেন প্রয়োজন পড়বে? এই প্রশ্ন ওঠার আরও একটি কারণ রয়েছে, যেদিন সাগর গ্রেপ্তার হয় পুলিশের হাতে, সেদিনই নলহাটি থানায় ওই থানা এলাকার বাসিন্দা স্বামী রিপন শেখকে সাগর যাদব অপহরণ করে বলে অভিযোগ দায়ের করেন রিপনের স্ত্রী রোহিনি খাতুন ।
ধৃত সাগর যাদব নলহাটির পাথর ব্যবসায়ী তাপস যাদবের ছেলে। তাপস বাবুর রাজনৈতিক পরিচয়ও রয়েছে। তিনি ২০২১ এর বিধানসভা ভোটে বিজেপির প্রতীকে প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, ফলে সাগরের গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনায় লেগেছে রাজনৈতিক রংও। সাগরের বিরুদ্ধে যাকে অপহরণের অভিযোগ রয়েছে সেই রিপন শেখ জানান, সাগর তার অনেকদিনের বন্ধু। ২৮ তারিখ দুপুর ১২.৩০ নাগাদ সাগর তাকে গাড়িতে উঠতে বলে বাইরে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে। প্রথমে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ে। সেখানে সাগরের সাথে যোগ দেয় তার আরও তিন সঙ্গী। পরে সেখান থেকে তাকে নিয়ে এসে বন্দী করে রাখা হয় বীরভূমের দুবরাজপুরে বন্ধ একটি কোলিয়ারির পরিত্যক্ত ঘরে। সেখানে সাগর ও তার তিন সঙ্গী প্রচুর মদ্যপান করে। ১২ বছর আগে নলহাটিতে খুন হন সাকির আলি নামে এক ব্যক্তি। মৃত সাকিরের এর ছেলে সোহেল রিপনের বন্ধু। খুনের ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ সোহেলের কাছে রয়েছে বলে রিপন জানান। সেই ভিডিও ফুটেজ তার কাছ থেকে এনে দেওয়ার জন্য রিপনকে চাপ দেয় সাগর। রিপনের পক্ষে এটা সম্ভব নয় বলাতে সাগর ও তার সঙ্গীরা তার উপর অকথ্য অত্যাচার করে। সারারাত তাকে মারধর করে বলে দাবি রিপনের। পরেরদিন ভোররাতে প্রচুর মদ্যপান করায় সাগর সহ তার সঙ্গীরা ঘুমিয়ে পড়লে সুযোগ বুঝে রিপন তাদের ডেরা থেকে পালিয়ে যায়। ভীমগরে এসে নলহাটি থানার পুলিশকে জানালে পুলিশ তাকে আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। রিপন শেখ দাবি করেন ১২ বছর আগে খুন হওয়া ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পেতেই সাগররা তাকে অপহরণ করেছিল।
অন্যদিকে সাগর যাদবের গ্রেপ্তার হওয়ার খবর পেয়ে নলহাটি থানার পুলিশও তৎপর হয়ে উঠেছে। স্থানীয় আদালতে সাগর যাদবকে শ্যোন অ্যারেস্টের আবেদন জানায় সেখানকার পুলিশ বলে খবর। সাগরকে ঘিরে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসায় তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে ধন্দ্ব। ১২ বছর আগে খুন হওয়ার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ হাতে পেতে কেন সাগর এতটা বেপরোয়া হল তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। ওই খুনের ঘটনার সাথে সাগরের কি কোন যোগ রয়েছে! বিষয়টা নিয়ে ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। যদিও এ বিষয়ে সেভাবে কিছু বলতে চাননি এসডিপিও(রামপুরহাট) গোবিন্দ সিকদার। তিনি বলেন অপরহরণের একতি অভিযোগ সাগর যাদবের বিরুদ্ধে হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
সাগরের গ্রেপ্তার হওয়া প্রসঙ্গে তার বাবা ব্যবসায়ী তাপস যাদবের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমার ছেলে ও তার তিন সঙ্গী মিলে যদি রিপনকে অপহরণ করে তাহলে সে কেন শুুুধু সাগরের নামে অভিযোগ জানলো? আসলে আমাদের আর্থিক সাচ্ছন্দের জন্য রিপন হিংসের থেকে সাগরের নামে মিথ্যে অভিযোগ এনেছে। পাশাপাশি তাপসবাবু এও অভিযোগ করছেন যে পুলিস ডাক্তির মিথ্যে মামলায় সাগরকে ফাঁসাচ্ছে। সাগর ব্যবসার লেনদেনের জন্য ওই টাকা নিয়ে দুর্গাপুরে যাচ্ছিল। এত টাকা নিয়ে কেউ ডাকাতি করতে যায়?
এবিষয়ে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি(পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা বলেন, বিষয়টির সব দিক খতিয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।