‘নোটা’য় ভোট দেওয়ার নিরিখে রাজ্যে শীর্ষে ‘বাঁকুড়া’
আমার কথা, বাঁকুড়া, ১৪ জুনঃ
গোটা দেশে সংখ্যাটা ৬২ লক্ষের বেশি। নয় নয় করে রাজ্যেও তা ৫ লক্ষ ছাপিয়েছে। তবে ‘নোটা’ (নান অব দ্য অ্যাবাভ)-য় ভোট দেওয়ার নিরিখে রাজ্যে শীর্ষে রয়েছে বাঁকুড়া কেন্দ্র। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটে সব চেয়ে বেশি ২৬,২০৯টি ভোট ‘নোটা’য় পড়েছে ওই কেন্দ্রে। পিছিয়ে নেই জেলার আর এক কেন্দ্র বিষ্ণুপুরও।
সেখানে ‘নোটা’-য় ভোট পড়েছে ১৯,১৩২টি। পরিসংখ্যান সামনে আসার পরেই চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে। বিশেষত, বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে জয়ী বিজেপি ও পরাজিত তৃণমূল প্রার্থীর ভোটপ্রাপ্তির ব্যবধান যেখানে সাড়ে পাঁচ হাজার, সেখানে ‘নোটা’-য় পড়া ভোট কমলে ফলাফল অন্য হতে পারত বলে দাবি। তেমনই বাঁকুড়া কেন্দ্রেও জয়ী তৃণমূল প্রার্থীর সঙ্গে বিজেপি প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান অনেকটাই কমতে পারত। সেই অর্থে দু’টি কেন্দ্রেই চূড়ান্ত ফলে প্রভাব ফেলেছে ‘নোটা’-র ভোট, অনুমান বিশ্লেষকদের।
ঘটনা হল, ভোটের ফলের প্রাথমিক পর্যালোচনায় ওই দু’টি কেন্দ্রে পরাজিত দলের দুই প্রার্থীই বিক্ষুব্ধ ভোটের শিকার হয়েছেন বলে আড়ালে মানছেন বিজেপি ও তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। বাঁকুড়ার বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকারের বিরুদ্ধে দলেরই একাংশ বারবার প্রকাশ্য বিরোধিতায় নেমেছে। যা সামলাতে ‘ব্যর্থ’ হন বিজেপি নেতৃত্ব। এমনকি, সুভাষকে যে দিন প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়, সে দিনও বাঁকুড়া শহরের মাচানতলায় বিক্ষোভ হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুভাষের ‘বিক্ষুব্ধ’দের অনেকে আড়ালে ‘নোটা’য় ভোট দেওয়ার কথা স্বীকার করছেন। তেমনই এক জনের কথায়, ‘আমি ও আমার পরিবারের সকলেই বিজেপির ভোটার। কিন্তু সুভাষকে আমরা প্রার্থী হিসেবে মানতে পারিনি। অন্য দলে ভোট দেওয়াও আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই সকলে নোটায় ভোট দিয়েছি।’ বিষ্ণুপুরেও তৃণমূলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ কম নয়। দলেরই একাংশ সুজাতার হয়ে সে ভাবে ভোট করেননি। আড়ালে ওই ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতাদের অনেকেও ‘নোটা’য় ভোট দেওয়ার কথা মেনেছেন।
ভোটে দাঁড়ানো কোনও প্রার্থীকেই যোগ্য মনে না হলে ভোটারেরা যাতে তা জানানোর সুযোগ পান, সেই লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন ইভিএমে ‘নোটা’ চালু করে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন ভোটেও দেখা গিয়েছে, ‘নোটা’-র ভোট উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ছে। তথ্যও বলছে, গত লোকসভার চেয়ে এ বারে বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে ‘নোটা’-র ভোট অনেকাংশে বেড়েছে। বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক কৌশিক ঘোষ বলেন, ‘গণতন্ত্রের সমর্থনে ভোটদানে এগিয়ে এলেও কোনও দলীয় বা নির্দল প্রার্থীই তাঁর পছন্দ নয়—সাধারণ ভোটারের এই মতামতই ‘নোটা’য় ব্যক্ত হচ্ছে। ‘নোটা’র ভোটবৃদ্ধি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছেই একটা বার্তা দিচ্ছে। কেবল দক্ষিণপন্থী দলগুলিই নয়, অতীতে রাজনৈতিক ভাবে বিপরীত মেরুতে অবস্থান করা বাম-কংগ্রেস জোট থেকেও কিছু ভোট ভাগ হয়ে ‘নোটা’য় গিয়েছে কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার।’বাঁকুড়া কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী নীলাঞ্জন দাশগুপ্ত তবে বলেন, ‘গত লোকসভা নির্বাচনে যা ভোট দলীয় প্রার্থী পেয়েছিলেন, এ বারও তা এসেছে। আমাদের ভোট ‘নোটা’য় যায়নি। তৃণমূল-বিজেপিরই ভোট ‘নোটা’য় গিয়েছে।’ ‘নোটা’-য় পড়া ভোট নিয়ে সামগ্রিক পর্যালোচনা হবে, জানাচ্ছে বিজেপি-তৃণমূল, দুই শিবিরই।