ভূমিকন্যাও পারলেন না, জামুড়িয়ায় সেই লালের হাল হলো বেহাল
আমার কথা, মুনমুন দত্ত, জামুড়িয়া, ৯ জুনঃ
জাহানারা খানকে প্রার্থী করেও জামুড়িয়াতে হাল ফিরল না লালের। পঞ্চায়েত পৌরসভা দুটি এলাকাতেই বিপর্যয় হয়েছে বামেদের। ভোট বিপর্যয় নিয়ে দলে পর্যালোচনা করা হবে বলে জানান সিপিএমের জেলা সম্পাদক।
সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে আসানসোল কেন্দ্রে সিপিআইএম প্রার্থী করেছিল জাহানারা খানকে। জামুরিয়ার বাসিন্দা জাহানারা দু’বারের বিধায়ক। সৎ, অভিজ্ঞ ও লড়াকু নেত্রী হিসেবে পরিচিত জেলার রাজনীতিতে। এরকম একজনকে প্রার্থী করে সিপিআইএমের আশা ছিল সামগ্রিকভাবে লোকসভায় ভালো ফলের পাশাপাশি জামুরিয়া বিধানসভা এলাকাতে ভালো ফল করবে দল। বাম জামানাতে জামুরিয়া লাল দুর্গ হিসাবে পরিচিত ছিল। রাজ্যে পালাবদলের পর ২০১১ ও ২০১৬ সালে কঠিন পরিস্থিতিতেও জামুরিয়া থেকে জিতে দু’বার বিধায়ক হন জাহানারা খান। সেই কারণে ভূমিকন্যা জাহানারা খানকে সামনে রেখে ভালো ফলের আশাতে লড়াইয়ে নেমেছিল বামেরা। বাম নেতাদের পাশাপাশি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদেরও ধারণা হয়েছিল এবার নির্বাচনে জামুরিয়ায় ভোট প্রাপ্তির নিরিখে এগিয়ে থাকতে পারে বামেরা। জয় পরাজয়ে বাম প্রার্থী নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারেন বলে ধারণা ছিল তাদের। শাসক দল তৃণমূলের চিন্তা ছিল বাম প্রার্থী সংখ্যালঘু ভোট কাটলে সুবিধা পাবে বিজেপি। আবার বিজেপির চিন্তা ছিল বামেদের ভোট বাড়লে কঠিন লড়াইয়ের পড়তে পারেন পদ্মফুল দলীয় প্রার্থী। কিন্তু ৪-ই জুন ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা যায় কোন ছাপ ফেলতে পারেনি সিপিআইএম প্রার্থী জাহানারা খান। আসানসোল কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীকে পরাজিত করে জয়ী হয়েছেন তৃণমূলের শত্রুঘ্ন সিনহা। আর সিপিআইএম প্রার্থীর স্থান হয়েছে তৃতীয়।
আসানসোল পৌরসভার ১৩ টি ওয়ার্ড ও দশটি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে জামুরিয়া বিধানসভা। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে জামুরিয়া বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল পেয়েছে ৭৭,২০৯ টি ভোট । বিজেপি প্রার্থী পেয়েছেন ৬৫,৩৩৮ টি ভোট। আর সেখানে সিপিএম প্রার্থীর ঝুলিতে পড়েছে ২২,১৫০ টি ভোট। পৌর এলাকায় ১৩ টি ওয়ার্ড থেকে তৃণমূল পেয়েছে ৩৭,৪১৮ টি ভোট। ৩৪,০৪১ টি ভোট পেয়েছে বিজেপি প্রার্থী। আর সেখানে সিপিআইএম পেয়েছে ১১,৪৮৬ টি ভোট । বাকি ১০ টি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে সিপিএম প্রার্থী পেয়েছেন ১০,৬৬৪ টি ভোট । এছাড়াও প্রার্থী জাহানারা খান পরাজিত হয়েছেন নিজের বুথেও। কেন্দা পঞ্চায়েতের ২২৫ নম্বর বুথের ভোটার তিনি। সেই বুথে তৃণমূল পেয়েছে ২৫০ টি, বিজেপি ১৮৮ আর সেখানে সিপিএম প্রার্থী নিজে পেয়েছেন মাত্র ৪৭ টি ভোট । আবার বছর খানেক আগে হাওয়া ত্রিস্তর গ্রাম পঞ্চায়েত ভোটে দশটি পঞ্চায়েতে সিপিএম জিতেছিল ১৪ টি গ্রাম সংসদ । লোকসভা ভোটে সেগুলিও হাতছাড়া হয়েছে সিপিআইএম এর।
সিপিএমের এবার স্লোগান ছিল “হাল ফেরাতে-বাম ফেরাও”। একসময়ের লাল দুর্গ হিসেবে পরিচিত জামুরিয়াতে সিপিএমের হাল তো ফেরেইনি উল্টে পরিসংখ্যান বলছে, আগের থেকেও বেহাল হয়েছে সিপিএমের হল। ভোট বিপর্যয় প্রসঙ্গে জাহানারা খান বলেন আমরা প্রচারে তুলে ধরেছিলাম দুর্নীতি, বেকারত্ব, সামাজিক অবক্ষয়ের দিকগুলি। কিন্তু সেগুলো দাগ কাটেনি ভোটারদের মনে।উল্টে “লক্ষ্মীর ভান্ডার” প্রকল্প ভোটারদের প্রভাবিত করেছে তাই এই বিপর্যয় বলে মনে হয় । জামুরিয়া সিপিআইএম নেতা তাপস কবি বলেন ভোট বিপর্যয় নিয়ে দলের মধ্যে পর্যালোচনা চলছে। বিপর্যয়ের কারণ গুলি চিহ্নিত করে আগামী দিনে সেগুলি মেরামত করার প্রচেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি। একই কথা বলেন সিপিআইএম দলের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় ও।