কোথাও গায়ে আগুনের হুমকি, কোথাও সর্বস্বান্তের হাহাকার, দুর্গাপুরে উচ্ছেদের জেরে জেরবার দখলদারেরা
আমার কথা, দুর্গাপুর, ৩১ জুলাই:
গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার হুমকি তো কোথাও পরিবারকে নিয়ে পথে বসে যাওয়ার চিন্তা তো কোথাও আবার পথের ধারেই অসুস্থ হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়া। এই হল শহর দুর্গাপুরের বর্তমানে চলতি চিত্র। আর এই সমস্ত ঘটনার প্রেক্ষাপট তৈরী হয়েছে শুধুমাত্র উচ্ছেদ অভিযানকে ঘিরে। একদিকে রাজ্য সরকারের একটি সংস্থা এডিডিএয়ের উচ্ছেদ অভিযান, অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার উচ্ছেদের নোটিশ, এই দুইয়ে মিলিয়ে দুর্গাপুর শহরে সাধারন মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
গতকালই ৩২ নং ওয়ার্ডের পলাশডিহায় কয়েকজন বাসিন্দা দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার উচ্ছেদের প্রতিবাদে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছে। তার রেশ কাটার আগেই এদিকে আজ সকাল থেকে শহরের প্রাণকেন্দ্র সিটিসেন্টারে দখলদার উচ্ছেদ করতে দেখা গেল এডিডিয়ের পক্ষ থেকে। সিটিসেন্টার বাস স্ট্যান্ড, জাংশন মল, কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স সংলগ্ন মূল রাস্তার উপরের দোকানগুলিকে বুলডোজার চালিয়ে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। স্থায়ী অস্থায়ী কোনো দোকানই বাদ পড়েনি এদিনের অভিযানে। আর এই অভিযানকে ঘিরে রীতিমতো ধুন্ধুমার কান্ড ঘটে যায়। প্রথমে এই অভিযানে বাধা দেন দখলদারেরা। পরে তাদের পুলিশ দিয়ে হটিয়ে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত সিটিসেন্টারে গত বুধবার কয়েকটি দোকান ক্লাবঘরকে চিহ্নিত করে নোটিশ দেওয়া হয় এডিডিএয়ের জায়গা খালি করে দেওয়ার জন্য। না হলে এডিডিএয়ের পক্ষ থেকে জায়গা দখল নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। সেই মতো আজ সকাল থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। ভেঙ্গে ফেলা হয় জবরদখল দোকানগুলি। এদিকে এই ঘটনায় দখলদাররা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাদের অভিযোগ, তারা বিগত ৩০-৩৫ বছর ধরে এই জায়গায় দোকান চালাচ্ছে। তাদের এই দোকানের উপর নির্ভরশীল তাদের পুরো পরিবার। এখন তারা সর্বসান্ত হয়ে পথে বসে গেলেন। তাদের আরো অভিযোগ প্রাক্তন মেয়র দিলীপ অগস্তি তাদের দোকান মেপে জুকে বলে গেছিলেন ফুটপাত ছেড়ে দোকান পিছিয়ে তৈরী করতে। তারা সেই মতোই করেছিলেন, কিন্তু তাদের সময় না দিয়েই এভাবে সব ভেঙ্গে দেওয়া হল। তারা বলেন “আমরা কথা বলতেও গেছিলাম, কিন্তু মহরমের জন্য অফিস বন্ধ থাকায় কথা বলা যায়নি”। তাদের অভিযোগ এত বছর ধরে তাহলে কেন এখানে তাদের ব্যবসা করতে দেওয়া হল? শুরুতেই কেন তাদের আটকানো হয়নি? অন্তত আমাদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিতে পারতেন এডিডিএ কর্তৃপক্ষ।
তারা সমস্ত ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন যারা আজ আমাদের জীবনের উপর বুলডোজার চালালেন তারা ঠান্ডাঘরে বসে থাকেন। গরীবের যন্ত্রণা তারা কি বুঝেবেন।
তবে এ বিষয়ে এডিডিয়ের চেয়ারম্যান তাপস বন্দোপাধ্যায় বলেন, বিষয়টা ৩০-৩৫ বছর বা ৩০-৩৫ দিনের নয়। জায়গা এডিডিয়ের। সেই জায়গা দখল করে বসে থাকা যাবে না। আগামীদিনেও এই অভিযান চলবে।