তিলোত্তমার নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে দুর্গাপুরের নানা প্রান্তে ধীক্কার কর্মসূচী
আমার কথা, দুর্গাপুর, ৫ সেপ্টেম্বরঃ
সংবাদদাতা- প্রণয় রায়
বিকেল পাঁচটার আগে থেকেই চতুরঙ্গ ময়দানে মানুষের ভীড় বাড়ছিল। এ এক অন্য ধরণের প্রতিবাদ।
এমন প্রতিবাদ এর আগে হয়তো কখনো কেউ দেখেননি দেখলেও কারো মনে এত আলোড়ন সৃষ্টি হয়নি। মহিলাদের উপর নৃশংস পাশবিক অত্যাচার ও খুন এর মত ঘটনা সর্বত্র আকছার ঘটলেও আর জি কর কান্ড সবার মনের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে
টলিয়ে দিয়েছে নারীর স্বাধীনতা আর নিরাপত্তার ভিতকে। গত ১০ ই আগস্ট প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী রিমঝিম সিনহা নিজের ফেস বুক ওয়ালে ১৪ই আগস্ট মধ্যরাতে যাদবপুর বাসস্ট্যান্ডে মেয়েদের সমবেত হয়ে বসার ডাক দিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন মেয়েরা রাতের দখল নিক। রিমঝিমের তোলা সেই ডাক সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
১৪ই আগস্ট মধ্যরাতে ভারতের ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবসের সূচনা লগ্নে গোটা রাজ্যে মেয়েরা রাত জেগে ছিলেন উই ওয়ান্ট জাস্টিস এই প্রতিবাদ এ। আগুনের আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে এই রবীন্দ্র সংগীতের সঙ্গে জ্বলে উঠেছিল অসংখ্য মোমবাতি ও সবার কন্ঠে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল উই ওয়ান্ট জাস্টিস, আমরা সুবিচার চাই। এরপর মেয়েদের এই আন্দোলন আর থেমে থাকেনি। রাজ্য ও দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়ে তিলোত্তমার নৃশংস মৃত্যুর প্রতিবাদে সুবিচারের আন্দোলন। এরপর তিলোত্তমার নৃশংস হত্যা ও পাশবিক নির্যাতনের প্রতিবাদে একের পর এক প্রতিবাদ সংঘটিত হচ্ছে সর্বত্র। বুধবার বিকেল পাঁচটায় ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এর দুর্গাপুর শাখা ও আমরা তিলোত্তমা র দুর্গাপুর শাখার সদস্যারা তিলোত্তমার অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিচার চেয়ে সিটি সেন্টারের চতুরঙ্গ ময়দান থেকে জংশন মল অবধি এক মানব বন্ধন ও
পদযাত্রার আয়োজন করেন। এই পদযাত্রা চতুরঙ্গ ময়দান থেকে শুরু হয়ে ডি এম সি মোড় হয়ে সুহট্ট মলের পাশ দিয়ে জংশন মল অবধি যায় ও সেখানে একটি প্রতিবাদমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আই এম এর দুর্গাশাখার প্রধান ডাক্তার নীলাদ্রি সেন, ডাঃ শর্মিষ্ঠা দাস, আমরা তিলোত্তমার শ্রীমতী দেবযানী বোস সহ দুর্গাপুর,রাণীগঞ্জ, আসানসোলের চিকিৎসকগণ, স্বাস্থ্য কর্মী ও বিভিন্ন বিদ্যালয় সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এই পদযাত্রা ও মানব বন্ধনে অংশ নেন। আই এম এ র পক্ষ থেকে ডাক্তার নীলাদ্রি সেন রাত নটা থেকে দশটা পর্যন্ত প্রত্যেককে পাড়ায় পাড়ায়, তিলোত্তমার নৃশংস হত্যার বিচার চেয়ে বাড়ির আলো নিভিয়ে রাস্তায় মোমবাতি জ্বালিয়ে মানব বন্ধন করতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের মধ্যে চিকিৎসক তিলোত্তমার এ ঘটনা নাড়া দিয়েছে। তিনি বলেন সাধারণ মানুষ হিসেবে যখন পথে নেমেছি তখন যতদিন না পর্যন্ত তিলোতমা বিচার না পাবে ততদিন পর্যন্ত আমরা রাস্তায় থাকবো। আমরা তিলোত্তমার দুর্গাপুরের মুখপাত্র ডি আাই সি ভি র অধ্যক্ষ দেবযানী বোস বলেন তিলোত্তমা সঠিক সুবিচার না পাওয়া পর্যন্ত তাদের এ আন্দোলন চলবে।
আই এম এ র সভাপতি ডাঃ ছবি গাঙ্গুলী এই মানববন্ধনে যোগ দেবার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
দুর্গাপুর নাগরিক মঞ্চের পক্ষ থেকে এদিন জাংশন মলের সামনে মানব বন্ধন সেতু তৈরি করা হয়। হাতে মোমবাতি নিয়ে তাঁরা তিলোত্তমার নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানান। দুর্গাপুর নাগরিক মঞ্চের সদস্য সোমেন রাউত সকল দুর্গাপুরবাসীকে এই প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আহয়ান জানান।প্রতিবাদমূলক অনুষ্ঠানের শেষে রাত নটায় সব আলো নিভিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে তিলোত্তমার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এর পাশাপাশি এদিন রাত ১০টা থেকে চন্ডিদাস খোলা মার্কেটেও আর জি কর কান্ডের প্রতিবাদে রাত দখল কর্মসূচী নেওয়া হয়েছিল, যেখানে জমায়েত হয়েছিলেন এই শহরের সাংস্কৃতিক কর্মী ও মহিলারা। চিত্রশিল্পীরা ছবি এঁকে নীরব প্রতিবাদ জানান। এছাড়াও নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটক, বকৃতার মধ্যে দিয়ে উপস্থিত সকলে প্রতিবাদে সামিল হন।
অন্যদিকে এই শহরের বেনাচিতি এলাকায় ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের ঘোষিত কর্মসূচি ‘বিচার পেতে আলোর পথে’ রুপায়ন করল নারী-নিগ্রহের বিরুদ্ধে তৈরি দুর্গাপুর নাগরিক কমিটি। রাত ন’টা থেকে দশটা অব্দি ঘরের বাতি বন্ধ রেখে মোমবাতি এবং মোবাইলের আলো জ্বালিয়েছিল রাস্তায় ন্যায় বিচারের আশায়।
ঘরের মহিলারা রাস্তায় নেমে এই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন, যোগ দিয়েছেন রাস্তার পথ চলতি মানুষ, দোকানদারেরা এবং বিভিন্ন পেশার মানুষজন। দাবি অবিলম্বে পুলিশ কমিশনার কে সাসপেন্ড করতে হবে। আর জি করের তরুণী চিকিৎসকের নারকীয় ধর্ষণ ও হত্যার সাথে জড়িত সমস্ত অভিযুক্তদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এই ঘটনার উদ্দেশ্য কি ছিল তা প্রকাশ্যে আনতে হবে।কমিটির আহবায়ক দ্বয় রাখি জৈন শিপানি এবং ইতি বসু দত্ত বলেছেন যতদিন না তিলোত্তমা ন্যায় বিচার পাচ্ছে ততদিন এই আন্দোলন চলবে।