ব্যবসায়ীর অভিযোগই কি ছিনতাইয়ের পর্দা ফাঁস করলো নাকি নেপথ্যে রয়েছে অন্য রহস্য?
আমার কথা, দুর্গাপুর, ৭ সেপ্টেম্বরঃ
দিল্লির এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোটি টাকা ছিনতাই এর ঘটনায় শনিবার আদালতে পেশ করা হলো অভিযুক্তদের । ২-জন অভিযুক্তের পুলিশ হেফাজত ও অন্য চার জনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারপতি ।
বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের পিয়ালা মন্দিরের কাছে দিল্লির এক ব্যবসায়ীর গাড়ি দাঁড় করিয়ে এক কোটি এক লক্ষ টাকা ছিনতাই এর ঘটনা ঘটে। ঘটনা সূত্রে জানা যায় রেলের ঠিকাদার ওই ব্যবসায়ীর নাম মুকেশ চাওলা। প্রয়োজনীয় কাজে ওইদিন মুকেশ বাবু তার এক এজেন্টকে সাথে নিয়ে আসানসোলের সীতারামপুর যান। সেখান থেকে ফেরার পথে ছিইতাই এর ঘটনাটি ঘটে। থানায় অভিযোগ দায়েরের পর তদন্তে নামে দুর্গাপুর থানার পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় ছিনতাই এর ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ৬ জনকে। অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জন পুলিশ আধিকারিকের নাম উঠে আসায় ছড়ায় চাঞ্চল্য ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দিল্লির বাসিন্দা রেলের ঠিকাদার মুকেশ চাওলার সঙ্গে ব্যবসা করবে বলে আলাপ জমায় আসানসোলের এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে দুর্গাপুর থানার এএসআই অসীম চক্রবর্তী, সিআইডির বম্ব স্কোয়াডের এএসআই চন্দন চৌধুরী ও পুলিশের চাকরি থেকে বহিষ্কৃত মৃত্যুঞ্জয় সরকার। ওই ব্যবসায়ী আসানসোলের সীতারামপুরে চলে আসেন নতুন ‘পার্টনার’দের সঙ্গে আলাপ করতে। ব্যবসার কথাবার্তাও পাকা হয়। এরপরই বৃহস্পতিবার সকালে মুকেশবাবু আসানসোল থেকে রেলের কলকাতা অফিসে ব্যবসার জন্যে টাকা জমা করতে ১ কোটি ১ লক্ষ টাকা নগদ নিয়ে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে রওনা দেন। তারই অফিসের কোনও কর্মীর মাধ্যমে এই খবর চলে যায় তাঁর নতুন অংশীদারদের কাছে। দুর্গাপুরের ডিভিসি মোড়ের কাছে পিয়ালা কালী মন্দিরের কাছে প্রস্তুত হয়ে থাকে পুলিশের এএসআই,সিআইডির বোম স্কোয়াডের কনস্টেবল সহ পুলিশের সেই বরখাস্ত কর্মী। ব্যবসায়ীর গাড়ি আসতেই গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে যায় ওই তিন পুলিশ । নিজেদের ক্রাইম ব্রাঞ্চের পুলিশ বলে গাড়ি রাস্তা থেকে সাইডে নামাতে বলে। তারপর টাকা নিয়ে এলাকা ছাড়েন তারা। সূত্রের খবর , টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিবাদ হওয়ায় ক্ষুব্ধ এক অভিযুক্ত মুকেশবাবু সহ খবর দিয়ে দেয় পুলিশকে।
জানা যায় অভিযুক্ত দুই আধিকারিক এর একজন অসীম চক্রবর্তী (এএসআই) তিনি দুর্গাপুর থানায় বর্তমানে কর্মরত। তাঁর আগে তিনি কোকওভেন থানায় ছিলেন। সেই সময় অন্য একটি অপরাধমূলক ঘটনায় তাঁর নাম জড়িয়েছিল। তখন তাঁকে পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্কও করা হয়েছিল। অন্যজন চন্দন চৌধুরী (এএসআই), তিনি সিআইডি বোম স্কোয়াড এর কনস্টেবল। অনেকদিন ধরে তিনি আসানসোল দুর্গাপুর কমিশনারেটে কর্মরত রয়েছেন। বরখাস্ত রাজ্য পুলিশের এইট ব্যাটেলিয়ানের কর্মী মৃত্যুঞ্জয় সরকার মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। পশ্চিম মেদিনীপুরে এইট ব্যাটেলিয়ানের কর্মী পদে নিযুক্ত থাকাকালীন নানান অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অপরাধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছিল। ২০২২ সালে তাঁকে পুলিশের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এছাড়াও বাকি তিনজন সুভাষ শর্মা দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর রানাপ্রতাপ রোডের আশিষ মার্কেট এলাকার বাসিন্দা, মনোজ কুমার সিং উত্তরপ্রদেশের মোহনপুরের বাসিন্দা এবং সুরোজ কুমার রাম দুর্গাপুরের ধান্ডাবাগের বাসিন্দা। শনিবার দুই পুলিশ আধিকারিক সহ ৬ জনকে পেশ করা হয় দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে। সুভাষ শর্মা, মৃত্যুঞ্জয় সরকার এই দুজনের পাঁচদিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয় দুর্গাপুর মহকুমা আদালত সুরোজ কুমার রাম, চন্দন চৌধুরী, অসীম চক্রবর্তী এবং মনোজ কুমার সিং এই চারজনকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।