ঘটনা পরম্পরায় কল্পতরু মেলা নিয়ে দোকানদারদের বাড়ছে আশঙ্কা
আমার কথা, মুনমুন দত্ত, দুর্গাপুর, ১১ ডিসেম্বরঃ
দুর্গাপুরের কল্পতরু মেলাকে ঘিরে প্রতিবছরই কিছু না কিছু বিষয়ে বিতর্ক মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এ বছরও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি। বরং বলা ভালো এবারে কল্পতরু মেলার দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই কালো মেঘ ঘনিয়ে আসছে এই উৎসবকে ঘরে। টেবিল উল্টে বিতর্কের সুত্রপাত। তার সঙ্গে ক্রমান্বয়ে যোগ হচ্ছে মেলার অস্থায়ী কার্যালয়ে আগুন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন ঘটনাবহুল এবারের কল্পতরু মেলা শুরু হতে হতে বিতর্কের জল গড়াতে গড়াতে কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা হয়ত এখনই কেউ বলতে পারবে না, তবে এই মেলায় যারা স্টল বুক করেছেন দুটো লাভের আশায় তাঁদের মনে আশংকার বীজ দানা বাঁধতে শুরু করেছে।
গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় গ্যামন ব্রিজ মাঠে কল্পতরু মেলার খুঁটি পুজো অনুষ্ঠিত হয়। আর এরপরেই রাতের বেলায় ওই মাঠে মেলায় অস্থায়ী কার্যালয়ে আগুন লেগে যায়। পুলিশের সহায়তায় আগুন আয়ত্বে আসে। তবে তাতে কার্যালয়ের একাংশ, ব্যানার, চেয়ার ইত্যাদি পুড়ে যায়। সকাল হতেই তড়িঘড়ি ওই অস্থায়ী কার্যালয়ের ছেঁড়া অংশ কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হলো। তাহলে কি ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে রাতারাতি পোড়া চেয়ার, ছেঁড়া ব্যানার আর প্যান্ডেলের ছেড়া অংশ ঢেকে দেওয়া হল। আর পোড়া গন্ধের সাথে সাথে প্রশ্ন উঠছে এখান থেকেই। তাহলে কি মেলাকে ঘিরে গত শুক্রবার যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল এটি কি তারই প্রতিফলন? মেলা কমিটির কোষাধক্ষ্য দীপঙ্কর লাহা বলেন, কেউ বা কারা ইচ্ছাকৃত এই আগুন লাগিয়েছে, যারা চায় না মেলা স্স্থযভাবে হোক। তবে যতই চেষ্টা করুক মেলা নির্বিঘ্নেই হবে।
ঘটনার সুত্রপাত, গত শুক্রবার, শ্লোগান উঠল বহিরাগত হঠাও, যাকে ঘিরে কার্যত উত্তেজনা তৈরি হয় কল্পতরু মেলা ময়দানে। সাথে সাথে প্রকাশ্যে আসে শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দল। দিন কয়েক আগে গতবারের মেলা কমিটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে টেন্ডার প্রক্রিয়া সাথে স্থানীয় ক্লাব ও দলের কর্মীদের নিয়ে কমিটি তৈরী করে মেলা পরিচালনা করার জন্য লিখিত চিঠি দেন দুর্গাপুরের ৩১ ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের দুই সভাপতি দেবনারায়ণ সিং ও সুব্রত ব্রহ্ম সহ মেলার আয়োজন স্থল গ্যামন ব্রিজ ময়দান সংলগ্ন চারটি ওয়ার্ডের তৃণমূল কর্মীরা। শুক্রবার আচমকা অভিযোগকারী তৃণমূল কর্মীরা এসে দেখেন মেলার স্টল বন্টন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তারপরই উত্তেজনা শুরু হয় মেলা মাঠের সামনে, মেলা ময়দানের সামনে একটি টেবিল উল্টে দেওয়া হয় ছবি। যাকে ঘিরে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করে। কোকওভেন থানার পুলিশ এসে সামাল দেয় পরিস্তিতি। এইদিকে পুলিশের সামনেই মেলায় সচ্চতা আনার দাবিতে শুরু হয় তৃণমূল কর্মীদের স্লোগান। যতক্ষণ সুবিচার না মিলছে ততদিন এই আন্দোলন জারি থাকবে বলে হুশিয়ারী দেন আন্দোলনরত তৃণমূল কর্মীরা। যদিও দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মেলা কমিটির সভাপতি অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়। পাশাপাশি যারা এই তান্ডব করছে তারা এলাকার সমাজবিরোধী বলেও সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন মেলা কমিটির কোষাধক্ষ্য দীপঙ্কর লাহা।
তবে একের পর এক এই ঘটনার জেরে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে সেই সব ব্যবসায়ী তথা দোকানদারদের মধ্যে যারা প্রচুর টাকার বিনিময়ে এই মেলায় স্টল বুক করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার বলেন, অনেক টাকা দিয়ে এই মেলায় স্টল বুক করেছি। মেলা শুরুর আগেই যেভাবে একের পর এক অসান্তি চলছে এই মেলাকে ঘিরে তাতে কতটা সুস্থভাবে কেনাবেচা করতে পারবো তা নয়ে সন্দেহ আছে। গতকাল মেলার অস্থায়ী কার্যালয়ে আগুন লেগেছে। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবেই আগুন লাগায় তাহলে এটা বেশ ভয়ের ব্যাপার। মেলা চলাকালীন যদি আবারও কোনো অঘতন ঘতে তাহলে তো ধনে প্রাণে মারা পড়বো।
যদিও মেলার দোকানদারদের আশ্বাস দিয়েছেন দীপঙ্কর লাহা। তিনি বলেছেন, পুলিশের পক্ষ থেকে সব রকম সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যাতে মেলা সুস্থভাবে করা যায়। আজ রাত থেকে মেল ময়দান পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে কোকওভেন থানার পক্ষ থেকে। দুজন করে পুলিশ পাহারাতে থাকবে এই মাঠে। এছাড়াও আমাদের যারা স্বেচ্ছাসেবী ভাইয়েরা আছে তারাও সব কিছুর করা নজরদারি করবে।
সমালোচনায় সরব হয়ে দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপির বিধায়ক লক্ষণ ঘড়ুই বলেন , বহু প্রাচীন কল্পতরু উৎসবকে ঘিরেও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। তাহলে বুঝতেই পারছেন পরিস্থিতি কোন জায়গায় যাচ্ছে। আসলে এই মেলা থেকে প্রচুর ইনকাম আছে তার জন্যই এতো লড়াই। তোলাবাজি ছাড়া তৃণমূল একেবারেই অচল।