পাঞ্জাবের বাসিন্দার হাত দিয়ে উখড়া গ্রামে শুরু ২৯০ বছরের পুরোনো দুর্গাপুজা
আমার কথা, উখড়া, ১ অক্টোবর:
উখড়া গ্রামের প্রাচীন ও সাবেকি পারিবারিক দূর্গা পূজা গুলির মধ্যে অন্যতম হলো সুকোপাড়ার মেহরা বাড়ির দূর্গা পূজা। মেহেরা পরিবারের পূর্বপুরুষ পাঞ্জাব লাল মেহরা প্রায় ২৯০ বছর আগে পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোর থেকে এখানে আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
খনি অঞ্চলের উখরা গ্রামে জমিদার (হান্ডে) বাড়ির দুর্গাপুজোর পাশাপাশি রয়েছে একাধিক পুরাতন সাবেকি, পারিবারিক পূজার প্রচলন। এগুলির মধ্যে অন্যতম হলো শুকোপাড়ার মেহেরা বাড়ির দুর্গাপুজো। দুর্গা পূজার প্রচলন মেহরা বাড়িতে ঠিক কত বছর আগে শুরু হয়েছিল, কে শুরু করেছিলেন? এই বিষয়ে লিখিত কোন দলিল নেই। তবে পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের দাবি প্রায় ২৯০ বছর আগে পাঞ্জাবের লাহোর প্রদেশ থেকে পাঞ্জাব লাল সিং মেহরা, এখানে আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সেখান থেকে আসার সময় সাথে করে নিয়ে আসেন পরিবারের কুলো দেবতা মহাময়া দেবীর মূর্তি ও গিট দেওয়া একটি লালশালুর পুঁটলি। উখড়া গ্রামে আগমনের পর কুলদেবতা মহামায়া দেবী মূর্তি ও লালশালুর পুটলিটির প্রাণ প্রতিষ্ঠা ও পুজোর ব্যবস্থা করা হয় উখারা গ্রামের জমিদার বাড়ির গোপীনাথ জিউ মন্দিরে। পরবর্তীকালে মেহেরা পরিবারের আদি বাড়ির সামনে মন্দির তৈরি করে মহামায়া দেবীর মূর্তি ও লালশালুর পুটলি নিয়ে আসা হয় সেই মন্দিরে। মন্দিরের বেদীতে থাকে কুলদেবতার মূর্তি আর দেওয়ালের কূপ বা কুঠুরিতে রাখা থাকে লালশালুর পুটলিটি। পটলিটির ভিতর কি আছে সেটা আজও রহস্য। পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্য শান্তনু মেহেরা জানান ঐ পুটুলি আজ পর্যন্ত তারা কেউ খুলে দেখেনি। কথিত আছে কোন এক ব্যক্তি সেই পুটলি সাহস করে খুলে দেখেছিলেন, পরে তিনি অন্ধ হয়ে যান। তবে বংশ পরস্পরায় তারা শুনে এসেছেন ওই পুটলির ভিতর রয়েছে দেবী দুর্গার একটি নয়ন বা চোখ।
মেহেরা বাড়িতে প্রাচীন নিয়ম-নীতি ও শাস্ত্র মেনে প্রতিবছর দেবীর পূজার আয়োজন করা হয়। এখানে মহামায়া দেবী দুর্গার রূপে পুজিত হন। পুজোটি হয় বৈষ্ণব মতে। মেহেরা বাড়িতে মূর্তি পূজার প্রচলন নেই, মাটির ঘটের উপর পটের প্রতিমা পূজিত হন। এখানে ছাগ বলির প্রথা নেই পরিবর্তে ফল বলি দেওয়া হয়। আর হয় জোত জ্বালানো। ভোগের উপর পাটকাঠি রেখে তার উপর কর্পূর জ্বালানো হয়। অষ্টমীর খেন হয় সপ্তমিতে মেহেরা বাড়িতে। মেহেরা পদবী যেহেতু ক্ষত্রিয়, তাই দুর্গাপূজার নবমীর দিন পরম্পরা অনুযায়ী তরোওয়াল পুজোর প্রথা রয়েছে। দেবী দুর্গাকে উৎসর্গ করা হয় ২৫ রকমের ভোগ। পুজো প্রসঙ্গে মেহেরা পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্য শতানিক মেহেরা জানান দুর্গা পুজোতে পরিবারের সকল সদস্য অংশ নেন। যারা বাইরে থাকেন তারাও এই সময় বাড়ি ফিরে আসেন। পরিবারের পুজো পারিবারিক মিলন মেলায় পরিণত হয়।