১৪ মাস ধরে হাসপাতালে আপনজনদের অপেক্ষায় দুর্গাপুরের মেয়ে ফ্লোরা রোগী থেকে হয়ে উঠেছেন সেবিকা
আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান(দুর্গাপুর), ২৭ জুলাইঃ
বাড়ি ফেরাতে চায়নি আত্মীয়রা। হাসপাতালে প্রায় ১ বছরের অধিক সময় পার হয়ে রোগী থেকে সেবিকা হয়ে উঠলেন ফ্লোরা সান্যাল। বাড়ি ফিরে নিজে সাবলম্বী হয়ে মানব সেবাতে নিয়জিত হতে চান তিনি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেও তাঁকে বাড়ি ফেরাতে উদ্যোগী হলেও আত্মীয়স্বজন কেউ তাঁকে ফেরাতে চাইছেন না বলে অভিযোগ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফ্লোরা সান্যাল’কে বাড়ি ফেরাতে আইনি পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই নিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ৪৫ এর মহিলা ফ্লোরা সান্যাল। তাঁর সিটিসেন্টারের আলাউদ্দিন খান বিথী এলাকায় বাড়ি। তাঁর বাবা দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের কর্মী ছিলেন। প্রায় ২০ বছর আগে তাঁর মৃত্যু হয়। ফ্লোরাদেবীর দুই দিদি তাঁদের বহুবছর অগে বিয়ে হয়েছে। এক দিদি’র মুম্বাইয়ে ও অপর এক দিদি আসানসোলে থাকেন। বাড়িতে ফ্লোরাদেবী ও তাঁর বৃদ্ধা মা থাকতেন। ফ্লোরাদেবী’র বিয়েও হয়েছিলো। কোনও কারণবশত বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর ২০১৯ সালে বার্ধক্য জনিত কারণে তাঁর মা’য়ের মৃত্যু হয়।ফ্লোরাদেবী বাড়িতে একাই থাকতেন। তাঁর দিদিরা মাঝে মধ্যে এসে খবর নিতেন ও সুবিধা – অসুবিধা’র খবর রাখতেন। এরই মধ্যে ফ্লোরাদেবী মানসিক ও শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরেন। এলাকাবাসী লকডাউন পরিস্থিতিতে তাঁকে খাবার দিতেন। সেই সময় হঠাৎই তাঁর দিদিদের আসা যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। মানসিক ভাবে ভেঙে পরেন তিনি। সমাজসেবীরা তাঁর সেবাযত্ন শুরু করেন।
তাঁর ডান পায়ে একটি ক্ষত হয়েছিলো। সেই সময় তাঁকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে আত্মীয়স্বজনরা। বর্তমানে তাঁর ক্ষতটি সেরে উঠেছে। কিন্তু তাঁকে কেউ আর বাড়ি ফিরিয়ে দিতে চায়নি বলে অভিযোগ।
অভিযোগ, ফ্লোরাদেবী তাঁর দিদিদের একাধিকবার ফোন করলেও তাঁরা বাড়ি ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়নি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ফ্লোরাদেবী’র দিদিদের ফোন করা হলেও কোনও সদুত্তর মেলেনি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মহকুমাশাসক ও আদালতের দ্বারস্থ হয় তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে দিতে। ১৪ টি মাস ফ্লোরা দেবী কয়েকশো রুগীর সাথে পার করেছেন।কত রোগী আসে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়। আর তিনি এখনও তাঁর শয্যা’য় বসে শুয়ে বাড়ি ফেরার জন্য অপেক্ষারত রয়েছেন। কিন্তু কেউ আসেনা তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে।
সময় কাটাতে তিনি এখন হাসপাতালের মহিলা বিভাগে রোগীদের সেবা করে চলেছেন নার্সদের হাতে-হাত মিলিয়ে। তিনি এখন ওই মহিলা বিভাগের সেবিকা হয়ে উঠেছেন।
ফ্লোরাদেবী বলেন, সিটিসেন্টারে আমার নিজের বাড়ি রয়েছে। বাড়িতে তালা বন্ধ। আমি এখন সুস্থ হয়ে গিয়েছি। আমার কাছে ফোন নেই। অন্য রোগীদের কাছ থেকে ফোন নিয়ে দিদিদের সাথে যোগাযোগ করি। বাড়ি ফিরিয়ে দিতে বললেও কেউ বাড়ি ফেরাবার জন্য হাসপাতালে আসে না। আমি এখানে অন্য রোগীদের সেবা করে সময় কাটাই। আমি বাড়ি ফিরতে চাই। সেখানে নিজে স্বনির্ভর হয়ে নিজের খাবারদাবার নিজেই যোগার করবো। আমাকে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
আসানসোলের বাসিন্দা ফ্লোরাদেবী’র দিদি ডোলা সান্যাল’র সাথে ফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
হাসপাতাল সুপার ধীমান মন্ডল বলেন, আমরা ফ্লোরার দিদিদের সাথে ফোনের মাধ্যমে বহুবার যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তাঁরা কেউ আসেননি। বর্তমানে ফোন করলে ফোন ধরেন না। আমরা আইনি পদক্ষেপ নিয়েছি তাঁর কোনও একটা সুব্যবস্থা করার জন্য।
মহকুমাশাসক শেখর কুমার চৌধুরী বলেন, হাসপাতাল সুপারের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি দেখা হবে।