দুর্গাপুরের কবি সাহিত্যিকেদের জ্য সিটি সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর বিশেষ উদ্যোগ
আমার কথা, দুর্গাপুর, ২৬ জুনঃ
সংবাদদাতা-প্রণয় রায়
দুর্গাপুর সিটি সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর ভেতরে ঢুকতেই একটু আনমনা হয়ে দর্শকাসনে বসতে যাচ্ছিলাম হঠাৎ চমক ভাঙলো নিজাম মাস্টার মশাই এর ডাকে। সবার মাঝে বসতে যাচ্ছিলাম দেখে উনি ডেকে নিয়ে পাশে বসালেন। দেখলাম বসে আছেন রনজিত গুহ, অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী,ডঃ সুশীল ভট্টাচার্য সহ আর ও কত কবি ও সাহিত্যিকরা। পুরো হল ভর্তি। দুর্গাপুরের কবি সাহিত্যিকদের রচিত গ্রন্থ সম্ভার নিয়ে সিটি সেন্ট্রাল লাইব্রেরী তেএকটি বিভাগ খোলা হচ্ছে।সেখানে সব স্থানীয় লেখকদের রচিত গ্রন্থগুলি সযত্নে রাখা হবে এবং সবাই পড়তে পারবেন। দুর্গাপুরে বর্তমানে সাতাশটি গ্রন্থাগার বর্তমান। পশ্চিম বর্ধমান জেলা গ্রন্থাগার হল সিটি সেন্টারের এই কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারটি। আর মহকুমা গ্রন্থাগারটি অবস্থিত ভিড়িঙ্গিতে। সুতপা ভুঁই এই দুটি গ্রন্থাগারেরই দেখাশোনা করেন।
এই দুটি গ্যালারির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আসানসোল দুর্গাপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান কবি দত্ত, দুর্গাপুরের সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট সৌরভ চ্যাটার্জি, দুর্গাপুর নগর নিগমের এডুকেশন অফিসার সংঘমিত্রা দাশগুপ্ত, জেলা গ্রন্থাগারিক নির্মাল্য অধিকারী, এই লাইব্রেরীর যুগ্ম সম্পাদক অঙ্কিতা চৌধুরী সহ আরো বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
মঙ্গল দ্বীপ জ্বালিয়ে অতিথিরা এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এরপর এ ডি ডি এর চেয়ারম্যান কবি দত্ত, এস ডি এম সৌরভ চ্যাটার্জী ফিতে কেটে দুর্গাপুরের কবি সাহিত্যিকদের গ্রন্থ গ্যালারি ও রবীন্দ্র সাহিত্য গ্যালারির উদ্বোধন করেন।
অঙ্কিতা চৌধুরী তার স্বাগত ভাষণে বলেন এই গ্রন্থাগারটিতে দিন দিন পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়ছে। পড়ুয়া ছেলেমেয়ে ও গবেষকদের ডিজিটাল সাহিত্য পাঠ থেকে বাইরে বেরিয়ে বই পড়ার প্রতি দিন দিন আগ্রহ বেড়ে চলেছে। পড়ুয়াদের দাবি তাদের এই লাইব্রেরীতে পড়ার সময় বাড়াতে হবে ও ছুটির দিন লাইব্রেরী খোলা রাখলে তাদের পড়াশোনা করতে খুব সুবিধা হয়।
কবি দত্ত বলেন দুর্গাপুরও আসানসোল কে মেট্রো সিটি করার স্বপ্নকে রূপায়িত করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাই মিলে চেষ্টা করলে দুর্গাপুর আসানসোল একদিন মেট্রো সিটিতে পরিণত হবে। তিনি বলেন এই লাইব্রেরীর সম্প্রসারণ করতে বেশ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই জেলা গ্রন্থাগারের উন্নতির জন্য তিনি সব রকম সহায়তা দেবেন বলে আশ্বাস দেন।
সৌরভ চ্যাটার্জী বলেন দুর্গাপুর তার কাছে একটি স্বপ্নের শহর। এই শহর সংস্কৃতি থেকে শুরু করে পড়াশুনা বিভিন্ন দিক দিয়ে নিরন্তর এগিয়ে চলেছে। তিনি বলেন গ্রন্থাগারের গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি নিজে সারাদিনের কাজের শেষে ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ করে বই পড়েন। কারণ বই তাকে অক্সিজেন দেয়। তিনি আরো বলেন তার কাছে এই গ্রন্থাগারের বেশ কিছু পড়ুয়া প্রস্তাব দিয়েছে যাতে লাইব্রেরীর খোলা ও বন্ধ করার সময় বাড়ানো যায় এবং যদি ছুটির দিনগুলিতে লাইব্রেরী খোলা রাখা যায় তাহলে তারা আরো বেশি করে এই লাইব্রেরীতে পড়াশোনা করতে পারবেন। সৌরভ চ্যাটার্জী বলেন এ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন কোন পড়ুয়া তার প্রয়োজন মত কোন পুস্তক যদি এই গ্রন্থাগারে না পান এবং তাকে তা জানালে তিনি সেই পুস্তক এই গ্রন্থাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন।
নির্মল অধিকারী জানান তার অনুরোধে গ্রন্থাগারিক শ্রীমতি সুতপা ভুঁই ভিরিঙ্গি ও সিটি সেন্টারের দুটি গ্রন্থাগারেরই দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন । তিনি বলেন উন্মুক্ত পরিবেশে যাতে শিশুরা বই পড়ার আনন্দ পায় তার জন্য এই লাইব্রেরীর বাইরে শিশুদের জন্য
একটি ছোট্ট পার্ক তৈরি করার পরিকল্পনা আছে যাতে শিশুরা ডিজিটাল ফোবিয়া থেকে মুক্ত হয়ে বই পড়ার অভ্যাস করে।
গ্রন্থগারিক শ্রীপতি সুতপা ভুঁই বলেন বর্তমানে এই গ্রন্থাগারে প্রতিদিন প্রায় দেড়শ জন পড়ুয়া ও বয়স্ক মানুষ সংবাদপত্র পাঠ ও বইপত্র নিয়ে পড়াশোনা করে।
গ্রীণ ভলান্টিয়ার্স এর কাজি নিজামুদ্দিন অতিথিদের হাতে পলাশ গাছের চারা অর্পন করেন। পরিবেশ দূষণের হাত থেকে দুর্গাপুরকে মুক্ত করতে গ্রীণ ভলান্টিয়ার্স দুর্গাপুরে বেশ কয়েক বছর ধরে বৃক্ষ রোপন করে চলেছে। এবছরে গ্রীণ ভলান্টিয়ার্স এর লক্ষ্য পলাশ গাছ রোপন করে দুর্গাপুরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা।
সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুচারুভাবে সঞ্চালনা করেন কবি ও সাহিত্যিক রাজীব ঘাঁটি।