শিল্পাঞ্চলে চুপিসারে রমরমিয়ে চলছে কয়লার অবৈধ কারবার
আমার কথা, দুর্গাপুর, ২ মেঃ
শিল্পাঞ্চলে চুপিসারে রমরমিয়ে চলছে কয়লার অবৈধ কারবার। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বেশ কয়েকটি ডিপো থেকে হচ্ছে কয়লা পাচার। শাসক দল ও প্রশাসনের একাংশের মদতে এই কারবার চলছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। কয়লার সাথে তাদের কোন যোগ নেই বলে দাবি তৃণমূলের। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেন পুলিশ কর্তা।
বাম জামানার শেষ দিকে পশ্চিম বর্ধমান জেলা জুড়ে শুরু হয়েছিল কয়লার অবৈধ কারবার, যা এক সময় পৌঁছে ছিল শিল্পের পর্যায়র। কয়লার কালো টাকাতে খনি এলাকায় তৈরি হয়েছিল সমান্তরাল অর্থনীতি ব্যবস্থা। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। বছর তিনেক কয়লা কারবার বন্ধ থাকলেও ২০১৪ সাল থেকে ফের পশ্চিম বর্ধমান জেলা জুড়ে সংগঠিত ভাবে শুরু হয় কয়লা পাচারের কাজ। ২০১৮ সালের শেষ দিকে কয়লা পাচার নিয়ে শুরু হয় সিবিআই তদন্ত। পাচার কান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন কয়লা কারবারি থেকে ইসিএল আধিকারিক এমনকি শাসকদলের বেশ কয়েকজন নেতাও। সিবিআই তদন্ত ও কেন্দ্রীয় এজেন্সি গুলির সক্রিয়তার কারণে কয়ালা পাচারে বেশ কিছুদিন ভাটা পড়ে। সাময়িক বিরতির পর গত বছর দুর্গাপুজোর আগে ফের সিন্ডিকেটের হাত ধরে কিছুদিন কয়লা পাচার শুরু হয়। তবে তা কিছুদিনের মধ্যেই ঝিমিয়ে পড়ে। এই সময়কালের মাঝে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কয়লা কারবারি নতুন সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে বলে সুত্রের খবর। এদের হাত ধরে মলানদিঘির আকন্দরা, দুর্গাপুরের পারুলিয়া, দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের বৈদ্যনাথপুর সহ কয়েকটি এলাকায় শুরু হয় কয়লার অবৈধ ডিপো। ইসিএল এর ঝাঁঝরা এরিয়া ও বাঁকোলা এরিয়ার বিভিন্ন কোলিয়ারী, খোলা মুখ খনি থেকে সরপি মোড় থেকে বাইপাস রাস্তা ধরে সাইকেল ও ভ্যানে করে কয়লা এনে জড়ো করা হচ্ছে এইসব ডিপো গুলিতে। তারপর সেই কয়লা পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটা, স্পঞ্জ আয়রন কারখানা ও স্থানীয় মাঝারি ও ছোট কলকারখানা গুলিতে। মজুদ কয়লার একাংশ সময় সুযোগ বুঝে বড় লরিতে করে পাচার হয়ে যাচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেও। সুত্রের খবর পুরো কারবারটি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে শিল্প শহরের প্রাণকেন্দ্র সিটি সেন্টার থেকে, সিং, শর্মা পদবীর কয়েকজনের নেতৃত্বে ।
বিরোধীদের অভিযোগ কারবারিদের সাথে যোগসাজশ রয়েছে শাসক দল ও প্রশাসনের একাংশের। এদের মিলিত প্রচেষ্টাতেই এই কারবার চলছে। জাতীয় কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী বলেন “রাজ্য সরকার পুলিশকে ঠিকমতো বেতন দিতে পারেনা। পুলিশদেরও সংসার রয়েছে টাকার প্রয়োজন। তাই পুলিশ ঘুর পথে রাস্তা করে দিচ্ছে কয়লা কারবারিদের। যাতে পুলিশ এদের কাছ থেকে ঘুর পথে টাকা রোজগার করতে পারে”।
বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক লক্ষণ ঘড়ুই বলেন “শিল্পাঞ্চলে কয়লার অবৈধ কারবার নতুন কোন ঘটনা নয় । দীর্ঘদিন ধরেই এটা চলছে। আমরা বহুবার বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি”।
যদিও বিরোধীদের সব অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের এক জেলা নেতা বলেন এই সকল অভিযোগ মিথ্যা। কয়লা কারবারের সাথে তৃণমূলের কারও কোন যোগ নেই।
বিষয়টি নিয়ে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি পূর্ব অভিষেক গুপ্তা বলেন “কয়লা পাচারের কোন অভিযোগ আমার কাছে নেই”। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি ।