কবির চোখে শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরের বিশ্বকর্মা পুজোর সেকাল একাল
ধন্যবাদান্তেঃ কবি দিশারী মুখোপাধ্যায়
আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান(দুর্গাপুর), ১৭সেপ্টেম্বরঃ
হিন্দু ধর্মমতে দেবতাদের ইঞ্জিনিয়ার হলেন বিশ্বকর্মা। তাঁর সেরা শিল্পকর্মগুলোর দুএকটির নাম করলেই বোঝা যাবে তিনি কেমন মাপের ইঞ্জিনিয়র ছিলেন । স্বর্গলোক সম্পূর্ণই তাঁর তৈরি । এছাড়া স্বর্ণলঙ্কা , দ্বারকানগরী , হস্তিনাপুর , ইন্দ্রপ্রস্থ তাঁর স্বহস্তে নির্মিত। লখিন্দরের লোহার বাসরঘরও তাঁর নির্মিত ।
প্রতিবছর ইংরেজির ১৭ সেপ্টেম্বর , এই নির্দিষ্ট দিনে বিশ্বকর্মার পুজো হয়। অথবা বাংলা ক্যালেন্ডারের হিসাবে বললে ভাদ্র মাসের শেষ দিনে।
দুর্গাপুর শিল্পনগরীতে বিশ্বকর্মা পুজো দেখে আসছি কম করে পঞ্চাশ বছর ধরে। কারখানার ভেতর এবং দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীতে এই পুজোর রমরমা সেই সময়ের মতো করে ছিল চোখে পড়ার মতো। শিল্পশহরের দুর্গাপুরের ইস্পাত কারখানা , এম এ এম সি , ডিপিএল , এভিবি, এফ সি আই প্রত্যেকটি অঞ্চলেই নিজ নিজ উদ্যোগ আয়োজনে এর প্রাচুর্য এবং সর্বোপরি মানুষের মিলিত অংশগ্রহণ ও আনন্দ উপভোগ ছিল উল্লেখযোগ্য। দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর এ-জোন, বি- জোন এর মেনটেনেন্সের অফিসগুলো আলোকসজ্জা আমাদের শিশুমনে এক বিপুল আনন্দের উৎস ছিল। উল্লেখযোগ্য ঘটনা মনে পড়ে স্টেশন এলাকায় ডি এস টি সি অধুনা দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার গ্যারেজে ।
পরেরদিকে এই আয়োজন কিছুটা ফিকে পড়ে গিয়েছিল অথবা অন্যান্য উত্সবের জৌলুসের কাছে তাকে কম মনে হত। কিন্তু ব্যাক্তিগতভাবে ছোট ব্যবসা ভিত্তিক ক্ষেত্রে পুজোর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল অনেক অনেক বেশি। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার গ্যারেজের আয়োজনকে ছাপিয়ে উঠেছিল মিনিবাস পরিবহন মালিক ও কর্মীদের আয়োজন ও সংখ্যা ।
এ বছর অতিমারী জনিত কারণে অন্যান্য সমস্ত সামাজিক অনুষ্ঠানের মতোই এক্ষেত্রেও করাল ছায়া পড়েছে। প্রশাসনিকভাবে বিশ্বকর্মা পুজোর আয়োজনের অনুমতি নেই। শিল্পের শহর দুর্গাপুরে শিল্পগুরুর আরাধনার এই ব্যাঘাত জনজীবনকে ম্লান করে দিয়েছে।
আশা করা যায় অতিমারীর এই অন্যায় জুলুম থেকে আগামীদিনে আমরা অব্যাহতি পাবো এবং অন্যান্য সব উত্সব অনুষ্ঠানের মতো আগামী বছরের বিশ্বকর্মার আরাধনা আবার ভরপুর জমে উঠবে।