EXCLUSIVE: খনি এলাকায় সাট্টার বাড়বাড়ন্ত, অনলাইনের মাধ্যমে চলছে লেনদেন
আমার কথা, মুনমুন দত্ত, অন্ডাল, ৫ নভেম্বর:
কয়লা খনি এলাকায় মোবাইলের মাধ্যমে রমরমিয়ে চলছে সাট্টা খেলা। অবৈধ খেলাটির পরিধি বাড়ছে প্রতিনিয়ত। সর্বনাশা এই খেলা বন্ধ করার দাবি জোরালো হচ্ছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেন পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি(পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা।
বাম জমানাতে সাট্টা খেলাকে কেন্দ্র করে ঝড় উঠেছিল রাজ্য রাজনীতিতে। খেলাটির মাস্টারমাইন্ড বা কিংপিন হিসাবে উঠে এসেছিল রশিদ খান নামক এক ব্যক্তির নাম। তিনি সাট্টা ডন নামে পরিচিতি লাভ করেন। রশিদ খান গ্রেপ্তার হওয়ার পর দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল এই খেলা। তবে তারপর এই খেলাটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপে ফিরে এসেছে বারবার।
সাম্প্রতিককালে অনলাইনের মাধ্যমে সাট্টা খেলাটির বাড়বারন্ত হয়েছে খনি এলাকার বিভিন্ন জায়গাতে। সর্বনাশা এই খেলাটি ফিরে এসেছে নতুন রুপে। বর্তমানে মোবাইল এর মাধ্যমে খেলাটি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। ফলে লোকচক্ষুর আড়ালে খেলাটি ছড়াচ্ছে দ্রুত। দুর্গাপুর ফরিদপুর, অন্ডাল, পাণ্ডবেশ্বর ব্লকের বিভিন্ন জায়গাতে ইতিমধ্যে খেলাটি রমরমিয়ে চলছে বলে সুত্রের খবর। কিভাবে এই খেলা পরিচালিত হয়? জানতে চাওয়ায় নাম প্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে খেলাটির সাথে জড়িত এক এজেন্ট জানায় গোটা খেলাটি নিয়ন্ত্রিত হয় মোবাইলের মাধ্যমে। বিভিন্ন স্তরে রয়েছে এজেন্ট। একেবারে নিচের স্তরের এজেন্টকে বলা হয় “বুকি”। এরা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বুক নেয়, আর যারা খেলে বা বাজি ধরে তাদের বলা হয় “খেলোয়াড়”। শূন্য থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যার মধ্যে হয় খেলাটি। নম্বর বুক করা হয় মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপ ও কলের মাধ্যমে। ফলে প্রকাশ্যে খেলাটির অস্তিত্ব কেউ টের পায় না। কোন খেলোয়ার কোন নম্বর ক’টি বুক করেছে নির্দিষ্ট সময়ে তা বুকিরা মোবাইলের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয় এজেন্টদের কাছে। এক একজন এজেন্টদের হয়ে কাজ করে এক বা একাধিক বুকি। বিজেতাদের পুরস্কারের অর্থ দেওয়া হয় নগদে অথবা ডিজিটাল মাধ্যম একাউন্টে। খেলাটির নিয়ম সম্পর্কে অন্য এক এজেন্ট জানান দৈনিক ডিয়ার লটারির মাধ্যমে খেলাটি হয়। লটারির প্রথম পুরস্কারের শেষ নম্বরটি মিলে গেলে পাওয়া যায় পুরস্কারের অর্থ। সারাদিনে খেলাটি হয় মোট তিনবার। যেকোনো একটি নম্বর বুক করার জন্য লাগে ১২ টাকা। নম্বর মিলে গেলে পাওয়া যায় পুরস্কার অর্থ ১২০ টাকা। খেলাটি যাতে সাধারণের নজরে না আসে সেজন্য সাবধানতা অবলম্বন করা হয়। নম্বর বুক করার জন্য ব্যবহার করা হয় সাংকেতিক ভাষা। যেমন ১ নম্বরকে বলা হয় চোখ। ২-কে হাঁসছা (হাঁসের বাচ্চা), ৩-কে বলা হয় বেলপাতা, ৮-কে চশমা, ৯-কে মাথা ভারী। শূন্যকে লাড্ডু বলা হয়। প্রতিটি অক্ষরেরই এরকম একটি করে সাংঘাতিক ভাষা রয়েছে, যা ব্যবহার করে এজেন্ট ও জুয়াড়িরা।
এদিকে সাট্টা খেলাটি নতুন গ্রুপে ডালা-পালা ছড়ানোয় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। সিপিআইএম দলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন রাজ্য বা কেন্দ্র সরকার বেকারদের কর্মসংস্থান করতে ব্যর্থ। তাই কয়লা, বালি পাচারের মতো সাট্টা খেলার ছাড়পত্র দিয়ে যুবসমাজকে বিপথগামী করছে তারা। বিজেপির জেলা নেতা ছোটন চক্রবর্তী বলেন রাজ্যে সব ধরনের অনৈতিক কাজের পেছনে রয়েছে শাসকদলের মদত। তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের আশীর্বাদে এই খেলাটি রমরমিয়ে চলছে বলে অভিযোগ করেন। পাশাপাশি খেলাটি বন্ধ করার দাবি জানান তিনি। তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন সিন্ডিকেট আর সাট্টা খেলার জন্মদাতা হচ্ছে সিপিআইএম। আর বর্তমানে এই খেলাটি হচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এটি নিয়ন্ত্রণ করে। তাই এই খেলার দায় তাদের। তৃণমূল কোনরকম অনৈতিক কাজের মদত দেয় না বলে জানান উত্তমবাবু।
বিষয়টি নিয়ে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি(পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা বলেন মাস তিনেক আগে এরকম অভিযোগ পেয়ে অন্ডাল থানার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছিল। নতুন করে খেলাটি শুরু হওয়ার কোন অভিযোগ আসেনি। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।