‘জন গর্জন’ কার বিরুদ্ধে, বিজেপির নাকি নিজের দলের বিরুদ্ধে?
আমার কথা, দুর্গাপুর, ৯ মার্চঃ
“আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে”- রবি ঠাকুরের লেখা কবিতার লাইনগুলি এখন যেন বড়ই বাস্তব দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল রাজনীতিতে। আর এই রাজাদের রাজকাহিনী বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছে বিরোধী দলগুলি।
দিন কয়েক আগে, ২৬ ফেব্রুয়ারী দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায় দুর্গাপুরে এসে দলের নেতৃত্বদের ডেকে সাফ জানিয়ে দেন এক সাথে কাজ করতে হবে। এছাড়াও দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এলাকাগুলি দেখাশোনার দায়িত্বভার দেন একপ্রকার ‘এক-ঘরে’ হয়ে থাকা নেতা বিশ্বনাথ পাড়িয়ালকে। সাথে এও সিদ্ধান্ত হয়, সাংগঠিক বিষয়ে যা কিছু বলার তা দলের যিনি মুখপাত্র তিনি বলবেন বলে জানান জেলা সভাপতি নরেন চক্রবর্তী। আর ঘটনার সুত্রপাত এখান থেকেই। কোথাও যেন একটা ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়ে যায় অভিজিৎ ঘটক অনুগামী বনাম বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের মধ্যে। ৩ মার্চ তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটক দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে অবস্থিত একটি কারখানায় কর্তৃপক্ষের সাথে দেখা করেন সাথে কর্মীদের সাথেও কথা বলেন বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে। কিন্তু সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি ‘তাঁকে’ বলে সংবাদমাধ্যমের সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিশ্বনাথ পাড়িয়াল, আর বিশ্বনাথের এই ক্ষোভ ঘৃতাহুতি দেয় অভিজিৎ ঘটকের অনুগামীদের। প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়াতে শুরু করেন তাঁরা। দলনেত্রী কিংবা জেলা সভাপতি, কাউকেই তোয়াক্কা না করে কাদা নয় রীতিমতো পাঁক ছোঁড়াছুড়িতে মেতে ওঠেন তাঁরা। শুক্রবার পিসিবিএল কারখানার সামনে জনগর্জন সভামঞ্চ থেকে বিজেপিকে কম, নাম না করে বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের প্রতি গর্জনই বেশি ছিল। এদিনের সভামঞ্চ থেকে আইনজীবী তৃণমূল নেতা দেবব্রত সাঁই বলেন, “আমি সিপিএম ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলাম থুথু ফেলে। কিন্তু আরেকজঙ্কে কেন সিপিএমের সাহায্য নিতে হল আমার ফেলা থুথুটা চাটার জন্য? এদিন ওই মঞ্চ থেকে অপর এক তৃণমূল নেতা দীপঙ্কর লাহা বলেন, “দিদি আপনাকে দায়িত্ব দিয়েছেন ভাল কথা, কিন্তু আপনাকে তো আইএনটিটিইউসির দায়িত্ব দেননি। আপনি কেন পিসিবিএলের গেটের সামনে আসছেন?? এখান থেকে মধু পেয়েছেন নাকি? সঞ্জীব গোয়েঙ্কার মাধ্যমে কোন ব্যাংকে চেক যেতো আমরা তা জানি। চোর, চোরের মায়ের আবার বড় গলা”। এই দুই নেতার এহেন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিশ্বনাথ পাড়িয়াল বলেন আমি যে কারখানার সামনে জনগর্জন সভা করেছি সেটা পয়াশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যেই পড়ে। আর আমি কোথায় কি করবো সেটার আমি খুব ভাল করেই জানি। আমি যা করছি দলনেত্রীর নির্দেশেই করছি। আমাকে শেখান্তে হবে না কিছু। তৃণমূলের এই দুই গোষ্ঠীর বিবাদের ভিডিও এখন বেশ ভাইরাল হয়েছে। ঘুরছে অনেকেরই মোবাইলে। এই ভিডিও পৌঁছেছে বিরোধী দলের অনেক নেতার কাছেও। স্বভাবতই তারাও বেশ উপভোগ করছেন শাসকদলের এই অন্দর কলহ। দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, শাসকদলের নেতারা যেভাবে নিজেদের বিরুদ্ধেই গর্জন করছে, তাদের আর সময় কোথায় বিজেপির বিরুদ্ধে গর্জন করার। আগে তাঁরা নিজেদের লড়াই সামলাক তারপর নাহয় বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। এদিকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের পারদ যেভাবে চড়ছে তাতে বেশ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন তৃণমূলের নীচুতলার কর্মীরা। কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে তোপ দাগদে গিয়ে তৃণমূলের নেতারা যেভাবে নিজেদের কেচ্ছা নিয়ে কটূ মন্তব্য করছেন তাতে কি এবারেরে লোকসভা নির্বাচনে আবার ২০১৯ এর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না তো?