বাংলা মিডিয়ামে পড়েই ইউপিএসসিতে অষ্টম দুর্গাপুরের বিজয় “এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ””
আমার কথা, বিশেষ প্রতিবেদন, ১ মার্চ:
ইংরেজি নয় বাংলা মিডিয়ামের ছাত্র বিজয় দত্ত। দুর্গাপুরের এবিএল এলাকায় বড়ো হওয়া বিজয় দত্ত ইউ পি এস সি পরীক্ষায় দেশের মধ্যে অষ্টম স্থানাধিকারী। বাংলা মিডিয়ামে পড়েও কীভাবে এলো এই সাফল্য, সেই গল্প শোনালেন বিজয় দত্ত শুনলেন আমার কথার সম্পাদক মুনমুন দত্ত।
প্রশ্নঃ জিও ফিজিক্স নিয়ে পড়তে পড়তে পিএইচডি কেন, আর তারপর আবার কি করে ইউপিএসসির প্রস্তুতি?
উত্তরঃ ২০১৭ সালে আমি আইএসএম ধানবাদে(বর্তমানে আইআইটি) পড়তে পড়তে ইনস্টিটিউটের নিজস্ব পরীক্ষায় পাশ করলেও কোভিডের জন্য প্লেসমেন্ট না হওয়ায় মন খারাপ হয়ে যায়। থেমে না থেকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আইআইটি কানপুরে পিএইচডির জন্য ভর্তি হই। এরই মাঝে ২০২১ সালে গেট(GATE) পরীক্ষা দিই যাতে ৬৩ নং র্যাঙ্ক করে কোয়ালিফাই করি। ওএনজিসিতে আমি চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ওয়েটিং লিস্টে থেকে যাই। হতাশা এসেছিল। যাই হোক, তারপর আমি জিএসআই(জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া) এর ফরম ফিলাপ করি। এরা ইউপিএসসি কন্ডাক্ট করে। আমি এখানে অ্যাসিস্ট্যান্ট জিও ফিজিক্স পদের জন্য তৈরী হই। আমরা মিনিষ্ট্রি অফ মাইনসের অধীনস্থ জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট জিও ফিজিক্স পদে কাজ করবো। যেমন ধরুন কাশ্মীরে লিথিয়াম পাওয়া গেছে। আমাদের কাজ হচ্ছে তার সার্ভে করা।
প্রশ্নঃ আপনি তো পিএইচডি করছেন, পাশাপাশি ইউপিএসসির প্রস্তুতি, সামলালেন কিভাবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ এটা ঠিক ল্যাবের কাজ করে তারপর চাকরীর পরীক্ষার পরাশুনার জন্য সময় বের করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। তবে আমার সুবিধা হয়েছিল যে, এই ইউপিএসসির পড়াশুনা মাস্টার্সের পড়াশুনার মতোই। আমি বরাবর টিউশন করতাম। কোভিডের সময় যখন বাড়িতে হিলাম তখন আমি প্রচুর টিউশন করতাম, যেটা ইউপিএসসিতে কাজে লেগে যায়।
প্রশ্নঃ ইউপিএসসি পরীক্ষায় কি কোনো নেগেটিভ মার্কিং আছে?
উত্তরঃ দু’ঘন্টায় ১২০টা প্রশ্নের উওর দিতে হয়। তাতে আবার নেগেটিভ মার্কিং থাকে। প্রশ্নের উত্তর মনে পড়লে ভাল, নাহলে ফেলে রেখেই এগিয়ে যেতে হয়। থেমে ভাবার বা ফিরে আসার কোনো জায়গা থাকে না। তাই খুব মাথা ঠান্ডা রেখে পরীক্ষা দিতে হয়।
প্রশ্নঃ আর ইন্টারভিউ কি খুব শক্ত হয়? কারন আমরা ‘টুয়েলভ ফেল’ সিনেমাতে দেখেছিলাম।
উওরঃ প্রথমেই বলি ইন্টারভিউতে প্রাপ্ত নাম্বারের ভিত্তিতে ডাকা হয় না। সিরিয়াল নাম্বারের ভিত্তিতে একটি লিস্ট করা হয়। আমি ছিলাম সেই লিস্টের প্রথম ক্যান্ডিডেট। তাই কে কত নাম্বার পেয়েছে পরীক্ষায় সেটা বোঝা যায় না। আর দিন ১০-১২ পরে ডিটেলস রেজাল্ট বেরোবে। তখন জানতে পারবো কত নাম্বার পেয়েছি। এবার বলি ইন্টারভিউ কেমন ঘয়। ইন্টারভিউ প্যানেলে যারা থাকেন তাঁরা অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অফিসার। কিন্তু তাঁরা একদমই কড়া নন। ওনারা আমাদের অনেক কো-অপারেট করে। তাঁরা চান যাতে আমরা চাকরিটা পাই। তাই খুব হাল্কা মুডে ইন্টারভিউ হয়। তবে মাথা ঠান্ডা রেখে প্রশ্নের উত্তর দিলে ভালো।
প্রশ্নঃ আগামীদিনে যারা আপনার মতো ইউপিএসসি পরীক্ষা দেবেন তাদের উদ্দেশ্যে আপনি কি বার্তা দিতে চান?
উত্তরঃ আমি তাদের একটাই কথা বলবো। প্রসেসের উপর আর নিজের উপর পুরো আস্থা রাখো। পরীক্ষার হলে সবার আগে যেটা দরকার সেটা হল মাথা ঠান্ডা রেখে ধৈর্য ধরে পরীক্ষা দাও। শুধু মুখস্থ করে হবে না, বুঝে পড়াশুনা করতে হবে। আর একটা কথা বাবা মায়েদের জন্য বলতে চাই। ইউপিএসসির জন্য ইংলিশ মিডিয়ামে পড়তেই হবে এই ধারনা ভুল। আমি বাংলা মিডিয়ামের ছাত্র ছিলাম।