বহু বিতর্কের মধ্যে দিয়ে শুরু হতে চলেছে চলতি বর্ষের মাধ্যমিক পরীক্ষা
আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান, ১ ফেব্রুয়ারী:
রাত পেরোলেই শুরু চলতি বর্ষের মাধ্যমিক পরীক্ষা। পরীক্ষার্থী থেকে অভিভাবক সকলের মধ্যে একটা উত্তেজনা কাজ করছে। যদিও এটি নতুন কিছু নয়। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা তাই উত্তেজনা কাজ করেই। তবে এ বছর পরীক্ষার সময়সূচীর পরিবর্তনের কারনে সকলের মধ্যে একটি বাড়তি ভীতি কাজ করছে, সময় মতো যার যার নির্দিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছোনো নিয়ে। এদিকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সূত্রে খবর, চলতি বছরের মাধ্যমিকে বসতে চলেছেন প্রায় দশ লক্ষ পরীক্ষার্থী। আগের বছরের তুলনায় এবছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে বলেই খবর। ২০২৩ সালে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল সাত লক্ষের কাছাকাছি। চলতি বছর আরও তিন লক্ষ পরীক্ষার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানায় পর্ষদ। অন্য দিকে, গত বছরের তুলনায় এবছর পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা কমেছে। গত বছর প্রধান কেন্দ্র ও শাখা কেন্দ্র মিলিয়ে মোট পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ২,৮৬৭ টি। এবছর ২০০ টি কেন্দ্র কমে সর্বমোট পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা হয়েছে ২,৬৭৫ টি। সূত্রের খবর, এবছর ২৪০ টি প্রধান কেন্দ্র কমিয়ে ৪৮ টি শাখা কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। অতএব চলতি বছরের পরিসংখ্যান বলছে, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা কমেছে।
- পশ্চিম বর্ধমান জেলায় মাধ্যমিকের পরিসংখ্যান
- আসানসোল- মোট কেন্দ্র: ৫২টি
ছাত্র পরীক্ষার্থী: ৭২৮৫জন
ছাত্রী পরীক্ষার্থী: ৯৫৩৪ জন - দুর্গাপুর: মোট কেন্দ্র: ৩৩টি
ছাত্র পরীক্ষার্থী : ৫৩১৭ জন
ছাত্রী পরীক্ষার্থী :৬০২৭ জন
অপরদিকে, পরীক্ষার সময়সূচী পরিবর্তিত হয়েছে। পরীক্ষা শুরু হবে সকাল ৯.৪৫ মিনিটে। অর্থাৎ ১৫ মিনিট প্রশ্নপত্র পড়ার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এরপর ১০ টা থেকে ১টা পর্যন্ত্য চলবে পরীক্ষা। এদিকে এই নতুন সময়সূচী নিয়ে বেশ ক্ষোভ দেখা দেয় পরীক্ষার্থী মহলে। তাদের অভিযোগ অনেকেরই পরীক্ষা কেন্দ্র তাদের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে পরে। ফলে এই ঠান্ডার মতো নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছোনোটা রীতিমতো ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যান্যবারের সময়সূচীই যাতে বহাল থাকে তার জন্য উচ্চ আদালতে মামলাও করা হয়। কিন্তু কেন এই বদল? পর্ষদ এবং সংসদ কর্তাদের দাবি, পরীক্ষার্থীদের সুবিধার স্বার্থে। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, সকালে পরীক্ষা শুরু হলে যানজট তুলনামূলক ভাবে কম থাকে। তাই সময়মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনোয় অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে না। আবার, পরীক্ষা দুপুরেই শেষ হওয়ায় তারা তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে পরবর্তী পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিতে পারবে। পূর্বের সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা চললে শীতের বিকেলে পরীক্ষা-পরবর্তী কাজগুলি সম্পন্ন করতে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের অনেক দেরি হয়ে যেত। মফস্বল বা জঙ্গলমহলের পরীক্ষার্থীদের বাড়ি ফেরার ক্ষেত্রেও অসুবিধায় পড়তে হত। যুক্তিটি অবহেলার নয়। তবে, এই সকল ভাবনাচিন্তা করতে গিয়ে জানুয়ারির প্রথমার্ধ পেরিয়ে গেল কেন, সেই প্রশ্নটিও তোলা প্রয়োজন। তা ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা আদৌ সন্তোষজনক নয়, সেখানে শীতের সকালে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছবে কী করে? তাদের এক বৃহৎ অংশই যাতায়াতের জন্য গণপরিবহণের উপর নির্ভরশীল। ঠান্ডার দিনে সকালে যানজট কম থাকে পর্যাপ্ত বাস, অটো, রিকশা না থাকার কারণে। কুয়াশার কারণে লোকাল ট্রেনও প্রায়শই বিলম্বে চলে। এমতাবস্থায় সময়মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনো উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। অন্য দিকে, এ-হেন পরীক্ষায় শুধুমাত্র পরীক্ষার্থীরাই নন, বিপুল সংখ্যক শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরাও জড়িয়ে থাকেন। নতুন সময়সূচী অনুযায়ী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আগে ঢুকতে হবে স্কুলে। পর্ষদের নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, পরীক্ষা শুরুর ২ ঘণ্টা আগে স্কুলে ঢুকতে হবে শিক্ষক শিক্ষিকাদের। মধ্য শিক্ষা পর্ষদ নির্দেশিকা জারি করেছে, সকাল ৮ টার মধ্যেই স্কুলে ঢুকতে পড়তে হবে তাদের। পরীক্ষাকেন্দ্রে সকাল সাড়ে আটটার পর থেকে প্রবেশ করবেন ছাত্রছাত্রীরা। জেলায় জেলায় এই নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর বহু পূর্বে প্রয়োজনীয় কাজ সুসম্পন্ন করতে তাঁদের কেন্দ্রে পৌঁছে যেতে হয়। তাঁরাই বা শীতের ভোরে যাতায়াত করবেন কী উপায়ে?
বস্তুত, যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা বিষয়ে বড় কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সময় হাতে রাখা জরুরি। এ বিষয়ে হঠকারিতার কোনও জায়গা নেই, কারণ এই পরীক্ষাগুলির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জড়িয়ে থাকে। রাজ্যে সরকারি এবং সরকার-পোষিত বিদ্যালয়গুলির যতই হাঁড়ির হাল হোক, এখনও যে বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং মাদ্রাসার পরীক্ষায় বসে, সেই সংখ্যা বিচারে অবশ্যই বাড়তি সতর্ক থাকা উচিত। মাধ্যমিক পরীক্ষার দিন এবং সূচি ঘোষণা যেখানে যথেষ্ট সময় হাতে রেখেই করা হয়, সেখানে অন্য যে কোনও পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও সেই নিয়ম মানতে হত। সে ক্ষেত্রে সম্ভাব্য অসুবিধাগুলি জেনে নিয়ে সেইমতো ব্যবস্থা করলে শেষ মুহূর্তের বিভ্রান্তি এড়ানো সহজ হত। এক দিকের সুবিধার কথা ভাবতে গিয়ে অন্য অসুবিধার মধ্যে ঠেলে দেওয়া সঠিক কাণ্ডজ্ঞানের পরিচয় হতে পারে না।