মানবজাতিকে বাঁচাতে স্বেচ্ছায় শরীরে করোনা ভাইরাস ধারনের আর্জি পানাগড়ের মানস সিনহার
আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান, ৮জুনঃ
সারা বিশ্ব জুড়ে করোনা ভাইরাস অতিমারীর আকার ধারন করেছে তাতে প্রতিদিন বহু মানুষের মৃত্যু ঘটছে। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ তাদের মতো করে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ লড়াই করছে বেঁচে থাকার জন্য আবার কেউ লড়াই করছে এই ভাইরাসকে প্রতিহত করে অন্যদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য। এই পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন সরকার সাধারন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে, তেমনই আবার বহু সাধারন মানুষও নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী সরকারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। কেউ নিজেদের জমানো পুঁজি দিয়ে দিচ্ছেন সরকারের ত্রাণ তহবিলে তেমনই আবার অনেকে দুঃস্থদের চাল, ডাল দিয়ে অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা করছেন। কিন্তু এরই মধ্যে এক ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিতে দেখা গেল পশ্চিম বর্ধমান জেলার পানাগড়ের বাসিন্দা সিনহা পরিবারকে। বিশ্বের নানা দেশের বিজ্ঞানীরা নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন ভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা বের করতে যার দরুন ভাইরাসকে পরাজিত করে নতুন জীবন লাভ করতে পারে আর এর জন্য প্রয়োজন মানবদেহ, কারন মানবদেহের উপর পরীক্ষা করেই বোঝা যাবে করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা কতটা কার্যকরী। আর সেই মানবজাতির স্বার্থের কথা ভেবে সিনহা পরিবারের সদস্য মানস সিনহা তাঁর দেহ দান করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
পানাগড়ের এই সিনহা পরিবারের সকলেই মরণোত্তর দেহ ও চক্ষুদানে অঙ্গীকারবদ্ধ। বছর দুয়েক আগে মানসবাবুর মা পরলোকগমন করেন। অঙ্গীকার অনুযায়ী তার মায়ের চোখ ও দেহ দান করেছে ওই সিনহা পরিবার। তবে এতেই নিজেদের সামাজিক দায়বদ্ধতাকে আটকে রাখতে চান না মানস সিনহা। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের অভিশাপ থেকে বিশ্বকে মুক্ত করতে সারা বিশ্বের বৈজ্ঞানিককূল যেভাবে দিনরাত এক করে লেগে রয়েছে প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য, সেই যুদ্ধে সৈনিক হিসেবে অংশ নিতে চান মানসবাবুও। তাই তিনি দুর্গাপুর মহকুমা শাসকের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, প্রতিষেধক আবিষ্কারের চূড়ান্ত পর্যায়ে যা মানব দেহে প্রয়োগ করে দেখা হয় সেক্ষেত্রে তিনি নিজের দেহ দিতে ইচ্ছুক। অর্থাৎ তিনি নিজের শরীরে করোনা ভাইরাস ধারন করে তাঁর প্রতিষেধকের প্রয়োগ নিতে ইচ্ছুক।
মানসবাবুর এ হেন একটি সিদ্ধান্ত আজ বর্তমান পরিস্থিতিতে সত্যিই একটি মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দুর্গাপুর মহকুমা শাসক অনির্বাণ কোলে জানান যে, মানস সিনহা তাঁর কাছে যে ইচ্ছে প্রকাশ করেছে তা সত্যিই অভাবনীয়। তিনি পুরো বিষয়টি স্বাস্থ্যদপ্তরকে জানিয়েছেন। মানসবাবুর এই ইচ্ছেকে যাতে যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হয় তার জন্যও তিনি স্বাস্থ্যদপ্তরকে অনুরোধ করেছেন।