ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে ছোট ছেলেকে খুনের ছক, দুর্গাপুরে স্বরূপ হত্যার দায়ে গ্রেফতার মা ও দাদা
আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান(দুর্গাপুর), ১৮নভেম্বরঃ
দুর্গাপুরের পারুলিয়ার বাসিন্দা স্বরূপ সৌয়ের হত্যাকান্ডের যবনিকা পতন। মাত্র নয়দিনের মাথায় পুলিশ এই হত্যাকান্ডের পর্দা উন্মোচনে সাফল্য লাভ করল। কোনো রাজনৈতিক হত্যাকান্ড এটি নয়, সম্পূর্ণ পারিবারিক হিংসার বলি হতে হয়েছে স্বরূপকে বলে পুলিশের দাবি।
চলতি মাসের ৯ তারিখে লাউদোহার প্রতাপপুরে রাস্তার ধারে জঙ্গলের থেকে উদ্ধার হয়েছিল স্বরূপের মৃতদেহ। এরপরেই ওই ঘটনায় রাজনৈতিক রঙ লাগে। স্বরূপ একজন বিজেপ কর্মী ছিলেন আর তাঁকে তৃণমূলের গুন্ডা দিয়ে খুন করা হয়েছে বলে বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করে দুর্গাপুর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হয় বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি রাজু বন্দোপধ্যায়ের নেতৃত্বে। এদিকে তদন্ত শুরু করার পর থেকেই ঘটনায় উঠে আসতে থাকে নানা সুত্র যা পরিষ্কার ইঙ্গিত করতে থাকে যে এটি রাজনৈতিক খুন নয়।
আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি(পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা জানান, তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমে গ্রেফতার করে সুদয় মোহন্ত নামে পারুলিয়ার এক বাসিন্দাকে। তাকে জেরা করে পুরো বিষয় জানতে পারে পুলিশ মৃত স্বরূপের মা সুলোচনা সৌ, দাদা অরূপ সৌ ও সুদয়ের স্ত্রীকে গ্রেফতার করে। তবে স্বরূপের দাদা ও মায়ের কথাতে প্রথম থেকেই অসঙ্গতি ছিল। তাতে পুলিশের সন্দেহ বাড়ে। তিনি আরো জানান যে, পারিরবারিক সম্পত্তির জেরে এই খুন আর এই খুনের পেছনে হাত রয়েছে স্বরূপের মা সুলোচন সৌ ও তাঁর দাদা অরূপ সৌয়ের। স্বরূপকে খুনের ছক কষা হয়েছিল মাস দুয়েক আগে। স্বরূপকে খুনের জন্য যোগাযোগ করা হয় প্রতিবেশী সুদয় মোহন্তের সাথে। স্বরূপকে খুনের জন্য সুদয়ের সাথে দু লক্ষ টাকায় রফা হয়। সেপ্টেম্বর মাসের ২৭তারিখে ব্যাংকের থেকে চেকের মাধ্যমে ১লক্ষ টাকা তোলেন স্বরূপের মা। ঘটনার দুদিন আগে মৃতের মা সুলোচনা সৌ সুদয়কে দেওয়ার জন্য তার স্ত্রীর হাতে এক লক্ষ টাকা দিয়ে আসেন। আদালতে নিয়ে যাওয়ার পথে সুদয় বাবুর স্ত্রী বলেন কি জন্য এই টাকা তা তিনি সুলোচনা দেবী কে জিজ্ঞেস করেছিলেন ,কিন্তু সুলোচনা দেবী কোন উত্তর দেননি, শুধু বলেছিলেন টাকাটা তার স্বামী সুদয়কে দিয়ে দিতে। এদিকে সেই টাকা দিয়ে সুদয় কুখ্যাত দুষ্কৃতি ইব্রাহিমকে ভাড়া করেন সুদয়। এরপর ঘটনার দিন রাতে ইব্রাহিম ও তার দুজন সাগরেদ স্বরূপকে প্রথমে আকন্ঠ মদ খাওয়ায়। এরপর তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করে প্রতাপপুরে নিয়ে ফেলে আসে।
আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি(পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা জানান লাউদোহায় লাগানো একটি সিসিটিভি ক্যামেরাতে দেখা গেছে একটি বাইকে করে স্বরূপকে দুজন ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এই সুত্র বেশ কিছুটা সাহায্য করেছে এই খুনের তদন্তে। পাশাপাশি তিনি আরো জানান যে, সুলোচনা সৌ ও তাঁর বড় ছেলে অরূপ সৌ স্বীকার করেছেন টাকার বিনিময়ে তাঁরা সুপারী কিলারকে দিয়ে স্বরূপকে খুন করিয়েছে। খুনের কারন হিসেবে জানা যাচ্ছে যে স্বরূপদের পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝি তৈরী হয় যার দরুন অরূপেরর মনে ধারনা তৈরী হয়েছিল যে তাঁর ভাই স্বরূপ সমস্ত সম্পত্তি একা হাতিয়ে নেওয়ার মতলব করছে। আর এই ধারনার বশবর্তী হয়ে সে বারবার তাঁর মা সুলোচনাদেবীকে স্বরূপের বিরুদ্ধে প্ররোচনা দিতে শুরু করে। এরপরেই ছোট ছেলেকে খুন করার পরিকল্পনা করে মা ও বড় ছেলে মিলে। সুলোচনা সৌয়ের ব্যাংকের পাসবই ও চেকবই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে যার থেকে প্রমান মিলেছে এক লক্ষ টাকা তোলারও। তবে এই ঘটনায় এখনও ইব্রাহিম ধরা না পড়লেও পুলিশ খুব তাড়াতাড়ি তাকে গ্রেফতার করতে পারবে বলেও জানান ডিসিপি(পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা।
প্রসঙ্গতঃ সুদয় মহন্ত এলাকায় বিজেপ কর্মী বলে পরিচিত এবং দুর্গাপুর থানা ঘেরাওএর সময় সেখানে উপস্থিত থেকে বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভেও সামিল হয়েছিল।