“মানুষ মানুষের জন্য”- প্রমান করলেন পানাগড়ের ব্যবসায়ী নিক্কি সিং, সর্বস্ব নিয়ে দাঁড়িয়েছেন অসহায়দের পাশে
আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান, ১মেঃ
“মানুষ মানুষেরই জন্য”-এই প্রবাদটি যুগে যুগে সত্য বলে প্রমানিত হয় কিছু মানুষের কর্মকান্ডের দ্বারা। তা সে হোক না কেন মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের জন্যই। আজ বিশ্ব জুড়ে করোনা যে অতিমারীর আকার নিয়েছে এমতবস্থায় পৃথিবীর নানা প্রান্তে দেখা যাচ্ছে কত মানুষ যে অসহায় হয়ে পড়েছেন, আর সেই সমস্ত অসহায় মানুষের জন্য কিছু বেশ কিছু সাধারন মানুষও নিজেদের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এরকমই একজন মানুষ হলেন পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা ব্লকের পানাগড় বাজারের বাসিন্দা নিক্কি সিং। পেশায় ব্যবসাদার মানুষ। ব্যবসাটা তিনি ভালই বোঝেন আর তাই সফলতার সাথে নিজের ব্যবসার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর্থিক দিক থেকে সবল হলেও দুঃস্থ বা দরিদ্র মানুষদের অসহায় অবস্থা বরাবরই তাঁকে সমাজসেবামূলক কাজের জন্য অনুপ্রেরণা জোগায়। অনেক অল্প বয়স থেকে তিনি বিভিন্ন সেবামূলক কাজের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। যখন যেমন পেরেছেন তখনই সাধ্য মতো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এবারে করোনায় করাল গ্রাসে যখন বিদ্ধ আপামোর মানুষজন তখন তিনি মনুষ্যত্বের তাগিদে আরো বেশী করে দুঃস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর সংকল্প নিয়েছেন।
লকডাউনের কারনে সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে পড়েছেন বহু পরিযায়ী শ্রমিকরা। সেরকমই কয়েকজন শ্রমিক পায়ে হেঁটে কর্ণাটকে ফিরছিলেন। মহিলা, পুরুষ, শিশু সহ ওই দলটি যখন পানাগড় পৌঁছয় তখন তাদের কথা জানতে পারেন নিক্কি সং। এমতবস্থায় যখন কাঁকসা পুলিশ অতগুলো মানুষকে কোথায় রাখবে তা নিয়ে বেশ চিন্তায় পরে যায় তখন তিনি ছুটে যান আর কাঁকসা পুলিশ প্রসাসনের সাহায্যে ওই অসহায় মানুষগুলোর জন্য স্থানীয় একটি গুরুদ্বয়ারায় থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত করেন। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই তিনি ওই মানুষগুলোর খেয়াল রাখতে শুরু করেন। নিয়ম করে সেখানে গিয়ে তাদের খাওয়া দাওয়ার খেয়াল ব্যবস্থা করেন। অবশ্যই তাতে কাঁকসা প্রসাসনের সহযোগিতা নিয়েই। জানা গেছে, ওই পরিযায়ী দলটির মধ্যে অন্তঃসত্বা মহিলাও ছিলেন। দিন দুয়েক আগে হঠাতই তাঁর প্রসব যন্ত্রনা শুরু হয়, আর তা জানতে পেরে নিক্কি সিং অ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষায় না থেকে নিজের মেয়েকে জন্মদিনে উপহার স্বরূপ যে চারচাকা গাড়িটি দিয়েছিলেন সেটি নিয়ে সটান হাজির হন গুরুদ্বয়ারায়। ওই মহিলাকে মেয়ের গাড়িতে তুলে নিয়ে যান হাসপাতালে, যেখানে ওই মহিলা একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন।
একদিকে যখন মানুষ করোনার ভয়ে ভীত, অন্য রাজ্য বা ভিন জেলা থেকে নিজের বাড়িতে ফিরলে তাদের সাথে মেলামেশার ক্ষেত্রে প্রতিবেশীরা অচেনা মানুষের ন্যায় ব্যবহার করছেন, সেখানে নিজের প্রাণের মায়া ভুলে দিনের পর দিন অসহায় মানুষদের জন্য দিন রাত এক করে চলেছেন পানাগড়ের ওই ব্যবসায়ো নিক্কি সিং। হ্যাঁ অবশ্যই তাঁর এই কাজে তাঁকে পূর্ণ অমর্থণ দিয়ে যাচ্ছে তাঁর পরিবার। তিনি না থাকলে হয়ত অনেক বড় বিপদের মধ্যেও পড়তে হতো ওই পরিযায়ী অসহায় মানুষগুলোকে এমতটাই এক বাক্যে স্বীকার করে নিচ্ছেন বর্তমানে গুরুদ্বয়ারাতে আশ্রিত মানুষগুলি।