‘নিখোঁজ’ আলুওয়ালিয়াতে ‘নিরুৎসাহী’ বিজেপির ভরসা দিলীপেই
আমার কথা, মুনমুন দত্ত, দুর্গাপুর, ২৫ মার্চ:
ভারতীয় জনতা পার্টির পঞ্চম দফা প্রার্থী তালিকাতেও নাম নেই বাংলার দুই বারের সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়ার৷ নাম নেই বঙ্গ বিজেপির দ্বিতীয় দফার তালিকাতেও। প্রশ্ন উঠছে কেন?
২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে দার্জিলিং কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী করেছিল এস এস আলুওয়ালিয়াকে। জয়ীও হন তিনি। সেই বারে প্রথম তিনি বাংলায় সাংসদ হন। এরপর ২০১৯ এ বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রেও বিজেপির হয়ে ভোট ময়দানে নামেন আর তৃণমূল প্রার্থী ডা: মমতাজ সংঘমিতাকে সামান্য কিছু ভোটে হারিয়ে জয়লাভ করেন। এহেন একজন সাংসদ যিনি পর পর দুবার বাংলায় নিজের কেন্দ্রগুলিতে গেরুয়া পতাকা উড়িয়েছেন, তাকে কেন্দ্র দল এখনো কেন টিকিট দিলো না?
সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া দার্জিলিংয়ে সাংসদ থাকাকালীন সমালোচনার মধ্যে পড়েছিলেন। দলেরই নিচু তলার কর্মীরা বলতেন সাংসদকে এলাকায় দেখতে পাওয়া যায় না। কোনো উন্নয়নমূলক কাজ তাঁর হাত দিয়ে আসেনি ওই কেন্দ্রে। সেই বিতর্কে শিলমোহর পড়ে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে। এখানেও এই সাংসদকে ঘিরে একই বিতর্ক দানা বাধতে শুরু করে। তাঁর দলের কর্মীরাই বলতে শুরু করে কোনো কাজে সাংসদকে পাওয়া যায় না। করোনার মারনকালেও সাংসদকে এলাক্য দেখা যায়নি। এদিকে লোকসভা নির্বাচনের সময় যেই ঘনিয়ে আসতে শুরু করলো, অমনি এলাকায় আনাগোনা শুরু হল সাংসদের। নানা কর্মসূচী, প্রকল্পের উদ্বোধন ইত্যাদি ইত্যাদি করতে দেখা গেল। এমনকি দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার সম্প্রসারনের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে সাংসদ ঘোষণাও করেছিলেন যে উচ্ছেদ করতে বুলডোজার এলে তিনি আগে তার সামনে দাঁড়াবেন। অথচ ডিটিপিএসের ক্ষেত্রে দেখা গেল উলটো চিত্র। সাংসদকে পাশে বসিয়ে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করলো কোনো পুনর্বাসন দেওয়া হবে না। এই সব ঘটনার প্রেক্ষিতে দুর্গাপুরে তার কেন্দ্রেই সাংসদের বিরুদ্ধে নিখোঁজ পোস্টার পড়ল। তাহলে কি এত বিতর্কই এস এস আলুওয়ালিয়ার বিপক্ষে যাচ্ছে? আর এই বিতর্কিত সাংসদকে তাই কি বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে আর দাঁড় করানোর মতো দু:সাহস দেখালো না দল?
এদিকে প্রশ্ন উঠছে এই কেন্দ্রে দিলীপ ঘোষকে দাঁড় করানো নিয়েও। মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ এবারেও ওখানেই প্রার্থী হতে চেয়ে ছিলেন বলে সুত্রের খবর। কিন্তু সেখান থেকে তাকে সোজা তুলে আনা হল এই কেন্দ্রে। কিন্তু কেন? ডাকাবুকো এই বিজেপি নেতা বিজেপির নেতা হয়ে ওঠার আগে আর এস এস কর্মী ছিলেন। দীর্ঘ সময় তিনি শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুর সহ খনি এলাকায় দাপিয়ে কাজ করেছেন। ফলে এই এলাকাগুলির কোনা কোনা তাঁর চেনা। শুধু তাই নয় এই এলাকায় দিনপ ঘোষের অনেক অনুগামী রয়েছেন যারা বর্তমানে বিজেপির কর্মী সমর্থক কিন্তু তারাও দিলীপ ঘোষের সাথে আর এস এস এর হয়ে কাজ করতেন। যা বাড়তি অক্সিজেন যোগাবে দিলীপকে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে এই কেন্দ্রটি তাঁর কাছে চেনা মাঠ কিন্তু চেনা পিচ।
দিলীপ ঘোষ একজন ডাকসাইটে রাজনীতিবিদ। রাজ্যে বিজেপির অভুত্থান হয় দিলীপ ঘোষের হাত ধরেই। তিনি যখন রাজ্য সভাপতি ছিলেন তখন বঙ্গে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত হয়। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়ে যখন বিজেপিতে যোগ দিলেন, তখন থেকেই একটু একটূ করে কোনঠাসা হতে শুরু করেন দিলীপ। তখন দলের কাছে দিলীপের গুরুত্ব কমতে শুরু করলো আর শুভেন্দুর গুরুত্ব বাড়তে শুরু করলো বলে মত রাজনৈতিক মহলের। এরপরেই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুরে দাঁড়াতে চেয়েও পেলেন না দিলীপ। তবে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রটিতে যদি ফের এস এস আলুওয়ালিয়াকে দাঁড় করানো হতো তাহলে নিশ্চিতভাবেই ভরাডুবি হতো বলে মত ওয়াকিবহাল মহলেই। আর তাই এই কেন্দ্রে তৃণমূলকে মাত দিতে দিলীপেই একমাত্র ভরসা রাখছে দল? সেটা অবশ্য সময়ই বলবে।