অনুরোধে হল না কাজ, পুলিশ রণমূর্তি ধরতেই বেনাচিতি বাজারে পাতলা হয়ে গেল ভিড়

আমার কথা, পশ্চিম বর্ধমান, ১৮এপ্রিলঃ
করোনা সংক্রমণ এড়াতে লকডাউন করে রাজ্যবাসীকে ঘরে থাকার নিদান দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। সাথে এও বলা হয়েছে যে একান্তই প্রয়োজনীয় কাজে বাইরে বেরোলেও অবশ্যই যেন সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলাফের আকরা হয় আর এক জায়গায় যেন বেশি ভিড় না হয়। সরকারের এই নির্দেশিকা যাতে সাধারন মানুষ মেনে চলে তার জন্য পুলিশ প্রসাসনকে কড়া হাতে তা নিয়ন্ত্রণ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। সরকারের নির্দেশকে কার্যকরী করতে পুলিশ নানাভাবে সাধারন মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেই চলেছে। কখনও অনুনয় বিনয় করে আবার কখনও হাতজোড় করে, আবার কখনও গান গেয়ে বা কখনও পথেঘাটে রং তুলির মাধ্যমে। কিন্তু এরপরেও কিছু মানুষ এতটাই নির্বিকার যে তাদের আচরনে যেন এটা প্রকট হয়ে উঠছে যে লকডাউন ক্রোনা ভাইরাসের সংক্রমন এড়ানোর জন্য জন্য এই লকডাউন যেন ছুটির আমেজ নিয়ে এসেছে। তাই সকাল হতেই বাজারে হাটে থেকে থেকেই ক্রেতাদের ভিড় উপচে পড়ছে। এরকমই চেহারা এই লকডাউনের বাজারে বলতে গেলে প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেরকমই একটি বাজার হল দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজার। এই বাজারে সকাল হলেই ক্রেতা বিক্রেতার ভিড় দেখলে বোঝাই যাচ্ছিল না যে রাজ্যে লকডাউন চলছে। প্রায় প্রতিদিন পুলিশ এই ভিড় সরানোর জন্য ক্রেতা বিক্রেতাদের করজোড়ে অনুরোধ করে। কখনও তাঁরা সেই অনুরোধে সাড়া দেয় আবার কখনও দেয় না। কিন্তু সব কিছুর একটা সীমা থাকে। আজ যেন সেই সীমার মাত্রা ছাড়িয়ে গেল। ভিড়ে ঠাসা বাজার হাট দেখে ধৈর্যচ্যূতি ঘটল পুলিশের। নিমেষেই নরম পুলিশ হয়ে গেল গরম পুলিশ। আঙ্গুল উঁচিয়ে রক্তচক্ষু দেখানোর সাথে সাথেই ভিড় পাতলা।
পুলিশের পক্ষ থেকে বার বার বাজারে ভিড় না করার অনুরোধ জানানো হচ্ছিল। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে বাজার করার জন্য বার বার বলেও কাজ হচ্ছিল না কিছুতেই। বেনাচিতির ঘোষমার্কেটে বাজার করার জন্য ভিড় উপচে পড়ছিল প্রতিদিনই। শনিবারও সেই একই চিত্র দেখা যায়। সেই দৃশ্য দেখে রীতিমতো আঁতকে ওঠেন দুর্গাপুর থানার ওসি রাজশেখর মুখোপাধ্যায়। চিন্তা করলেন কাদের কাছে এত অনুরোধ জানাচ্ছিলেন লকডাউন নিয়ে? নিমেষেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। না আর নয়। আর নরমভাবে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। দ্বিতীয় দফার লকডাউন শুরু হতেই মুখ্যমন্ত্রীও পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন কড়া হাতে সব নিয়ন্ত্রণ করতে। সেই নির্দেশকেই কার্যকরী করতে রাজশেখরবাবু মুহূর্তের মধ্যে অনুনয়ের সুর বদলে রীতিমতো সুরে শাসন করলেন বাজারে আসা মানুষজনদের। লকডাউন ভেঙ্গে বাজারে আসা টোটোচালকদেরও ধমকে বাড়ি পাঠালেন। কথা না শুনলে গ্রেপ্তারেরও হুমকি দিতে শোনা যায় অফিসার ইন চার্জকে। ব্যস এতেই ম্যাজিকের মতো কাজ হয়ে গেল। পুলিশের এরকম রুদ্রমূর্তি দেখে সুড়সুড় করে ভিড় পাতলা করে সরে যেতে দেখা যায় মানুষজনদের।
রাজশেখরবাবু জানান যে এখনও পর্যন্ত্য লকডাউনের নিয়ম ভাঙ্গার জন্য প্রায় ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও হুঁশ ফেরেনি মানুষের। তাই এবার আর নরম হয়ে নয়, প্রয়োজনে গরম হয়ে কড়া হাতে এর মোকাবিলা করতে হবে।