আসানসোলে প্রার্থী হবেন না পবন, নেপথ্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নাকি হেরে যাওয়ার ভয়?
আমার কথা, আসানসোল, ৩ মার্চঃ
২ মার্চ অর্থাৎ গতকাল সদ্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি, আর ২৪ ঘন্টা পেরোয়নি তার আগেই আসানসোল কেন্দ্র থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ভোজপুরী অভিনেতা পবন সিং। এক্স হ্যান্ডেলে পবন সিং একটি পোস্ট করেন যেখানে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানান আর বলেন তিনি ব্যাক্তিগত কারনের জন্য আসানসোল কেন্দ্র থেকে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না। আর এই বিষয়টি সামনে আসতেই বেশ জল্পনা শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক মহলে।
এদিকে পবন সিংয়ের নাম ঘোষণার পর থেকেই তাকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়। সমাজ মাধ্যমে পবন সিংয়ের বিরুদ্ধে মন্তব্যের ঝড় ওঠে। নারীবিদ্বেষী হিসেবে বেশ দুর্নাম আছে পবন সিংয়ের। বাংলার মহিলাদের নিয়ে তিনি অনেক নোংরা কথাও বলেন বলে অভিযোগও রয়েছে। তাই তাঁর নাম প্রার্থী তালিকায় দেখে বেজায় চটেছেন অনেকেই। বাদ যাননি এই আসানসোল কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ তথা তৃণমূল বিধায়ক বাবুল সুপ্রিয়ো। তিনি সমালোচনা করে বলেন “পবন সিংকে শিল্পী হিসেবে কিছু বলার নেই, কিন্তু ওঁর এই গানের পোস্টারের দিকে চোখ রাখলেই সবটা বোঝা যাচ্ছে। বিজেপি একেবারে বাংলা এবং সেখানকার মহিলাদের নিয়ে যে ভাবে না তার জ্বলন্ত উদাহরণ।’ এহেন পবন সিংকে প্রত্যাখানের ডাক দেওয়া হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। হয়ত এই সমালোচনার পবন সিংয়ের কানেও পৌঁছেছে বলে মনে করছেন দলের কর্মীরা। আর তাই কি এই কারনেই পবন সিং ময়দানের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন? রাজনৈতিক মহলের একাংশের মন্তব্য যে, আসানসোলে তার সব থেকে বড় প্রতিদ্বন্দ্বি তার মতোই চলচিত্র জগতের মানুষ। সিনেমাপ্রেমী মানুষজন সহ আসানসোলে শত্রুঘ্ন সিনহার একটি স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আছে। সেখানে নারীবিদ্বেষী হিসেবে দুর্নামগ্রস্থ পবন সিং হয়ত বিহারীবাবুর সাথে এই লড়াইতে পেরে উঠবেন না বলেই হয়ত সরে দাঁড়াচ্ছেন। অন্যদিকে আবার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন যে পবন সিংয়ের সরে দাঁড়ানোর পেছনে গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে। আর এই ষড়যন্ত্র রয়েছে দলের অন্দরেই। ” আমার কথা”-র একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছিল যে, আসানসোলে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে। অগ্নিমিত্রা গোষ্ঠী ও জিতেন্দ্র গোষ্ঠীর মধ্যে যে বেশ একটা তু তু ম্যায় ম্যায় রয়েছে সেটা কান পাতলেই শিল্পাঞ্চলে শোনা যায়। তাই এদের দুজনের একজনকেও যদি ওই কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয় তাহলে অপর পক্ষ স্যাবোটাজ করার সম্ভাবনা থেকেই যায় যার দরুন ওই কেন্দ্রটি পুনরুদ্ধার করা হয়ত সম্ভব হবে না পদ্ম শিবিরের। তাই সম্পূর্ণ বাইরে থেকে একজনকে এনে এই কেন্দ্রে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দল। কিন্তু যে পরিকিল্পনা নিয়ে পবন সিংকে নিয়ে আসা হয়েছিল সেই সব পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিলো খোদ প্রার্থী। তবে পাশাপাশি দলের কর্মীরা এও কানাঘুষো করতে শুরু করেছেন যে, পবন সিংয়ের এই প্রত্যাহারের পেছনে কি কোনো অদৃশ্য শক্তি কাজ করেছে। আসানসোলের এই কেন্দ্রটির প্রথম থেকেই দুজন দাবিদার ছিলেন। অগ্নিমিত্রা পাল ও জিতেন্দ্র তিওয়ারি। কিন্তু আচমকাই একজন বহিরাগতকে এনে এখানে দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি স্থানীয় নেতৃত্ব। কোনো প্রভাবশালী স্থানীয় নেতৃত্বের প্রভাব হয়ত পবন সিং-কে এই নাম প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছে বলেও মনে করছে দলের নীচু তলার কর্মীরা৷
এ বিষয়ে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন দাশু বলেন, আসানসোলের এই আসন তৃণমূলের আসন আর সেই আসন তৃণমূল ধরে রাখে। পবন সিংয়ের মতো প্রার্থী উত্তরপ্রদেশ বিহারে চলবে। আসানসোলে চলবে না। সেটা তিনি বুঝতে পেরেই সরে দাঁড়াচ্ছেন।
যদিও পবন সিংয়ের এই নাম প্রত্যাহারের বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে নারাজ স্থানীয় নেতৃত্ব। বিজেপির জেলা সভাপতি বাপ্পাদিত্য চ্যাটার্জি বলেন, আমাদের একজনই প্রার্থী আর তিনি হলেন নরেন্দ্র মোদি। তাই প্রার্থী হিসেবে কে দাঁড়ালো আর কে সরে গেলো সেটা কোনো ব্যাপার নয়। আসানসোল কেন্দ্র থেকে আমরা দেড় লাখ ভোটে জয়ী হবো এটাই শেষ কথা।