জনগণকে চেনাতে চোরেদের কোমরে দড়ি বেঁধে পুলিশের রুটমার্চ, বিতর্ক
আমার কথা, পূর্ব বর্ধমান(জামালপুর), ২৩ ফেব্রুয়ারীঃ
ভোট আসলেই পুলিশকে দেখা যায় বিভিন্ন এলাকায় রুট মার্চ করতে। তা বলে পুলিশ চোরেদের সঙ্গে নিয়ে এলাকায় রুট মার্চ করবে এমনটা বোধহয় সকলের কাছেই কল্পনার অতীত। কিন্তু না,এটা কোন আজগুবি গল্পকথা নয়। বাস্তবেই মঙ্গলবার এমন ঘটনাই ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে।একের পর এক দোকানে চুরির ঘটনায় ধৃত চোরেদের কোমরে দড়ি পরিয়ে রুট মার্চের মতন করে দীর্ঘ সড়ক পথে ঘোরালো পুলিশ কর্মীরা। যার উদ্দেশ্য ছিল এলাকার সকল মানুষজনকে চোরেদের চিনিয়ে দিয়ে সচেতন করে রাখা। চোর চেনাতে জামালপুর থানার পুলিশের এমন কৌশল প্রথমে সবাইকে হতবাক করে ঠিকই।পরে অবশ্য চোরেদের ছবি তুলে রাখা নিয়ে পথচারীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় ।
জামালপুর থানার সন্নিকটে সড়ক পথের ধারে চা ,পান বিড়ি সিগারেটের দোকান যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে ছোট খাটো স্টেশনারি
দোকান। দিন দুই আগে রাতের অন্ধকারে চোরেদের দল ৩টি দোকানের অ্যাসবেসটসের চাল ভেঙে দোকানের ভিতরে ঢোকে । তার পর তারা দোকানে থাকা বিভিন্ন সামগ্রী চুরি করে নিয়ে পালায় । পরদিন সকালে দোকান খুলতেই চুরির ঘটনা নজরে আসে দোকান মালিকদের। তাঁরা চুরির সবিস্তার উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ জানান ।অভিযোগ পেয়েই পুলিশ চোরেদের সন্ধানে নামে। মঙ্গলবার বিকালের মধ্যেই পুলিশ দুই চোর সেখ সাবির ও লব বেরা কে জালে পোরে । ধৃতদের মধ্যে সাবিরের বাড়ি জামালপুর থানা থেকে ২ কিমি দূরে সেলিমাবাদ গ্রামে । অপর ধৃত লবের বাড়ি প্রায় একই দূরত্বে থাকা পুলমাথা এলাকায়। জেরায় ধৃতরা দোকানে চুরির কথা স্বীকার করে নেবার পরেই পুলিশ তাঁদের নিয়ে চুরি হওয়া সামগ্রী উদ্ধারে নামে। উদ্ধার হয় প্রচুর প্যাকেট সিগারেট, গুটকা ও গায়ে মাখার সাবান। এর পরেই থানার পুলিশ কর্মীরা ধৃত দুই চোরের কোমরে দড়ি পরিয়ে রুট মার্চের মতো করে জামালপুরের সড়পথে
ঘোরায়। পুলিশের লোকজনই পথে থাকা লোকজনকে ডেকে ডেকে বলেন,’দেখে রাখুন এই দুই যুবক হল চোর।রাতে এদের আপনার এলাকায় দেখলেই আপনারা সচেতন হবেন। প্রয়োজনে পুলিশকে জানাবেন’। পুলিশের লোকজনের মুখ থেকে এমন কথা শোনার পরেই চোরেদের ছবি মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় বন্দি করে রাখার হিড়িক পড়ে যায় ।এই বিষয়ে জামালপুর থানার এক পুলিশ
অফিসার বলেন, এলাকায় মানুষজন যাতে চোরেদের চিনে রাখতে পারে তাই তাঁদের এলাকায় ঘোরানো হয়েছে। বুধবার ধৃতদের
পেশ করা হবে বর্ধমান আদালতে ।
জামালপুর বাস স্ট্যান্ডের কাছে দাঁড়িয়ে দুই চোরের ছবি এদিন মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করেন রায়নার বাসিন্দা হারাধন বৈরাগ নামে এক ব্যক্তি।পঞ্চাশ উর্ধ্ব এই ব্যক্তি বলেন,
“এলাকার লোকজনকে চোরেদের চেনাতে পুলিশের চোরেদের নিয়ে রুট মার্চ জীবনে এই প্রথম দেখলাম। চোরদেরকেও দেখলাম।হারাধন বাবু বলেন,চোর চেনাতে পুলিশের এমন অভিনব কৌশল ক্যামেরা বন্দি না করে থাকতে পারলাম না। রায়নার বাসিন্দাদেরও এই চেরেদের সম্পর্কে জানাবো“।
সাথে অবশ্য এলাকাবাসীরা এই প্রশ্ন তুলছেন যে কোমরে দড়ি বেঁধে প্রকাশ্যে পুলিশ কি চোরেদের ঘোরাতে পারে? এটা কি আদৌ আইনসম্মত?